ঢাকা শনিবার, ০৩ মে, ২০২৫

ময়মসিংহে ছাত্রলীগ নেতার বাস এখন বিএনপি নেতার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মে ২, ২০২৫, ০৬:৪৪ পিএম
ছবি : রূপালী বাংলাদেশ

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আব্দুল্লাহর ‘আলম এশিয়া পরিবহনে’র ৫টি বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

সড়কে চলাচলের সুযোগ করে দেওয়ার নাম করে একটি বাস নিজ নামে রেজিস্ট্রি করে নেন পৌর বিএনপির আহ্বায়ক একেএম শমসের আলী।

এখন সড়কে বাসগুলো চলাচল করলেও সেগুলো নিজেই নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে পৌর বিএনপির এ নেতার বিরুদ্ধে। 

এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদকে মামলার ভয় দেখিয়ে তার বাসা অফিস হিসেবে ব্যবহার, মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে নিরীহ মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায়, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, দলের নাম ভাঙিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এসব ঘটনায় একেএম শমসের আলীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়কের কাছে একাধিক অভিযোগ করেছেন একাধিকা ব্যক্তি।

অভিযোগের অনুলিপি দলের মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় অনেক নেতাকে দেওয়া হয়েছে। তবে, অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা না নেওয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।

সূত্র জানায়, গত বছরের ১১ নভেম্বর ফুলবাড়িয়া পৌর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল ফজল, আহ্বায়ক শাহজাহান শিকদার, মাহবুবুল আলম সেলিম, ওমর ফারুক, মাসুদ আলম খান, আনোয়ার হোসেন আকন্দ রুবেল এবং গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর পৌর বিএনপির সদস্য আজহারুল আলম রিপন পৃথক দুটি অভিযোগ করেন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক একেএম শমসের আলী গত ৫ আগস্টের পর থেকে দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে মামলার ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিসে গিয়ে দলীয় পদ ব্যবহার করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আতঙ্কিত করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন।

এ ছাড়াও তাদের নিয়ে ‘শমশের বাহিনী’ গঠন, এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে ভয় দেখানো, থানা ভাঙচুর মামলার আসামি আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শরাফ উদ্দিনকে মামলার ভয় দেখিয়ে তার বাসা ব্যক্তিগত অফিস হিসেবে ব্যবহার করা, জমি সংক্রান্ত বিরোধ সৃষ্টি করে থানায় এনে ভয়ভীতি দেখিয়ে দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন।

অপর অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলায় অভিযুক্ত মামলার আসামি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে জেলা মটর মালিক সমিতি সঙ্গে আলোচনা করেন। আব্দুল্লাহর মালিকানাধীন আলম এশিয়া পরিবহনের গাড়িগুলো দ্রুত চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহণ করে দেওয়ার নামে একটি গাড়ি তিনি রেজিস্ট্রি করে নেন। 

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, এরপর ২৫ আগস্ট সারা দেশে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে হটানো ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে আব্দুল্লাহর অর্থায়নে ও নেতৃত্বে ফুলবাড়িয়া থেকে দুই গাড়ি মহিলা যাত্রী নিয়ে ঢাকা শাহাবাগে যান।

শমসের আলীর সহযোগিতায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আবারও মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠছেন। এ ছাড়াও প্রকাশ্যে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদের হয়ে একই মঞ্চে ভোট চান শমসের আলী।

এ বিষয়ে পৌর বিএনপির আহ্বায়ক একেএম শমসের আলী বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল। যারা অভিযোগ দিয়েছিল, পরে তারাই আমার পক্ষে বিবৃতি দিয়েছিল যে, আমার বিরুদ্ধে তাদের কোনো অভিযোগ নেই। তবে, আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।’

পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাবুবুল আলম সেলিম বলেন, ‘আমরা সব যুগ্ম আহ্বায়ক তার অনৈতিক ও সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অভিযোগ দিয়েছিলাম। তার সব ডকুমেন্টস আমাদের কাছে আছে। তবে, আমরা তার পক্ষে কোনো বিবৃতি দেইনি। এমন কোনো ডকুমেন্টস বা প্রমাণ একেএম শমসের আলী দেখাতে পারবে না।’

ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রুকুনুজ্জামান সরকার বলেন, ‘ফুলবাড়িয়া পৌর বিএনপির আহ্বায়ক একেএম শমসের আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।’

ফুলবাড়িয়া পৌর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল ফজল বলেন, ‘আমিসহ ৬ জন পৌর বিএনপির পৌর বিএনপির আহ্বায়ক একেএম শমসের আলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ দিয়েছিলাম। তবে, আমরা তার পক্ষে কোনো বিবৃতি দেইনি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘তিনি যা দাবি করছেন, তা মিথ্যা। আমরা তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। তবে, আমি নিজের হাতে সন্ধ্যার পর দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রুকুনুজ্জামান সরকারের হাতে পৌর বিএনপির আহ্বায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু, কেন তিনি অস্বীকার করছেন বা অন্যায়কে প্রশ্রয় দিচ্ছেন, বিষয়টি আমার জানা নেই।’

এ বিষয়ে জানতে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলুর নম্বরে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।