ঢাকা শুক্রবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৫

মুশফিকের কীর্তি, লিটনের সেঞ্চুরি ও জুটির রেকর্ড

মাঠে ময়দানে প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২৫, ০২:৩৮ এএম

মিরপুরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে মুশফিকুর রহিমের শততম টেস্টের দ্বিতীয় দিন অনেক রেকর্ড হয়েছে। মুশফিক নিজেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বাংলাদেশের হয়ে অনন্য এক রেকর্ড গড়েছেন। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে শততম টেস্টে ১১তম ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি পূর্ণ করার মাইলফলক স্পর্শ করেছেন মুশফিক। এ ছাড়া লিটন দাস ব্যক্তিগত রেকর্ড গড়েছেন। পাশাপাশি একই সঙ্গে হয়েছে জুটির রেকর্ডও। মুশফিক লিটনের সেঞ্চুরিতে ভর করে মিরপুর টেস্টের প্রথম ইনিংসে সব উইকেট হারিয়ে ৪৭৬ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ।

দিনের শুরুতেই এক রানের অপেক্ষা ঘুচিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মুশফিক। এটি ছিল মুশফিকের ক্যারিয়ারের ১৩তম টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ড। শততম টেস্টে মুশফিকের আগে সেঞ্চুরি করার বিরল কীর্তি আছে কেবল দশজনের। মুশফিক সেখানে এগারো নম্বর। এই সেঞ্চুরিতে আবার বাংলাদেশের হয়ে মুমিনুল হকের সর্বোচ্চ (১৩) সেঞ্চুরির রেকর্ডে ভাগও বসিয়েছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ১০৬ রানে হামফ্রিজের বলে আউট হয়েছেন মুশফিক। তার ফেরার পর সেঞ্চুরি করেন লিটনও। তার পঞ্চম টেস্ট সেঞ্চুরি থামে ১২৮ রানে। এ ছাড়া মুমিনুল হক ৬৩ এবং মেহেদী হাসান মিরাজ করেন ৪৭ রান। জুটিতেও নতুন ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ। মাত্র তৃতীয় দেশ হিসেবে টেস্টের একই ইনিংসে চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ উইকেটে শত রানের জুটি গড়েছে টাইগাররা। এর আগে ভারত (১৯৭৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে) এবং পাকিস্তান (২০২৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে) এই কীর্তি গড়েছিল। আইরিশদের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে মুশফিক-মুমিনুলের চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১০৭, মুশফিক-লিটনের পঞ্চম উইকেটে ১০৮ এবং লিটন-মিরাজের ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ১২৩ রান পায় বাংলাদেশ। মুশফিক-লিটন বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে সর্বোচ্চ সপ্তমবার একশর বেশি রানের জুটি গড়লেন। যার ভিতটা তারা গড়েন প্রথম দিনে। গতকাল দলীয় রানের খাতায় নতুন করে ১৮ রান যোগ করতেই মুশফিককে স্লিপে ক্যাচ বানিয়ে ফেরান ম্যাথু হামপ্রিস। ২১৪ বলে ১০৬ রানের ইনিংসটি সাজিয়েছেন তিনি ৫টি চারের সাহায্যে। মুশফিক বাংলাদেশের হয়ে (মুমিনুলের সঙ্গে) যৌথভাবে সর্বোচ্চ ১৩টি সেঞ্চুরি করেছেন। এরপর জুটি গড়েন লিটন-মিরাজ। গত বছরের আগস্টের পর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন লিটন। গ্যাভিন হোয়ের বলে ক্যাচ তুলে মিরাজের (৪৭) বিদায়ে ভাঙে সেই জুটি। এরপর লিটনও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় ছিলেন তিনি, হাম্প্রিসের বলে সুইপ খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন স্লিপে। ১৯২ বলে ৮ চার ও ৪ ছক্কায় থামলেন ১২৮ রানে। লিটন যখন উইকেটে আসেন, তখন সব উপলক্ষ ঘিরে ছিলেন মুশফিক। আগের দিন শেষ বিকেলে যখন সিঙ্গেলস নিয়ে সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে থাকা মুশফিককে স্ট্রাইক দেন, গ্যালারি থেকে ভেসে এসেছে স্লোগান। লিটন নিজের দায়িত্বটা পালন করেছেন ঠিকঠাক। গতকালও যখনই সুযোগ পেয়েছেন, মুশফিককে দিয়েছেন পাদপ্রদীপের আলো। শততম টেস্টে তার শতকের সময়টাতে সঙ্গী ছিলেন লিটন। মুশফিকের বিদায়ের পর নিজের দিকে আলোটা কেড়ে নেন লিটন। গত বছর রাওয়ালপিন্ডিতে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের ম্যাচে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন লিটন। পরের সেঞ্চুরিটির জন্য তার অপেক্ষা লম্বা হলো বছরখানেক। সেই অপেক্ষা শেষ হলো মুশফিকের জন্য সাজিয়ে রাখা মঞ্চে।

শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করেছেন যারা

১. কলিন কাউড্রে (ইংল্যান্ড), ১১ জুলাই ১৯৬৮, বার্মিংহামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, ১০৪ রান

২. জাভেদ মিয়াঁদাদ (পাকিস্তান), ১ ডিসেম্বর ১৯৮৯, লাহোরে ভারতের বিপক্ষে, ১৪৫ রান

৩. গর্ডন গ্রিনিজ (ওয়েস্ট ইন্ডিজ), ১২ এপ্রিল ১৯৯০, সেন্ট জনসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, ১৪৯ রান

৪. অ্যালেক স্টুয়ার্ট (ইংল্যান্ড), ৩ আগস্ট ২০০০, ম্যানচেস্টারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, ১০৫ রান

৫. ইনজামাম-উল-হক (পাকিস্তান), ২৪ মার্চ ২০০৫, বেঙ্গালুরুতে ভারতের বিপক্ষে, ১৮৪ রান

৬. রিকি পন্টিং (অস্ট্রেলিয়া), ২ জানুয়ারি ২০০৬, সিডনিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে, ১২০ ও অপরাজিত ১৪৩ রান

৭.  গ্রায়েম স্মিথ (দক্ষিণ আফ্রিকা), ১৯ জুলাই ২০১২, লন্ডনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, ১৩১ রান

৮. হাশিম আমলা (দক্ষিণ আফ্রিকা), ১২ জানুয়ারি ২০১৭, জোহানেসবার্গে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, ১৩৪ রান

৯. জো রুট (ইংল্যান্ড), ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, চেন্নাইয়ে ভারতের বিপক্ষে, ২১৮ রান

১০. ডেভিড ওয়ার্নার (অস্ট্রেলিয়া), ২৬ ডিসেম্বর ২০২২, মেলবোর্নে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে, ২০০ রান

১১. মুশফিকুর রহিম (বাংলাদেশ), ২০ নভেম্বর ২০২৫, মিরপুরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে, ১০৬ রান।