মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার দোসরপাড়া গ্রামে অবস্থিত পদ্মহেম ধাম ফকির লালন শাহের একটি আশ্রম। বাউল বাড়ি হিসেবে পরিচিত নৈসর্গিক এই স্থানে লালনের পদার্পণ না ঘটলেও ফটো সাংবাদিক কবির হোসেন লালনের প্রতি ভক্তি প্রদর্শনপূর্বক এই আশ্রমটি গড়ে তুলেছেন।
ছায়া সুনিবিড় ¯িœগ্ধ প্রাকৃতিক পরিবেশ ও পাখ-পাখালির কলকাকলিতে পরিপূর্ণ পদ্মহেম ধামে প্রবেশ করতেই নজরে পড়বে লালনের অন্যতম নিদর্শন পাথরের তৈরি বিশাল একটি একতারা। মায়াময় প্রকৃতির মাঝে আরও নজরে পড়বে মুন্সীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী কাঠের দোতলা ঘর, বৈঠকখানা ও লালনগীতি বিদ্যালয়। আশ্রমের পাশ দিয়ে তিন দিকে বাঁক নিয়ে চমৎকার মোহনার সৃষ্টি হওয়া ইছামতি নদী বহমান। আর তাই আশ্রম থেকে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার দৃশ্য অনেক বেশি উপভোগ্য। ইছামতি নদী দিয়ে অধিকাংশ সময় নৌকায় সংসার গড়ে তোলা বেদেদের দল যেতে দেখা যায়। পদ্মহেম ধামে ক্যাম্পিং করে রাতযাপন করা যায়।
আশ্রমের সামনের বিশাল খোলা মাঠে প্রাচীন বটগাছের নিচে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে শীতের সময় দুই পূর্ণিমা তিথিতে এই আশ্রমে লালন ফকিরের উৎসব, মেলা ও সাধুসঙ্গের আয়োজন করা হয়ে থাকে। সন্ধ্যা থেকে সারারাত গান, চা ও পিঠার সঙ্গে মুখর থাকে আশ্রম প্রাঙ্গণ। সে সময় জাপান, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে সাধু গুরুসহ অনেক বাউল শিল্পী, গণ্যমান্য ব্যক্তি, দর্শনার্থী ও লালনভক্তদের আগমন ঘটে।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে মুন্সীগঞ্জ জেলার দূরত্ব মাত্র ২৩ কিলোমিটার। ঢাকার গুলিস্তান, আবদুল্লাপুর ও মিরপুর থেকে মাওয়াগামী বাসে চড়ে মুন্সীগঞ্জে যেতে পারবেন। মুন্সীগঞ্জ জেলা সদর থেকে বাইক/সিএনজি নিয়ে সিরাজদিখান উপজেলা থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পদ্মহেম ধাম আশ্রম পৌঁছাতে পারবেন।
সবচেয়ে সুবিধাজনক উপায় হচ্ছে, ঢাকার পোস্তগোলা থেকে ৩০ টাকা সিএনজি ভাড়ায় মোল্লার বাজার চলে আসুন। মোল্লার বাজার এসে নদী পার হতে হবে বালুচর যাওয়ার জন্য। নদীর অন্য পাড়ে যেতে জনপ্রতি ৫ টাকা ভাড়া নেবে। নদী পার হয়ে সিএনজিতে নিয়ে সরাসরি পদ্মহেম ধামে যাওয়া যায়। সম্পূর্ণ সিএনজি ভাড়া লাগবে প্রায় ২০০ টাকা। আর সিএনজি ঠিক করতে দরদাম করে নিন।
এছাড়া গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজারের পাশ থেকে বেতকা, টঙ্গিবাড়ী বা সোনারংগামী বাসে সরাসরি সিরাজদিখান বাজারের গোয়ালবাড়ি নামক স্থানে নেমে অটো/সিএনজিতে চড়ে লালনের আশ্রম পদ্মহেম ধামে যেতে পারবেন।
আবার যানজট এড়িয়ে নদীপথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে মুন্সীগঞ্জ যাওয়া যায়। ঢাকা সদরঘাট থেকে লঞ্চে মুন্সীগঞ্জ যেতে ২ ঘণ্টার মতো সময় লাগবে।
কোথায় থাকবেন:
ঢাকা জেলার কাছাকাছি অবস্থানের কারণে ঢাকা থেকে সকালে রওনা দিয়ে সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরে আসতে পারবেন। চাইলে স্থানীয়দের সাহায্য নিয়ে আশ্রমের বিশাল সবুজ মাঠে ক্যাম্পিং করে থাকতে পারবেন। এ ছাড়াও রাত্রিযাপনের প্রয়োজনে মুন্সীগঞ্জ জেলা সদরে অবস্থিত হোটেল থ্রি স্টার ও হোটেল কমফোর্টসহ আরও কিছু সাধারণ মানের আবাসিক হোটেল পাবেন।
কোথায় খাবেন:
পদ্মহেম ধাম আশ্রমের ভেতরে খাওয়া-দাওয়ার জন্য হোটেল রয়েছে। এছাড়া শহরে অবস্থিত রিভার ভিউ ও মুন্সির ঘরোয়া হোটেলের খাবার বেশ ভালোমানের। মুন্সীগঞ্জের জনপ্রিয় খাবারের মধ্যে চিত্তর দই, আনন্দর মিষ্টি, খুদের বৌউয়া, ভাগ্যকুলের মিষ্টি অন্যতম।
মুন্সীগঞ্জের দর্শনীয় স্থান:
মুন্সীগঞ্জের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে জগদীশ চন্দ্র স্মৃতি জাদুঘর, ভাগ্যকুল জমিদার বাড়ি ও মাওয়া ফেরিঘাট উল্লেখযোগ্য। ঢাকার কাছাকাছি এখানে ক্যাম্পিং করার জন্য খুব সুন্দর লোকেশন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন