বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শেকৃবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২৫, ০৬:৪৮ পিএম

জুলাই বিপ্লব পরবর্তী শেকৃবি শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষা ও প্রাপ্তি

শেকৃবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২৫, ০৬:৪৮ পিএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

২০২৪ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থান- যা ‘জুলাই বিপ্লব’ নামে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু হয়ে রূপ নেয় এক অভূতপূর্ব জনজোয়ারে, যা দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কাঠামোয় প্রোথিত বৈষম্যের মূল শিকড়ে আঘাত হানে। তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এই আন্দোলন কেবল অন্যায়ের প্রতিবাদেই সীমাবদ্ধ ছিল না বরং সামনে এনেছিল একটি নতুন, ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র কাঠামোর স্বপ্ন।

কিন্তু বিপ্লব পরবর্তী বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আজ প্রশ্ন জাগে- আমরা কি সেই স্বপ্নের ক্যাম্পাসের সন্ধান পেয়েছি, নাকি আমাদের আকাঙ্ক্ষা এখনো অপূর্ণই রয়েছে- এই প্রশ্ন ঘিরেই শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষার্থীদের অনুভব, প্রত্যাশা ও পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি- ফাহিম ফয়সাল।

৫ আগস্টের পরে ক্যাম্পাসেও বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয় এখন সম্পূর্ণ নতুন প্রশাসন দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের সংগঠন তার অতীতের জুলুমের রোষানল থেকে মুক্তি পেয়ে এখন ওপেন কার্যক্রম পরিচালনা করার সুযোগ পেয়েছে। শিক্ষার্থীরা মতপ্রকাশের সুযোগ পাচ্ছে। ক্যাম্পাসে যথেষ্ট শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ বিরাজ করছে। এরপর আরও বড় যে পরিবর্তনগুলো আশা করেছিলাম তা হলো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ ও প্রমোশনের ক্ষেত্রে একাডেমিক এক্সিলেন্সি ও রিসার্চ ব্যাকগ্রাউণ্ডকে  মূল্যায়ন করা।

শিক্ষকদের রাজনৈতিক আদর্শ থাকতে পারে, কিন্তু সেটা কোনোভাবেই একাডেমিক এক্সিলেন্সি ও রিসার্চ ব্যাকগ্রাউণ্ডকে যেন অতিক্রম না করে। প্রত্যেক শিক্ষকের ক্ষেত্রে অবশ্যভাবে স্টুডেন্ট ফিডব্যাক সিস্টেম চালু করা। প্রতিষ্ঠানের গবেষণার ক্যাপাসিটি বাড়ানো। ফ্যাসিবাদের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত উইংকে ক্রাইমের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তির আওতাভুক্ত করা। এ সব বিষয় অনেকাংশেই  পূরণ হয়নি। আশা করি প্রশাসন আগামীতে তা সচেতনতার দৃষ্টিপাত করবেন।

ছাত্রশিবিরের শেকৃবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মেহেদী নাইম।

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনে আশার প্রতিফলন ঘটেনি। আওয়ামী দোসররা এখনো বীরদর্পে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, ফলে শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। শেকৃবির ডাইনিং, ক্যান্টিন ও ক্যাফেটেরিয়ায় এখনো আগের মতোই খাবার পরিবেশন হচ্ছে; কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি। শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে চোখে পড়ার মতো অগ্রগতি দেখা যায়নি। বরং ‘এলাকাপ্রীতি’ শেকৃবির জন্য এক কালো অধ্যায়ে পরিণত হয়েছে। কোনো ঘটনা ঘটলেই প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে, কিন্তু তার ফলাফল শিক্ষার্থীদের সামনে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে না। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ঘটনার পর ফ্যাক্টস ফাইন্ডিংস রিপোর্ট প্রকাশিত হয়নি, বিচারও হয়নি। এই বিচার নিয়ে এখনো প্রশাসনের মধ্যে ধোঁয়াশা বিরাজ করছে।

ছাত্রদলের শেকৃবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর কবির।

জুলাই বিপ্লবের পর আমরা যে পরিবর্তন বা আকাঙ্ক্ষা দেখেছিলাম, তার অনেকটাই এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। এ কারণে কিছুটা হতাশ বলা যায়। তবে প্রশাসনের একটি ইতিবাচক দিক হলো- এখন তারা আগের চেয়ে শিক্ষার্থীবান্ধব।আধুনিকায়নের যুগে শেকৃবির অনলাইন কার্যক্রম এখনো পিছিয়ে আছে। ওয়েবসাইটে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়নি, এখনো হাতে-কলমে কার্যক্রমের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। ছাত্র সংসদ গঠনের বিষয়ে প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি, অথচ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এর মধ্যেই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। লাইব্রেরির সুবিধা আগের মতোই সীমিত, তেমন কোনো আধুনিকায়ন হয়নি।

ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এখনো সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি, ক্লাবগুলোকে আলাদা রুম দেওয়া হয়নি। ক্যাফেটেরিয়া আগের মতোই অব্যবস্থাপনায় চলছে। সামগ্রিকভাবে অবকাঠামো ও পরিবেশে বড় কোনো পরিবর্তন নেই। এসব বিষয়ে প্রতি নজর দিতে হবে। পাশাপাশি গবেষণার ক্ষেত্রে বাজেট বাড়ালে শেকৃবি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে এবং শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় জায়গা করে নিতে সক্ষম হবে।

এগ্রিবিজনেস  অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগে  মাস্টার্সে শিক্ষার্থী ও শেকৃবি ডিবেটিং সোসাইটির  সাবেক সভাপতি এম এম কাইয়ুম কাফি।

যুগোপযোগী দক্ষতা অর্জনে শিক্ষার্থীরা এখনো পিছিয়ে আছে, পাঠ্যক্রম আধুনিকায়ন ও দক্ষতা উন্নয়ন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগে স্বচ্ছ নীতিমালার অভাব, পানির ঘাটতি ও ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মান নিয়ে সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে। বাজেটের অর্থের সঠিক ব্যবহার, গবেষণায় আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমেই জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা বাস্তবায়ন করে বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা সম্ভব।

এগ্রিবিজনেস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অনুষদের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তর ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী ও শেকৃবি ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিবা সুলতানা বৃষ্টি।

জুলাই বিপ্লবের পর শেকৃবিতে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হলো মত প্রকাশের স্বাধীনতা বেড়ে যাওয়া। এখন ভালো-খারাপ সব বিষয়ে ওপেনলি আলোচনা করা যায়। গত এক বছরে ছাত্রজীবনে কিছুটা উন্নতি হয়েছে- মিডসিস্টেম চালু হওয়ায় পরীক্ষার সংখ্যা কমেছে, যদিও আরও পরিবর্তন দরকার। একাডেমিকে ল্যাবখাতা লিখানোর প্রবণতা কমেছে, তবে ক্লাসরুমের সাউন্ড সিস্টেম ও প্রজেক্টরের দিকে আরও জোরালো নজর দেওয়া উচিত। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক খানিকটা উন্নতি হয়েছে। প্রশাসনের ক্ষেত্রেও চোখে পড়ার মতো পরিবর্তন এসেছে। এখন সরাসরি ন্যায্য দাবি জানানো যায় এবং সমালোচনা করা যায়। শিক্ষার্থী হয়রানি নেই বললেই চলে।

তবে শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে প্রশাসন পুরোপুরি সফল হয়নি- অনেক কিছু সহজে পাওয়া গেলেও অনেক কিছু এখনো পাওয়া যায়নি। বড় পরিবর্তনের জন্য আরও সময় দরকার। অবকাঠামো ও সুবিধার দিক থেকে চোখে পড়ার মতো কোনো উন্নতি হয়নি। পরিবহন, হল, ক্যাফেটেরিয়া, লাইব্রেরি- কোনো ক্ষেত্রেই তেমন উন্নতি নেই।

এখনো গৎবাঁধা সিস্টেম থেকে বের হতে না পারাটাই সবচেয়ে হতাশাজনক। ভবিষ্যতের জন্য আমার প্রত্যাশা হলো ভালোমানের সাউন্ড সিস্টেম ও প্রজেক্টরসহ আধুনিক ক্লাসরুম, পর্যাপ্ত ল্যাব ফ্যাসিলিটিজ এবং সব ফ্যাকাল্টির প্রতি সমান দৃষ্টিভঙ্গি। আর জুলাইয়ের চেতনা বাস্তবায়ন করতে হলে আগে আমাদের জুলাইয়ের উদ্দেশ্য ও আত্মত্যাগকে ধারণ করতে হবে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে সবকিছুতে পরিবর্তন আনতে হবে।

অ্যানিম্যাল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের সেশন ১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ও শেকৃবি ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফাহমিদা বৃষ্টি।

শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে দূরত্ব অনেকটা কমেছে। এখন যে কোনো শিক্ষার্থী চাইলে ভিসি, প্রো-ভিসি বা ট্রেজারারের সঙ্গে দেখা করতে পারে এবং তারা শিক্ষার্থীদের কথা গুরুত্ব সহকারে শোনেন। একাডেমিক চাপও কিছুটা হালকা হয়েছে। আগে প্রতি সেমিস্টারে দুটি সিটি পরীক্ষা দিতে হতো, এখন সেটি একটি পরীক্ষায় সীমিত হওয়ায় অবসর সময়ে আমরা বিভিন্ন স্কিল ডেভেলপ করার সুযোগ পাচ্ছি। তবে ক্লাস, ল্যাব ও রিসার্চ সুবিধায় তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি; সবকিছু এখনো গতানুগতিক ধারায় চলছে। এখনকার প্রশাসনকে আগের তুলনায় শিক্ষার্থী-বান্ধব মনে হলেও প্রশাসনকে যদি দুই ভাগে ভাগ করি- শিক্ষক ও কর্মকর্তারা, তাহলে শিক্ষকরা (ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারার, স্টুডেন্ট অ্যাডভাইজার) বেশ আন্তরিক, কিন্তু প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের আচরণ এখনো অনেকটা অপেশাদারসুলভ। অফিসে পাওয়া যায় না, কাজের দীর্ঘসূত্রিতা ও ভোগান্তি শিক্ষার্থীদের নিত্যসঙ্গী হয়ে আছে।

শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে প্রশাসনকে শতভাগ সফল বলা না গেলেও আমার মনেহয় তারা পাশ নম্বর পেয়ে যাবে। তবে এখনো ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মান ও পরিবেশ উন্নয়ন, লাইব্রেরিকে আধুনিকায়ন এবং হলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ দ্রুত সমাধানের প্রয়োজন রয়েছে। নতুন সুবিধা বলতে হলে রিডিং রুমে ফ্রি ওয়াইফাই চালু করা হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের কাজে আসছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য যোগ্য নেতৃত্ব অবশ্যই দরকার, তবে সেটি যেন কিছু নিয়মকানুন ও সীমার মধ্যে থাকে। আগামী এক বছরের মধ্যে আমি চাইব পুরনো বাণিজ্য মেলার মাঠ, যা বর্তমানে গবেষণা মাঠ হিসেবে পরিচিত, সেটি পুরোপুরি শেকৃবির আওতায় আসুক এবং সেখানে শিক্ষার্থীদের জন্য আরও গবেষণার সুযোগ তৈরি হোক। প্রতিটি ফ্যাকাল্টির শিক্ষার্থীর জন্য বাধ্যতামূলক পেইড ইন্টার্নশিপ চালু হওয়া উচিত।

জুলাই আন্দোলন ছিল দীর্ঘদিনের বঞ্চনা, অত্যাচার ও বাকস্বাধীনতা হরণের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিবাদ। তাই এই আন্দোলনের চেতনা বাস্তবায়নের জন্য নতুন কোনো ফ্যাসিস্ট প্রবণতার সুযোগ বন্ধ করতে হবে। প্রথমেই শিক্ষার্থীদের জন্য নিরপেক্ষ একটি প্ল্যাটফর্ম দরকার- যা সম্ভব ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে। সেখানে প্রত্যক্ষ ভোটে প্রতিনিধি নির্বাচন হবে এবং সেই প্রতিনিধিদেরও জবাবদিহিতার মধ্যে থাকতে হবে।

কৃষি অনুষদের ২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী মো ইরমান হোসেন ইমন।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!