ঢাকা শুক্রবার, ১৬ মে, ২০২৫

পরীক্ষা দিতে এসে সন্তান প্রসব, হাসপাতালে পরীক্ষা দিলেন মা

লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মে ১৫, ২০২৫, ০৭:৪৪ পিএম
হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছেলে সন্তানের  জন্ম দেন হাজেরা। ছবি-রূপালী বাংলাদেশ

লালমনিরহাটে স্নাতকোত্তরের (মাস্টার্স) লিখিত পরীক্ষা দিতে এসে সন্তান প্রসব করেছেন হাজের খাতুন (২৭) নামের এক শিক্ষার্থী।

বুধবার (১৪ মে) দুপুরে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছেলে সন্তান  জন্ম দেন হাজেরা। তিনি হাতীবান্ধা আলীমুদ্দিন সরকারি কলেজে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন।

এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রশংসায় ভাসছেন অদম্য হাজেরা। হাজেরার মনোবল অন্য শিক্ষার্থীদের জন্য অনুকরণীয় বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।

হাজেরা খাতুন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার চরবজরা গ্রামের মো. আবদুর রশিদের স্ত্রী। তার বাবার বাড়ি যশোরে।

হাসপাতাল ও পরীক্ষা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, ৫ বছর সংসার জীবনে এক মেয়ে সন্তানের জননী হাজেরা খাতুন সংসারের পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে যান। স্বামীর বাড়িতে থেকেও সম্মান শ্রেণিতে পড়তেন। গর্ভে সন্তান নিয়ে মাস্টার্স পরীক্ষা শেষে বুধবার ছিল ব্যবহারিক পরীক্ষা। 

স্বামীসহ অটোরিকশাযোগে বাড়ি থেকে হাতীবান্ধা সরকারি আলীমুদ্দিন কলেজ কেন্দ্র আসছিলেন হাজেরা খাতুন। কলেজ গেটে পৌঁছার আগে প্রসব বেদনায় ছটফট করলে ফোন দেন কলেজ কেন্দ্র সচিবকে। তিনি খবর পেয়ে তাকে দ্রুত হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির পরামর্শ দেন।

তাকে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে হাজেরা খাতুন ছেলে সন্তান প্রসব করেন। পরে পরীক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষকরা হাসপাতালে গিয়ে তার পরীক্ষা গ্রহণ করে নবজাতককে উপহার প্রদান করেন। পরে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে কুড়িগ্রামে নিজ বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।

স্বামী আবদুর রশিদ বলেন, ‘পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশের আগেই স্ত্রীর প্রসব বেদনা শুরু হয়। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে স্ত্রীর নিরাপদ প্রসবের জন্য হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাদের সহায়তায় স্ত্রীকে হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি করালে নরমাল ডেলিভারিতে স্ত্রী একটি ছেলে সন্তান জন্ম দেন। আমার স্ত্রী ও নবজাতক এখন সুস্থ আছে।’

হাজেরা খাতুন বলেন, ‘মাস্টার্স পাসের পর নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। পরিবারকে সহায়তা করতে চাই। সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করতে চাই।’

কেন্দ্রের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান মোজাম্মেল বলেন, ‘বিষয়টি শুনে তাৎক্ষণিক ওই পরীক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়। সন্তান প্রসবের পর নবজাতক শিশু ও হাজেরা খাতুনের জন্য উপহারসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। আমরা খুব খুশি যে, নবজাতক ও মা সুস্থ আছে।’

হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আনারুল হক বলেন, ‘হাজেরার নরমাল ডেলিভারি হয়েছে। তিনি ছেলে সন্তান প্রসব করেন। নবজাতক ও প্রসূতি মা দু’জনেই সুস্থ আছেন। বুধবার সন্ধ্যায় তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’