ঢাকার বায়ুদূষণের মূল উৎসগুলোর বেশিরভাগই এখন অনুপস্থিত। ঈদুল আজহার ছুটিতে যানবাহনের সংখ্যা কম, কলকারখানাগুলোও কয়েক দিন ধরে বন্ধ।
নগরীর জনসমাগমও তুলনামূলকভাবে নেই বললেই চলে। তার ওপর গতকাল শনিবার (৭ জুন) রাজধানীজুড়ে ২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে এই আবহাওয়ায় বায়ুর মান উন্নতির আশা করা যায়। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন।
রোববার (৮ জুন) ঈদের পরদিন সকাল সোয়া আটটায় সুইজারল্যান্ডভিত্তিক পরিবেশ পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী ঢাকার গড় বায়ুমান ১৫০। যা ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচিত। ১৬৭ স্কোর নিয়ে দূষণের শীর্ষে আছে ভারতের রাজধানী দিল্লি। দ্বিতীয় স্থানে আছে চিলির সান্তিয়াগো। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ঢাকা।
বিশ্বজুড়ে বায়ুদূষণের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে আইকিউএয়ার। প্রতিষ্ঠানটির লাইভ সূচক বাতাসের গুণমান সম্পর্কে তাৎক্ষণিক তথ্য দিয়ে মানুষকে সচেতন করে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকার মধ্যে গুলশানের লেকপার্কে সবচেয়ে খারাপ বায়ুমান (১৬৩)। কল্যাণপুর, পুরান ঢাকার বেচারাম দেউড়ি এবং মিরপুরের ইস্টার্ন হাউজিং এলাকা—এসব এলাকাও দূষণে শীর্ষে।
এমন পরিস্থিতিতে আইকিউএয়ার সতর্কবার্তায় ঢাকাবাসীকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে। খোলা জায়গায় ব্যায়াম না করা এবং জানালা বন্ধ রাখার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
গত ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে রাজধানীতে একদিনের জন্যও নির্মল বাতাস পাওয়া যায়নি। মার্চ ও এপ্রিলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপসের তথ্যমতে, গত ডিসেম্বরে বায়ুদূষণের মাত্রা ছিল গত ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। একই চিত্র ছিল জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতেও। মার্চ মাসেও ভয়াবহ রূপ নেয় দূষণ।
ঢাকার বায়ুদূষণের মূল উপাদান হলো পিএম ২.৫ নামক অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণা। আজকের হিসেবে, ঢাকার বাতাসে এর পরিমাণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত সহনীয় মাত্রার চেয়ে প্রায় ১৪ গুণ বেশি।
যদিও পরিবেশ রক্ষায় একের পর এক প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার, বাস্তবে সেগুলোর কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ। কাজের চেয়ে কথার প্রচার বেশি দূষণ রোধে সরকারি পরিকল্পনা যত জোরালোই শোনা যাক, বাস্তবতা হলো দূষণ দিন দিন বেড়েই চলেছে।
আপনার মতামত লিখুন :