সোমবার, ০৬ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২৫, ০৩:৩১ পিএম

যাচ্ছে মানুষ আসছে মাদক, টাকা পাচ্ছে আরাকান আর্মি

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২৫, ০৩:৩১ পিএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত টেকনাফ উপজেলায় সাম্প্রতিক সময়ে মাদক ও মানবপাচারের হিড়িক চলছে। পাশাপাশি খাদ‍্যপণ‍্য নির্মাণসামগ্রীর বিনিময়ে মিয়ানমার থেকে আসছে প্রজন্মবিধ্বংসী মরণনেশা ইয়াবা-আইস এর বড়-বড় চালান।

টেকনাফ উপজেলায় কর্মরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যৌথ অভিযানে মাদকসহ এসব খাদ‍্যপণ‍্য-নির্মাণসামগ্রী পাচারের সময় অনেকে আটক হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে মূল দালাল সিন্ডিকেট। পাশাপাশি উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে মানবপাচার। সাম্প্রতিক সময়ে বিজিবি, র‍্যাব ও পুলিশের যৌথ অভিযানে টেকনাফের বাহারছড়ার গহীন পাহাড়ের বন্দিশালা থেকে কয়েকশ মালয়েশিয়া পাচারের জন‍্য রাখা ভিকটিম উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। এসময় কয়েকজন পাচারকারী দালাল আটক হলেও অধিকাংশ দালাল রয়ে গেছে অধরা।

এসব অপরাধে যারা জড়িত তাদের মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সাথে গভীর যোগসূত্র রয়েছে বলে স্থানীয় সচেতন মহল অভিমত প্রকাশ করেন। অনেকে ধারণা করছেন, মাদক ও মানবপাচারের অর্থ চলে যাচ্ছে আরাকান আর্মির কাছে।

উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গা তরুণী-কিশোরীদের পাচার করে বিনিময়ে লাখ লাখ পিস ইয়াবা ও আইস আমদানি করার ভয়াবহ তথ্য পাওয়া গেছে। ইতিমধ‍্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে এসব মাদকের অনেক চালান ধরা পড়েছে এবং মালয়েশিয়া পাচারের সময় অনেক রোহিঙ্গা ভিকটিম উদ্ধার হয়েছে, আটক হয়েছে দালালরাও। কিন্তু পর্দার আড়ালে থেকে গেছে আসল ভিলেন। প্রশাসন তাদের ধরতে তৎপর হলেও অদৃশ‍্য কারণে তারা থেকে যায় বহাল তবিয়তে। এসব দুর্ধর্ষ মাদক কারবারিরা বর্তমানে মানবপাচার-মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করছে।

সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের নাফনদী ও সমুদ্র উপকূলবর্তী ইউনিয়ন সেন্ট মার্টিন, সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ, পৌরসভা, টেকনাফ সদর, বাহারছড়া, হ্নীলা, হোয়াইক্যংসহ নাফনদী ও সমুদ্র উপকূলের বিভিন্ন মৎস্য ঘাট এখন মানবপাচারের এয়ারপোর্টে পরিণত হয়েছে পাশাপাশি ফেরার পথে মানব এর বদল করে মিয়ানমার থেকে একই বোট নিয়ে আসছেন ইয়াবা-আইসেই বড় বড় চালান।

জানা যায়, টেকনাফ উপজেলা বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার হয়ে মালয়েশিয়া পাচারের সময় প্রায় শতাধিক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষসহ রোহিঙ্গা ও স্থানীয় দালালকে আটকের পাশাপাশি বিপুলপরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার করেছে। ইয়াবা-মানব পাচারের সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই অন্তত বিশ ঘাট পয়েন্ট দিয়ে মাদক ও মানব পাচার চলছে দেদারসে।

বিশেষ করে সেন্টমার্টিন ছেঁড়া দ্বীপ, দক্ষিণ পাড়া ঘাট, শাহপরীর দ্বীপের জালিয়া পাড়া, গোলারচর, মিস্ত্রি পাড়া, দক্ষিণ পাড়া, পশ্চিম পাড়া ঘাট, টেকনাফ সদরের মহেশ খালিয়া, তুলাতুলী, রেঙ্গুলবিল ঘাট, মিটা পানির ছড়া, হাবিব ছড়া ঘাট, সাবরাংয় ইউপির কচুবনিয়া, কাঁটা বনিয়া, বাহাড় ছড়া, মুন্ডার ডেইল, হাদুর ছড়া ঘাট, কুরাইজ্যা পাড়া ঘাট, টেকনাফ পৌর সভার নাইট্যং পাড়া, বড়ইতলী, কেরুনতলী, দমদমিয়া, মোচনী, লেদা, আলীখালি, ফুলের ডেইল, উপকূলীয় ইউনিয়ন বাহারছড়া নোয়াখালী পাড়া, জুম্মা পাড়া, হাজাম পাড়া, কচ্ছপিয়া, বড় ডেইল ঘাটসহ বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মানব পাচার ও ইয়াবা প্রবেশ হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

মানবপাচারের মতো এই মানবতাবিরোধী কাজে লিপ্ত রয়েছে প্রায় অর্ধশত দালাল ও গডফাদার এবং এদের সাথে সহযোগিতায় রয়েছে প্রায় দুইশ লোক।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, এর আগে স্থানীয়রা অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়া পাড়ি দিলেও সরকারের জনসচেতনামূলক প্রচারণায় এখন তারা সেই ঝুঁকি নিচ্ছে না, তারা সরকারিভাবে মালয়েশিয়া যাচ্ছে। বর্তমান সময়ে অবৈধ পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মালয়েশিয়া যাচ্ছে শুধু রোহিঙ্গারা।

রোহিঙ্গাদের প্রথমে দালালেরা ১০ হাজার টাকা হাত বদল করে ক্যাম্প থেকে সিএনজি, অটোরিকশা ও বাসযোগে টেকনাফ পৌর এলাকায় নিয়ে এসে দালালের কাছে জমা রাখে, পরে তাদের আবার দশ হাজার টাকায় আসল দালালের কাছে বিক্রি করে দেয়। পরে তাদের ছোট নৌকায় তুলে মেরিন ড্রাইভ-সংলগ্ন সাগর থেকে অন্তত ৫ কিলোমিটার গিয়ে বড় বোটে তুলে দেয়। সে বোট রাতের মধ্যেই মিয়ানমারে পৌঁছায়। পরে বড় জাহাজে করে তাদের শক্তিশালী মানবপাচার সিন্ডিকেটের সদস্যরা মালয়েশিয়া পৌঁছায়। প্রতিজন থেকে ৩ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।

অনুসন্ধানে আরও দেখা যায়, টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ বাহারছড়া বিভিন্ন ঘাটের সমুদ্রসৈকত এলাকার পার্শ্ববর্তী বাড়ি ও ঝোপ-জঙ্গলে এনে জড়ো করে রাখে। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে তাদের বের করে ছোট ছোট ফিশিং বোট দিয়ে মিয়ানমার পৌঁছে দেয়। মিয়ানমার থেকে আসার সময় ইয়াবার বড়-বড় চালান নিয়ে এসে ঘাটে খালাস করে কারবারিরা।

পাচারের পর মিয়ানমারে এসব রোহিঙ্গা তরুণ-তরুণীর ভাগ্যে কী জুটছে তা আর জানা যাচ্ছে না। সেখানে নিয়ে দ্বিতীয় দফা মুক্তিপণ দাবি করা হয় বলে ফিরে আসা অনেকের অভিযোগ। মিয়ানমার থেকে গভীর সমুদ্র পাড়ি দিয়ে থাইল্যান্ড হয়ে মালয়েশিয়া প্রবেশ করে বলে প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন অনেকে।

সাম্প্রতিক সময়ে দালালের জিম্মি দশা থেকে মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসা উপজেলার সাবরাং ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের ছৈয়দ আলমের ছেলে মোহাম্মদ জুসেফ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আমাকে একটি মানব পাচারকারী দালাল সিন্ডিকেট জোরপূর্বক মালয়েশিয়া পাচারের উদ্দেশ্যে টেকনাফ সাবরাং থেকে নিয়ে যায়। পরে ৩ লাখ টাকায় দালালের কাছে বিক্রি করে দেয়। পরে অনেক কষ্টে ১৫ দিন পর মুক্তিপণ দিয়ে আমাকে ফিরিয়ে আনা হয়।

কোস্ট গার্ডের অভিযানে আটক হওয়া তরুণী হামিদা বেগম জানান, আমার মা-বাবা মালয়েশিয়াপ্রবাসী এক রোহিঙ্গা ছেলের সাথে মোবাইলের ভিডিও কলে বিয়ে দেন। আমি সাগরপথে তার কাছে যাওয়ার জন‍্য যাচ্ছিলাম। তিন দিন পাহাড়ে বন্দি থাকার পর আমরা ধরা পড়ি। এখন আমার জীবন অনিশ্চয়তা। কি কবর আমি নিজেও জানি না।

টেকনাফ কোস্ট গার্ড স্টেশন কমান্ডার সিয়াম-উল-হক জানান, মিয়ানমার থেকে মালয়েশিয়াগামী মানব পাচারকারী ফিশিং ট্রলার মিয়ানমারে পৌঁছে আসার সময় মাদক আনার বিষয়ে খবর থাকলেও আমাদের গোয়েন্দাকার্যক্রম চলমান। তাদের বিরুদ্ধে সঠিক তথ্য পেলে অভিযান পরিচালক করা হবে।

টেকনাফ মডেল থানার (ওসি) জায়েদ নুর জানান, মানব পাচার এবং মাদক কারবারের সাথে জড়িত দালালদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে দেখছি। স্থানীয় দালাল ও মানব পাচারকারীদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন। আমরা অভিযান পরিচালনা করব।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!