বরেন্দ্র অঞ্চলে দিন দিন পানিসংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, রাজশাহীর অন্তর্গত ২৭টি ইউনিয়ন বর্তমানে অতি সংকটাপন্ন এলাকায় পরিণত হয়েছে।
এই সংকট মোকাবিলায় সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের প্রশিক্ষণ অত্যন্ত জরুরি।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত এক ডায়ালগে এসব কথা বলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য চৌধুরী সরওয়ার জাহান।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘পরিবর্তন’ আয়োজিত এই ডায়ালগের শিরোনাম ছিল: ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি ও প্রভাব নিয়ে কমিউনিটি পর্যায়ে কপ-৩০-এ স্থানীয় প্রত্যাশা ও মতামত প্রতিফলন’।
চৌধুরী সরওয়ার জাহান বলেন, ‘বরেন্দ্র অঞ্চলে পানিসংকট এখন বাস্তব এবং মারাত্মক। কিন্তু এর মোকাবেলায় একটি বড় সমস্যা হচ্ছে, উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) বেশিদিন দায়িত্বে থাকতে চান না। তারা শহরের কাছাকাছি এলাকায় পোস্টিং নিতে চান। ফলে দীর্ঘমেয়াদে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না।’
তিনি বলেন, ‘একইভাবে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও নির্বাচিত হওয়ার পর অনেকেই পুনরায় দায়িত্বে আসতে পারেন না। এতে করে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় জনসচেতনতা ছাড়া বিকল্প নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে চাষাবাদের বিরোধিতা প্রথমে করেছেন গবেষক ও উন্নয়নকর্মীরা। তখন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) তাদেরকে শত্রু মনে করত। কিন্তু এখন তারাও বিষয়টি উপলব্ধি করছে এবং গবেষকদের পরামর্শ নিচ্ছে। একসাথে কাজ করলেই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান দীপকেন্দ্রনাথ দাস।
পরিবর্তন-এর পরিচালক রাশেদ রিপনের সঞ্চালনায় আলোচনায় আরও অংশ নেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রকল্প ব্যবস্থাপক হাসিবুল হোসেন, মহিলা পরিষদ রাজশাহী জেলার সভাপতি কল্পনা রায়, ওয়েব-এর সভাপতি আঞ্জুমান আরা পারভীন, সদস্য শামীমা সুলতানা মায়া এবং জাতীয় আদিবাসী পরিষদের নেতা বিমল চন্দ্র রাজোয়াড় প্রমুখ।
ডায়ালগে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন এবং বরেন্দ্র অঞ্চলের পানিসংকট, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে মতামত তুলে ধরেন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন