নাটোরের বাগাতিপাড়ায় পানি নিষ্কাশনের একমাত্র ক্যানালে একাধিক বাঁধ দেওয়ায় টানা বর্ষণে প্লাবিত হয়েছে উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম।
পানির নিচে তলিয়ে গেছে প্রায় ২ হাজার একর ফসলি জমি ও শতাধিক মাছের ঘের। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ, সৃষ্টি হয়েছে মানবিক ও অর্থনৈতিক সংকট।
স্থানীয়রা জানান, নর্থবেঙ্গল সুগার মিলের পানি নিষ্কাশনের ক্যানালটি দীর্ঘদিন ধরে প্রতাপপুরসহ আশপাশের গ্রামের জন্য একমাত্র নিষ্কাশন পথ ছিল।
মিল কর্তৃপক্ষ ক্যানালটি স্থানীয় কামাল বাবু নামের এক ব্যক্তিকে মাছ চাষের জন্য লিজ দেয়। লিজ পাওয়ার পর তিনি ক্যানালের বিভিন্ন অংশে ৩ থেকে ৪টি বাঁধ স্থাপন করেন, যার ফলে পানি চলাচল একপ্রকার বন্ধ হয়ে যায়।
প্রতাপপুর গ্রামের ৭০ বছর বয়সী আতাহার আলী বলেন, ‘জীবনে এমন পানি দেখিনি। কামাল বাঁধ দিয়া পানি আটকে দিছে। সব ঘরবাড়ি আর জমি পানির নিচে। খাব কী, বাঁচব কী বুঝতেছি না।’

গ্রামবাসীদের অভিযোগ, বাঁধের কারণে শুধুমাত্র বসতবাড়িই নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ধান, সবজি ও মাছচাষ নির্ভর জীবিকা। প্লাবনে নষ্ট হয়ে গেছে পুকুরের মাছ, ফসলি জমির ধান ও শাকসবজি। বহু কৃষক পরিবার এখন চরম খাদ্যসংকটে রয়েছে।
পানিবন্দি অবস্থায় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী কয়েক দিন আগে ক্যানালের একটি বাঁধ ভেঙে দেয়। এতে লিজধারী কামাল বাবুর চাষ করা মাছ বেরিয়ে যায়। পরে তিনি একাধিক গ্রামবাসীর নাম উল্লেখ করে স্থানীয় থানায় মামলা দায়ের করেন।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে কামাল বাবু বলেন, ‘নিয়ম মেনেই মিল থেকে লিজ নিয়েছি। বাঁধ দিইনি, শুধু মাছ আটকে রাখার জন্য কিছু ঘেরা দিয়েছিলাম। অতিরিক্ত বৃষ্টিতে পানি জমেছে, এখন আমার মাছ কেউ বের করে দিয়েছে—বাধ্য হয়েই মামলা করেছি।’

নর্থবেঙ্গল সুগার মিলের কৃষ্ণা খামারের খামারপ্রধান খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘লিজের শর্তে পানি চলাচলে বাধা না দেওয়ার বিষয়টি বলা ছিল। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইউএনও স্যার আমাকে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন, আমি কাজ করছি।’
সোমবার (৪ জুলাই) দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারুফ আফজাল রাজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে গণমাধ্যমকে কোনো মন্তব্য দিতে রাজি হননি তিনি।
স্থানীয়দের দাবি, ‘এই সংকট সমাধানে অবিলম্বে ক্যানালের বাঁধ খুলে পানি চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে এবং মানবিক দুর্যোগ ঘনীভূত হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :