স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শেষ করে সংসারের হাল ধরবে। কষ্ট করে গড়া হবে একটি পাকা বাড়ি। বাবার অভাব আর মায়ের দুঃখ মোচন করবে—এমনই আশা নিয়ে বড় হচ্ছিল চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার কিশোর ইশমামুল হক। কিন্তু সেই স্বপ্ন থেমে গেল জুলাই গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে।
মাত্র ১৭ বছরের ইশমাম পড়ালেখা ছেড়ে কাজ শুরু করেছিল ১২ বছর বয়সে। বাবার মৃত্যু, পরিবারের অভাব আর দারিদ্র্য তাকে কৈশোরেই টেনে এনেছিল জীবিকার যুদ্ধে।
২০২৩ সালে ঢাকায় একটি জুয়েলারি দোকানে চাকরি নেয় সে। লক্ষ্য ছিল টাকা জমিয়ে বিদেশ যাওয়ার, সেখান থেকে ভালো আয় করে সংসার গুছিয়ে নেওয়ার। কিন্তু সেই আশা আর পূরণ হলো না তার।
৫ জুলাই ‘মার্চ টু ঢাকা’ আন্দোলনে অংশ নিতে চকবাজার থেকে শাহবাগের দিকে যাত্রা করে ইশমাম। পথিমধ্যে চাঁনখারপুল এলাকায় পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হয় সে।
গুলিটি তার পেটে ঢুকে পিঠ দিয়ে বের হয়ে যায়। আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখান থেকে চিকিৎসা না পেয়ে ফেরত পাঠানো হয়। পরে সেখানেই মৃত্যু হয় ইশমামের।
ইশমামের মা শাহেদা বেগম বলেন, আমার ছেলে বলত—মা, আমি বিদেশ যাব, অনেক টাকা আয় করব। তুমি পাকা বাড়ি করতে পারবে, অভাব থাকবে না। অথচ সে ফিরেছে লাশ হয়ে।
তিনি আরও বলেন, আমার স্বামী অনেক আগেই মারা গেছে। এরপর একা একা কত কষ্ট করে ছেলেদের বড় করেছি। এখন আর কিছুই বাকি নেই জীবনে।
ইশমামের বাবা নূরুল হক দীর্ঘদিন দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগে মারা যান ৮ বছর আগে। চিকিৎসার খরচ জোগাতে পরিবারের জমি বিক্রি, ধার-দেনা—সবই করতে হয়।
পরে সংসারের দায় নিতে ইশমাম ও তার বড় ভাই মুহিবুল দুইজনেই কাজ শুরু করে। ইশমাম ঢাকায়, মুহিবুল স্থানীয় একটি দোকানে। তাদের উপার্জনে কোনো মতে চলছিল সংসার ও ছোট ভাই আবু বক্করের মাদ্রাসা পড়া।
ইশমামের মৃত্যুর পর পরিবারটি একরকম পথে বসেছে। বড় ভাই মুহিবুল মাত্র ৫ হাজার টাকা বেতনে একটি গ্যাস দোকানে কাজ করেন। সংসার চালানো, ওষুধ কেনা ও ছোট ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ—সবই এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে সরকারি সহায়তা বলতে মাত্র একটি ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেওয়া হয়েছে, যা পরিপক্ব হবে ৫ বছর পর।
আপনার মতামত লিখুন :