যশোরের মণিরামপুর ও অভয়নগর উপজেলার সংযোগস্থলে অভয়নগর টেকাসেতুর কাজ আইনি জটিলতায় দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। ফলে দুই উপজেলার লাখো মানুষ পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। নদী পারাপারের জন্য তৈরি বিকল্প কাঠের সেতুটি এখন ভগ্নদশায়, যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (LGED) আওতায় ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর শুরু হয় পুরাতন টেকাসেতুর স্থলে নতুন সেতু নির্মাণের কাজ। প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৮ কোটি ৫৫ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। দরপত্রের মাধ্যমে ‘মোজাহার এন্টারপ্রাইজ (প্রা.) লিমিটেড’ ও ‘শামীম এন্টারপ্রাইজ (জেভি)’ নামে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে কাজটি পায়। মোট ৭ কোটি ৫৭ লাখ ২৮ হাজার ৫০৭ টাকায় কাজের চুক্তি হয়, এরই মধ্যে ৬ কোটি ৩৪ লাখ ২২ হাজার ৩১৭ টাকা বিল পরিশোধও করা হয়েছে।
কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের ৭ মার্চ। পরে সময় বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। এরই মধ্যে সেতুর প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হলেও উচ্চতা কম এবং নদীবন্দর কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র না থাকায় সেতুর নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ‘ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির’ উপদেষ্টা ও বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ হাইকোর্টে রিট করেন। আদালত সেতুর যথাযথ উচ্চতা ও প্রশস্ততা নিশ্চিত করে কাজ সম্পন্নের নির্দেশ দেন। নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা না নেওয়ায় কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণাধীন সেতুর পাশে কাঠের তৈরি অস্থায়ী ব্রিজ দিয়ে ছোট যানবাহন ও পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। ব্রিজটি যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে।
টেকারঘাট বাজারের ওষুধ বিক্রেতা দেবু চন্দ্র দাস বলেন, ‘আইনি জটিলতার কারণে সেতুর কাজ বন্ধ। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যেও স্থবিরতা নেমে এসেছে।’
পাঁচাকড়ি গ্রামের ইজিবাইক চালক কেরামত আলী গাজীর ক্ষোভ, ‘বিকল্প কাঠের ব্রিজটি এতটাই দুর্বল যে প্রতিদিন ভয়ে ভয়ে যাত্রী নিয়ে পারাপার হই।’
পায়রা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ফিরোজ আলম বলেন, ‘সেতুর কাজ দ্রুত শুরু না হলে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কাঠের সেতুটিও এখন প্রায় চলাচলের অনুপযুক্ত।’
মনোহরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আক্তার ফারুক মিন্টু জানান, ‘দুই উপজেলার মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা এই সেতু। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য কর্তৃপক্ষকে বারবার অনুরোধ করা হয়েছে।’
রিটকারী ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, ‘হাইকোর্ট ছয় মাস সময় দিয়ে উচ্চতা ও প্রশস্ততা বাড়িয়ে কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু এলজিইডি সে নির্দেশনার বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তারা আদালতের নির্দেশ মেনে চললেই সমস্যার সমাধান সম্ভব।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মোজাহার এন্টারপ্রাইজ (প্রা.) লিমিটেড’-এর প্রতিনিধি মতিয়ার রহমান বলেন, ‘আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় কাজ বন্ধ রয়েছে। অনুমতি পেলে কাজ আবার শুরু করা হবে।’
এ বিষয়ে যশোর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আইনি জটিলতা শেষ হলেই সেতুর বাকি কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা হবে।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন