ঢাকা বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫

লক্ষ্মীপুরে মাদ্রাসাছাত্রের মরদেহ উদ্ধার, শিক্ষক আটক

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মে ১৩, ২০২৫, ০৮:৫৩ পিএম
আটক শিক্ষক মাহমুদুর রহমান। ছবি-সংগহীত

লক্ষ্মীপুরে আল-মুঈন ইসলামী একাডেমী থেকে হেফজ বিভাগের ছাত্র সানিম হোসাইনের (৭) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

পরিবারের অভিযোগ, শিক্ষক মাহমুদুর রহমানের মারধরে সে মারা গেছে। ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে সানিম টয়লেটে ঢুকে ‘আত্মহত্যা’ করেছে বলে শিক্ষকরা প্রচার করেছেন।

পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিক্ষক মাহমুদুর রহমানকে আটক করা হয়েছে। 

এদিকে, মাদ্রাসা কক্ষের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে গামছা নিয়ে সানিমকে টয়লেটে ঢুকতে দেখা গেলেও বের হওয়া কোনো দৃশ্য দেখা যায়নি। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বশির আহমেদতা দেখাতে পারেননি। সানিমের মরদেহ ৩য় তলার টয়লেট থেকে শিক্ষকরা নামিয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।

তবে লাশ নামানোর ভিডিও দেখাতে পারেননি কর্তৃপক্ষ। 

সানিমের মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না তার বাবা-মাসহ স্বজনরা। ছেলের শোকে মাদ্রাসার মেঝেতে বারাবার কান্নায় মূর্ছা যেতে দেখা যায় বাবা-মাকে। 

মঙ্গলবার (১৩ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে জেলা শহরের উত্তর তেমুহনী এলাকায় মাদ্রাসা থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। 

খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রেজাউল হক ও সদর মডেল থানার ওসি আব্দুল মোন্নাফ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তারা মাদ্রাসার শিক্ষক ও নিহত সানিমের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন। 

নিহত সানিম রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের কুচিয়ামারা গ্রামের মুদি ব্যবসায়ী হুমায়ুন মাতব্বরের ছেলে। 

সানিমের শোকে প্রায় অচেতন হয়ে পড়া তার বাবা হুমায়ন মাতাব্বর ও মা জহুরা বেগমের বক্তব্য নেওয়া যায়নি। 

সানিমের ফুফাতো ভাই বকশি মোহাম্মদ শাহেদ হোসাইন বলেন, ‘সানিম ২০ পারা কোরআনে হাফেজ। ৩-৪ দিন আগে আমাদের কাছে খবর যায় সে না কি হুজুরের কথা শোনে না, এমনকি বদনাম করে। এ নিয়ে হুজুর তার ওপর রেগে ছিল। মঙ্গলবার দুপুরে খবর পাই সানিম নাকি টয়লেটে ঢুকে গলায় ফাঁস দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মাদ্রাসা এসে সেই হুজুরের কথা জিজ্ঞেস করতে সবাই বলেছে, ‘তাকে আটকে রাখা হয়েছে।’ সানিমের মরদেহ আমরা টয়লেটে পাইনি। তার মরদেহ মাদ্রাসার নিচতলার একটি কক্ষে বিছানায় পেয়েছি। তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা হত্যার বিচার চাই।’ 

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা বশির আহমেদ বলেন, ‘ক্লাস শেষে সবাইকে নামাজ আর খাওয়ার বিরতি দেওয়া হয়। নামাজ পড়ে সবাই খাইতে যায়। কিন্তু সানিম যায়নি। সিসি ক্যামেরায় দেখা যায়, সে গামছা নিয়ে টয়লেটের প্রবেশ করে। সেখান থেকেই তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রেজাউল হক বলেন, ‘মাদ্রাসাছাত্র আত্মহত্যার খবর পেয়ে আমরা এসেছি। তার গলায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে কালো দাগ রয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে আটক করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।’