গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া ইউনিয়নের শিমুল তাইড় গ্রামের বাসিন্দা হায়দার আলী। অতি সাধারণ ঘরের সন্তান। ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগের ফায়ারম্যান।
স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ফায়ারম্যান থেকে রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাঘাটা আওয়ামী লীগের নেতা বনে যান।
এরপর আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ঘুষ-দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য, রেলের মার্কেটে দোকানঘর বরাদ্দ নিয়ে এখন তিনি অঢেল সম্পদের মালিক।
এ নিয়ে তাকে গ্রেপ্তারের আবেদন জানিয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও গাইবান্ধার জেলা প্রশাসকের কাছে।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, স্বৈরাচার সরকারের আমলে রেলওয়ে শ্রমিক লীগের নেতা হিসেবে তিনি শুয়ে-বসে থাকতেন রেল ভবনে। নেতাদের সঙ্গে তদবিরবাজ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। সে কারণে ফায়ায়ম্যানের কাজ আর করতে হয়নি। রেলমন্ত্রী আর আওয়ামী লীগ নেতাদের ম্যানেজ করে শুরু করেন চাকরি ও বদলি ব্যবসা।
অভিযোগে বলা হয়, কর্মস্থল বাদ দিয়ে থাকতেন ঢাকায়। তারপর শুরু করেন নিয়োগ ও ঘুষ বাণিজ্য। আওয়ামী লীগ আমলে রেল বিভাগে যত নিযোগ হয়েছে—এই ফায়ারম্যান হায়দার আলী ছিলেন সেসবের এজেন্ট। প্রার্থীদের কাছে ঘুষের টাকা নিয়ে গায়েব হয়ে যেতেন।
এভাবে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়ে চলে আসেন বোনারপাড়ায়। টাকা নিয়েও চাকরি না পাওয়া ভুক্তভোগী লোকজন দিনের পর দিন ধর্না দিয়েছেন তার বোনারপাড়ার বাড়িতে।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, আওয়ামী লীগ আমলে তিনি যখন রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন, তখন তার বড় ছেলে রায়হান কবীরকে রেলওয়ে বিভাগের বুকিং ক্লার্ক হিসেবে চাকরিতে নিয়োগের ব্যবস্থা করেন। তারপর বদলি করে ছেলেকে নিয়ে আসেন নিজ এলাকা বোনারপাড়া রেল স্টেশনে।
তার (ছেলের) ক্ষমতার দাপটে তিনি চাকরি আর বদলি বাণিজ্য করে আওয়ামী লীগের ১৭ বছরে অঢেল সম্পদের মালিক বনে যান। সচ্ছল সংসার চালিয়েও তিনি বোনারপাড়ায় জমি কিনেছেন অন্তত ৫ কোটি টাকার। করেছেন ৫ তলা আলিশান বাড়ি। বগুড়া শহরে ২ টি ফ্লাট, ঢাকা শহরে ১ টি ফ্লাটি ও বগুড়া রেলওয়ে মার্কেটে ৫০ টিরও বেশি দোকান রয়েছে।
অভিযোগে জানানো হয়, রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা ও আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তোলেন বিভিন্ন স্থানে। এসব দোকান ও বাড়ি থেকে তার প্রতিমাসে অন্তত ১০ লাখ টাকা আয় হয়। তারপর চাকরি থেকে অবসর নিয়ে ঢাকা থেকে স্থায়ীভাবে আসেন গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়ায়।
যোগ দেন সাঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগে। টাকা ছিটিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকে হাতে নিয়ে নিজে বনে যান সাঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি। তারপর স্থানীয় এমপির কাছের মানুষ হয়ে নিজের অবস্থানকে শক্ত করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার এক ব্যক্তি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমলে হায়দার আলী ছিলেন ওই এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক। মারামারি, চাঁদাবাজি, থানার দালালি, জমি দখল ছাড়াও টেন্ডারবাজিতে ছিলেন সক্রিয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই অভুথানের সময় জনরোষ থেকে বাঁচতে ও বেকায়দা দেখে সাঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতার মতো হায়দার আলীও তার আলিশান বাড়ি ছেড়ে গা-ঢাকা দেন।’
এ ব্যাপারে হায়দার আলীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরবন্ধ পাওয়া যায়।