শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সালমান ফরিদ, সিলেট

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৫, ০২:৫৯ এএম

সিলেটে ভোটের আয়না

প্রবাসীমুখে বিএনপি কাহিল, জামায়াতে শূন্য!

সালমান ফরিদ, সিলেট

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৫, ০২:৫৯ এএম

সিলেট

সিলেট

  • সব আসনে একাধিক প্রবাসীমুখ
  • এনসিপি, খেলাফত মজলিসের প্রার্থী তালিকায়ও রয়েছেন প্রবাসী

সিলেটের সব প্রবাসী নেতা ‘সংসদ সদস্য’ হতে চান। বেশিসংখ্যক প্রবাসী প্রবাসে রাজনীতি করছেন এই স্বপ্ন নিয়েই। শীর্ষ নেতাদের প্রত্যেকেই কোনো না কোনো আসনে প্রার্থিতার খায়েশ নিয়ে রাজনীতিতে সরব। আওয়ামী আমলে সিলেটের ১৯ আসনের মধ্যে একাধিক প্রবাসীমুখ ছিলেন। এমনকি মন্ত্রীও হয়েছিলেন কেউ কেউ! সেই সময়গুলোতে বিএনপি বা অন্য অনেক দলেও দেখা গেছে প্রবাসীমুখ। নির্বাচিতও হয়েছেন।

২৪-এর পট পরিবর্তনের পর এবার আওয়ামী লীগহীন নির্বাচন হবে। শক্তিশালী দল বিএনপি। এই সুযোগে তাদের প্রবাস শাখার অনেক নেতা এমপি হতে চান। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন এই প্রবণতা অনেক বেশি। বিশেষ করে দলের মূল কা-ারি তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে নির্বাসিত জীবনযাপনের কারণে সেখানকার শীর্ষ নেতারা তার চারপাশে সরব ছিলেন সব সময়। সুখে-দুঃখে ছায়ার মতো পাশে থাকায় লন্ডন বিএনপির শীর্ষ নেতাদের যেন অনেকটা ‘হক’ হয়ে গেছে সংসদ নির্বাচনে টিকিট পাওয়া। সেই দাবিতে তারা লন্ডন থেকে উড়াল দিয়ে ফিরছেন দেশে। যাচ্ছেন ভোটের মাঠে। সিলেট জেলার ৬ আসনের ১টি ছাড়া বাকি ৫ আসনে টিকিট দাবিদার একাধিক প্রবাসী।

তবে শুধু বিএনপি নয়, একমাত্র জামায়াত ছাড়া নির্বাচনে অংশ নিতে চায় এমন প্রত্যেক দলেরই একাধিক প্রবাসী নেতা রয়েছেন, যারা আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে খেলতে চান। সহায়-সম্বল নিয়ে তাদের অনেকেই এখন দেশের মাটিতে পা রেখেছেন। 

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সিলেটে এমন একটি আসনও অবশিষ্ট নেই, যেখানে কোনো প্রবাসী প্রার্থী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে চান না। ভোটের মাঠে বিএনপিতে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় প্রবাসীমুখের জয়জয়কার হলেও জামায়াতের বেলায় শূন্য। তাদের মনোনয়নপ্রত্যাশী কোনো প্রার্থী প্রবাসী নন। তবে খেলাফত মজলিস ঘোষিত সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছেন একজন প্রবাসী। জমিয়তেরও রয়েছে একজন। এনসিপিরও আছেন একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থী। তারা ভোটকে সামনে রেখে দেশে এসে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন। করছেন সভা-সমাবেশ। নিচ্ছেন সংবর্ধনা। হাতে তুলে দিচ্ছেন পুরস্কার-উপহার। ঘুরছেন গ্রাম থেকে গ্রামে। হাট থেকে বাজারে। শহরে-বন্দরে। পাড়া ও মহল্লায়। পথসভা ও সমাবেশ করছেন তারা।

একেক দিন একেক মসজিদে আদায় করছেন জুমার নামাজ।  গণসংযোগ, ফুটবল-ক্রিকেট টুর্নামেন্টে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে অতিথি হচ্ছেন। মিলিত হচ্ছেন উঠোন বৈঠকে। কেউ অসুস্থ হলে তাকে দেখতেও যাচ্ছেন খবর পেলে। সাথে আছে ঘরোয়া ও সামাজিক অনুষ্ঠান, বিয়েশাদিতে উপস্থিত হয়ে গণসংযোগ চালিয়ে যাওয়া। অনেকে দরিদ্র পরিবারের সদস্যদের বিয়ে কিংবা চিকিৎসার খরচ বহন করছেন নিজ উদ্যোগে। বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা দলের ৩১ দফার লিফলেট বিলির সঙ্গে নিজেদের নির্বাচনি প্রচারকাজ সেরে নিচ্ছেন।

স্থানীয় নেতারা স্বীকার করেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে বিএনপিতে প্রবাসীমুখের দাপটে অনেকটা কোণঠাসা স্থানীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। দীর্ঘদিন তৃণমূলের রাজনীতি থেকে উঠে এসে হামলা, মামলা-মোকদ্দমা মোকাবিলা করে এবং দলকে শ্রম দেওয়ার পরও প্রার্থিতার দৌড়ে তারা প্রবাসীদের দাপটে টিকতে পারছেন না। অনেকে হতাশায় ভেঙে পড়ে নির্বাচনের আশা ছেড়ে মাঠ থেকে সরে যাচ্ছেন। অতীতের অভিজ্ঞতায় তাদের ধারণা জন্মেছে, এবারও অর্জনের ঝুড়ি হয়তো শূন্য থাকবে। তাদের দাপিয়ে বেড়ানোয় তারা আশাহত।

স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্র জানায়, গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই প্রবাসী রাজনীতিকরা দেশমুখী হয়েছেন। তারা কেউ কেউ প্রচার করছেন, প্রবাসে তারা দলের জন্য কাজের পাশাপাশি দেশে ফ্যাসিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে ভূমিকা রেখেছেন। কেউ কেউ আগ বাড়িয়ে বলছেন, গত ১৬ বছর সরকারের রোষানলে পড়ে দেশে ফিরতে পারেননি। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় তারা দেশে এসে মাঠে নেমেছেন। প্রার্থী হতে চান। সিলেট অঞ্চলে অন্তত অর্ধশত প্রবাসী নেতা প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তাদের কেউ কেউ আগ্রহের কথা জানাচ্ছেন। সেই তালিকায় সিলেট জেলার ৬টি সংসদীয় আসনে রয়েছেন অন্তত ২০ প্রবাসী নেতা। আছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ৪ উপদেষ্টা। কেউ কেউ আবার দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করছেন দেশে, কেউ কেউ রয়েছেন আসা-যাওয়ার মধ্যে।

সিলেট-১ 

সারা দেশে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আসন হচ্ছে সিলেট-১। আসনটি সিলেট সদর উপজেলা এবং সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকা নিয়ে গঠিত। মর্যাদাপূর্ণ হওয়ায় এ আসনের দিকে চোখ থাকে সবার। প্রার্থী বাছাইয়েও থাকে সবার সতর্ক নজর। মিথ আছে, ‘সিলেট-১ আসন যার, সরকার তার।’ কারণ, স্বাধীনতার পর বেশির ভাগ জাতীয় নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে বিজয়ী প্রার্থীর দলই সরকার গঠন করেছে। সিলেট-১ আসনে বিএনপিতে কোনো প্রবাসী মনোনয়নপ্রত্যাশী নেই। এবার এই আসনে দল থেকে মনোনয়ন চাইছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের দুই উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির এবং আরিফুল হক চৌধুরী। তবে এখানে এ পর্যন্ত এগিয়ে আছেন খন্দকার মুক্তাদির। শেষ পর্যন্ত আরিফুল হক চৌধুরীকে সিটি করপোরেশনের মেয়র পদের জন্য মনোনীত করা হতে পারে। এ আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রার্থী হতে পারেন দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক ও সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত এহতেশামুল হক। তিনি প্রবাসী এবং লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাবেক কাউন্সিলরও।

সিলেট-২

আসনটি বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত। জাতীয় রাজনীতির আলোচিত নেতা, বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, গুম হওয়া এম ইলিয়াস আলীর এলাকা। তিনি এ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। তার স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনার অবস্থান এখানে শক্ত। ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর থেকে তিনিই বিএনপির ভরসার জায়গা দখল করে রেখেছেন। তবে এত দিন তাই থাকলেও এবার তার অবস্থা নড়বড়ে করে দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা যুক্তরাজ্যপ্রবাসী হুমায়ুন কবির। তিনি এই আসনের শক্ত দাবি নিয়ে প্রার্থিতার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। সিলেট-২ আসনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় সদস্য ও যুক্তরাজ্য শাখার সহসভাপতি হাফেজ হোসাইন আহমদ। 

এ আসনে বিএনপির সমর্থনে গণফোরামের মোকাব্বির খান ছিলেন একাদশ জাতীয় সংসদের এমপি। তিনি যুক্তরাজ্যপ্রবাসী। ‘বিশেষ কোটা’য় এমপি হওয়ার আগে তাকে কেউ চিনত না। এমনকি ভোটের কয়দিন আগেও তিনি ছিলেন অচেনা। সেই প্রবাসী মোকাব্বির খানও এবার নির্বাচন করতে পারেন।

সিলেট-৩

সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা-বালাগঞ্জ-ফেঞ্চুগঞ্জ) আসনের ৯ মনোনয়নপ্রার্থীর ৩ জনই প্রবাসী। তালিকায় আছেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিক, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা প্রবাসী নেতা ব্যারিস্টার এম এ সালাম। এখানে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী; কিন্তু এখানে বিএনপির দুই প্রবাসী ভিআইপি নেতার তৎপরতায় তার আশা ক্ষীণ হয়ে পড়েছে। নেতাকর্মীদের ধারণা, বিএনপির মোট ৫ জন মনোনয়ন দৌড়ে থাকলেও প্রবাসী নেতা এম এ মালিকই শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পেয়ে যেতে পারেন। 

এ ছাড়া সিলেট-৩ আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টির হয়ে গত বছরের আগস্ট থেকে মাঠে প্রবাসী নেতা ব্যারিস্টার নুরুল হুদা জুনেদ। শহর ও এলাকাজুড়ে তার লিফলেটে ভরা। সিএনজি অটোরিকশার পেছন তিনি দখল করে রেখেছেন লিফলেট সেঁটে দিয়ে। 

সিলেট-৪

সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট-জৈন্তাপুর-কোম্পানীগঞ্জ) আসনে ৮ মনোনয়নপ্রার্থীর ৬ জনই বিএনপির। এর মধ্যে আবার দুইজন প্রবাসী; একজন- সিলেট জেলা বিএনপির উপদেষ্টা, যুক্তরাজ্যপ্রবাসী নেতা হেলাল উদ্দিন আহমদ। দ্বিতীয়জন- লন্ডন বিএনপির নেতা আব্দুল হক। দলীয় মনোনয়ন পেতে এই দুই প্রবাসীনেতাকে লড়তে হবে মূলত বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম ও গোয়াইনঘাটের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরীর সাথে। বদরুজ্জামান সেলিমও মূলত প্রবাসী। তিনি যুক্তরাজ্যের নাগরিক। তবে দেশেই থাকেন বেশি।

সিলেট-৫

সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলা নিয়ে গঠিত। ধর্মীয় অনুশাসন কঠোরভাবে মেনে চলা একটি অঞ্চল। তবে এ আসনেই সবচেয়ে বেশি প্রার্থী হওয়ার মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন। এর মধ্যে বিএনপি থেকে বেশিসংখ্যক। তাদের ৪ জন প্রবাসী। তারা হলেনÑ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব মরহুম হারিস চৌধুরীর মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা তানজিম চৌধুরী, যুক্তরাজ্য বিএনপির উপদেষ্টা ড. অধ্যাপক জাকি মোস্তফা টুটুল, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ফরিদ উদ্দিন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত বিএনপির আহ্বায়ক জাকির হোসেন। এই আসনে স্থানীয়দের মধ্যে আছেন কানাইঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান ও হারিছ চৌধুরীর চাচাতো ভাই আশিক উদ্দিন চৌধুরী এবং জেলা বিএনপির ১ম সহ-সভাপতি মামুনুর রশীদ মামুন। বিএনপি দলের কাউকে মনোনয়ন দিলে এদের মধ্য থেকেই দেবে।

সিলেট-৬

সিলেট-৬ বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ নিয়ে গঠিত। এ আসনেও অন্তত ৫ প্রবাসী মনোনয়ন পেতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তাদের মধ্যে আছেন বিএনপির অন্যতম হেভিওয়েট এক প্রার্থীও। তিনিসহ অন্তত তিন প্রবাসী মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির। তাদের মধ্যে আছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, প্রবাসী নেতা ড. মো. এনামুল হক চৌধুরী, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সভাপতি ও জিয়া পরিবারের ঘনিষ্ঠ মরহুম কমর উদ্দিনের মেয়ে যুক্তরাজ্যের কাউন্সিলর সাবিনা আক্তার পপি, যুক্তরাজ্যের টাওয়ার হ্যামলেটসের সাবেক কাউন্সিলর আ ম অহিদ আহমদ।

এখানে গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী জাহিদুর রহমান এবং খেলাফত মজলিস নেতা মাওলানা সাদিকুর রহমানও প্রবাসী। এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে ফয়সল আহমদ চৌধুরী ২০১৮ সালে বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচন করেছিলেন। তার সাথে মনোনয়ন দাবিদার হিসেবে রয়েছেন এমরান আহমেদ চৌধুরী। তিনি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!