ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫

রূপগঞ্জে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সরকারি বই বিক্রিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২৫, ০৮:০৭ পিএম
বই বিক্রির সময় অধ্যক্ষ, পিকআপ চালক ও চোরাই বই ক্রেতা হাতেনাতে ধরা পড়ে। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ভুলতা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ সুরাইয়া পারভীনের বিরুদ্ধে সরকারি বই গোপনে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার ভুলতা স্কুল এন্ড কলেজে এ ঘটনা ঘটে।

বই বিক্রির সময় অধ্যক্ষ, পিকআপ চালক ও চোরাই বই ক্রেতা হাতেনাতে ধরা পড়লেও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক নূরে আলম মোটা অংকের টাকা বিনিময়ে তাদের ছেড়ে দেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

ঘটনায় শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এর আগে অধ্যক্ষ সুরাইয়া পারভীনের বিরুদ্ধে ১ কোটি টাকা অর্থ আত্মসাৎ, কাজ না করিয়ে বিল তোলাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার দুপুরের দিকে একটি নীল রংয়ের পিকআপ ট্রাক ভুলতা স্কুল এন্ড কলেজে প্রবেশ করেন। অধ্যক্ষ সুরাইয়া পারভীন স্টোর রুমে থাকা ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির নতুন সব বই কেজি দরে বিক্রি করেন। পিকআপ চালক হেদায়েত উল্লাহ ও বই ক্রেতা মিলে সকল বই পিকআপে বোঝাই করেন।

বিকালের দিকে স্থানীয়রা বই বিক্রির বিষয়টি টের পেয়ে বইয়ের ক্রেতা, অধ্যক্ষ সুরাইয়া বেগম ও পিকআপ চালককে হাতেনাতে আটক করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক নূরে আলমকে খবর দেন। পরে সন্ধ্যার দিকে শিক্ষা অফিসার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঘটনার সত্যতা পেয়ে বই পুনরায় পিকআপ থেকে নামিয়ে স্টোর রুমে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

বই ষ্টোর রুমে নামানোর নির্দেশ প্রদান করলেও মোটা অংকের টাকা বিনিময়ে শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক নূরে আলম অধ্যক্ষ সুরাইয়া পারভীন, বই ক্রেতা ও পিকআপ চালকের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এদিকে, বই বিক্রির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এতে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

স্থানীয়রা আরও জানান, গত বছরের ৫ই আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর ভুলতা স্কুল এন্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুল আউয়ালের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। আউয়ালের বিরুদ্ধে স্কুলের কয়েক কোটি টাকার দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ভিত্তিতে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরে সুরাইরা বেগম ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন।

যোগদানের পরই সুরাইয়া বেগম স্কুল এন্ড কলেজটিকে দূর্নীতির আখড়ায় পরিনত করে। সুরাইয়া বেগমের বিরুদ্ধে প্রায় ১কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া স্কুলে ২৫ হাজার টাকার ইলেকট্রিক কাজ করে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বিল তোলেন। স্কুলের আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ্যে না করে, ব্যক্তিগত অফিসে গোপনে লেনদেন সম্পন্ন করা হয়। কোন শিক্ষক সুরাইয়া বেগমের অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তাকে চাকরিচ্যুত হতে হয়।

গত কয়েকদিন আগে সুরাইয়া বেগমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় সিনিয়র শিক্ষক বিমল দাসকে কোন নোটিশ ছাড়াই বরখাস্ত করা হয়েছে। সুরাইয়া বেগমের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগও রয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা বলেন, পর্যাপ্ত বই নেই বলে আমাদেরকে বই দেওয়া হয়নি। অথচ এখন দেখতে পাচ্ছি বই কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। যদি অধ্যক্ষ সুরাইয়া বেগমের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তাদের আমরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করব।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সুরাইয়া পারভীন বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি পক্ষ সব সময় ষড়যন্ত্র করে থাকে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক নূরে আলম বলেন, নতুন পুরাতন মিলিয়ে প্রায় লাখ টাকার বই বিক্রিকালে জব্দ করা হয়। অধ্যক্ষ সুরাইয়া পারভীনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে। টাকার বিনিময়ে ছাড় দেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনাটি আমি জানা মাত্রই মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশনা দিয়েছি জড়িতদের ব্যাপারে প্রতিবেদন দিতে। আগামী তিন দিনের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়ে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ঘটনার সঙ্গে শিক্ষা অফিসের যদি কেউ জড়িত থাকে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।