ঢাকা শনিবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৫

মন হারাবে পাখির রাজ্যে

ছুটি প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২৫, ০৬:৫০ এএম

ভ্রমণপিপাসু মানুষের জীবনে কিছু জায়গা থাকে, যেগুলো বারবার ফিরে ডাকে। প্রকৃতির নিস্তব্ধতা আর সবুজের আবেশে মোড়া সেসব স্থানে গেলে মনে হয়, যেন পৃথিবীর কোলাহল থেমে গেছে। ভ্রমণপ্রেমীদের কাছেই এমনই এক জায়গা শ্রীমঙ্গল। এই অপার্থিব সৌন্দর্যের রাজ্য চা-বাগান, লাউয়াছড়া বন আর মাধবপুর লেকের পাশাপাশি আছে এমন এক স্বর্গভূমি, যেখানে গেলেই মন হারিয়ে যাবে পাখির ডাকে। স্বর্গভূমিটির নাম বাইক্কা লেক। পাখির রাজ্য নামে পরিচিত এই বিল শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরের পথ, পৌঁছাতে সময় লাগে ৪০ মিনিট। কিন্তু এই পথটাই ভ্রমণের অর্ধেক রোমাঞ্চ। দিনের আলো যখন পুরোপুরি উঁকি দেয় না; কুয়াশা তার নরম চাদরে ঢেকে রাখে চারপাশ ঠিক তখন এই লেকে গেলে মনে হবে যেন প্রকৃতি নিজের হাতে আমাদের স্বাগত জানাচ্ছে। যাওয়ার পথে প্রধান সড়ক ছেড়ে যখন ছোট্ট একটি গ্রামীণ পথে ঢুকে পড়বেন, তখনই মিলবে আসল সৌন্দর্যের দেখা। রাস্তার দুইপাশে সারি সারি গাছ, কুয়াশায় তাদের অবয়ব অস্পষ্ট, মাঝে মাঝে ১০-১২ গজ দূর পর্যন্তও দেখারও উপায় নেই। এখানে প্রকৃতি প্রতিটি মুহূর্তে নতুন করে সাজিয়ে রাখে দৃশ্যপট। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওড়ের পূর্ব দিকে প্রায় ১০০ হেক্টর জায়গা নিয়ে এই জলাভূমির অবস্থান।

২০০৩ সালে এটিকে মৎস্য অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আইড়, কই, মেনি, পাবদাসহ বহু জাতের মাছ এখানে নিরাপদে বংশবৃদ্ধি করলেও বাইক্কা বিল বিখ্যাত শুধু মাছের জন্য নয়, এটা মূলত পাখিদের পৃথিবী। এই বিলের কিনারজুড়ে ফোটে শাপলা, পদ্ম আর নানা জলজ ফুলের হাজারো রং। পানির ওপরে সকাল-সন্ধ্যায় রঙিন ফড়িংয়ের যেন উৎসব চলে। মাঝে মাঝে দেখা মেলে বিচিত্র পোকার, প্রজাপতির, কিংবা পানির ওপর ভাসমান পাতায় বসে থাকা ক্ষুদ্র কোনো জলচর প্রাণীর। কিন্তু প্রকৃতিপ্রেমীরা প্রায় সবাই একমত, বাইক্কা বিলে সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর প্রাণী পাখি। শীতকাল এলেই বাইক্কা বিল হয়ে ওঠে পাখির স্বর্গ। হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি দূর উত্তরদেশ থেকে ছুটে আসে এখানে। ঠান্ডা থেকে বাঁচতে আর খাদ্যের সন্ধানে তারা আশ্রয় নেয় এই নিরাপদ জলাভূমিতে। গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু ২০১১ সালেই এখানে শনাক্ত হয়েছে ২০৩ প্রজাতির পাখি, যার মধ্যে ১৫৩টি পরিযায়ী আর ৫০টি স্থানীয়। আপনি যদি পাখি ভালোবাসেন, তবে এখানে আসলেই মনে  হবে আপনাকে আতিথেয়তা করার জন্যই হয়তো সংসার পেতেছে পানকৌড়ি, কানিবক, ধলাবক, গোবক, রাঙাবক, দলপিপি, নেউপিপি, বেগুনি কালেম, কালোমাথা কাস্তেচরা, গেওয়ালা বাটান, মেটেমাথা চিটি, কালাপঙ্খ ঠেঙ্গী, ধলা বালিহাঁস, পাতি সরালী, রাজসরালী, মরচেরং, ল্যাঙ্গাহাঁসসহ অগণিত দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির পাখির দল। পাখি দেখার জন্য এ বিলের পাশে আছে একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। উপরে উঠলেই চারপাশের বিস্তীর্ণ জলাভূমি চোখে ধরা পড়ে।

নিচে ভাসছে শাপলা-পদ্ম, আর দূরে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ছে পাখি। কারো ডানা রোদে চকচক করছে, কারো ডানা ভিজে আছে সকালের শিশিরে। শান্ত এই জলাভূমি থেকে ভেসে আসা পাখির ডাক আপনাকে মুহূর্তেই প্রকৃতির গভীরে টেনে নেবে।

যেভাবে যাবেন

বাইক্কা বিল যেতে প্রথমেই ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল যেতে হবে। শ্রীমঙ্গল যেতে ট্রেন ও বাসের সুবিধা রয়েছে। কমলাপুর থেকে উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত ও কালনি এক্সপ্রেস ট্রেনে শ্রীমঙ্গল যাওয়া যায়, যার ভাড়া ২৪০-৮০০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়াও হানিফ, এনা, শ্যামলী, সিলেট এক্সপ্রেসের মতো বাসেও যেতে পারেন। এসি বা নন-এসি বাসের ভাড়া ৫০০-৭০০ টাকা। শ্রীমঙ্গল শহরে নেমে সেখান থেকে ইজিবাইক, অটো রিকশা বা মাইক্রো ভাড়া নিয়ে সহজেই বাইক্কা বিল পৌঁছানো সম্ভব।

থাকা- খাওয়া

সাধারণত বাইক্কা বিলে পর্যটকরা থাকে না। লেক ভ্রমণ শেষে পরবর্তী গন্তব্য অনুযায়ী রাত্রিযাপন করাই ভালো। তবে রাতে থাকতে চাইলে শ্রীমঙ্গলে বিভিন্ন মানের হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। আর খাওয়ার জন্য  শ্রীমঙ্গলে গ্র্যান্ড তাজ, হাবিব হোটেল, কুটুম বাড়ি ও শ্রীমঙ্গল ইনের খাবার বেশ জনপ্রিয়। বাইক্কা বিল ভ্রমণের সময় শুকনো খাবার সঙ্গে নিতে পারেন।