শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২৫, ০৯:৪১ পিএম

লালমনিরহাটে মামলা বাড়লেও কমছে না মাদক কারবার

কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২৫, ০৯:৪১ পিএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

দফায় দফায় অভিযান এবং মামলা দেওয়ার পরও লালমনিরহাটের সীমান্ত গ্রামগুলোতে মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না প্রশাসন। ছোট একটি ইউনিয়নে শতাধিক বড় বড় মাদক কারবারি রয়েছে। এক-একজনের বিরুদ্ধে ১৪-১৫টি মামলা রয়েছে। ব্যবসায়ীর তালিকায় ইউপি সদস্যদের নামও রয়েছে।

জানা গেছে, ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলায় ভারতীয় সীমান্ত রয়েছে। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে চোরাচালান এবং মাদকের পরিস্থিতি বেশ ভয়াবহ। সবচেয়ে গুরুতর অবস্থা কালীগঞ্জ উপজেলার গোড়ল ও চন্দ্রপুর ইউনিয়নে। এটি কালীগঞ্জ থানার কেন্দ্র থেকে কিছুটা দূরে। তাই ২০২১ সালে গোড়ল ইউনিয়নে একটি তদন্ত কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়।

বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে সীমান্ত গ্রামগুলোতে গড়ে উঠেছে মাদকের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। মাদক পাচারের জন্য নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে এসব এলাকা। মাদকের মধ্যে রয়েছে ফেন্সিডিল, ট্যাপেন্টা, গাঁজা, ইয়াবা, ভারতীয় মদ এবং স্কাপ। গোড়ল তদন্ত কেন্দ্র গড়ে তোলা হলেও আওয়ামী লীগের তদবিরে পুলিশ তখন কার্যক্রমে সফল হয়নি। তবে আওয়ামী লীগের পতনের পর চোরাচালান, মাদক ও অপরাধ দমন কার্যক্রমে গোড়ল তদন্ত কেন্দ্র কঠোর অবস্থানে থাকায় মাদক কারবারিরা চাপে পড়ে। গোড়ল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের কার্যক্রমের প্রথম দুই বছরে যা অর্জন করেছে, তার দ্বিগুণেরও বেশি সফলতা দেখা গেছে গত এক বছরে।

পুলিশের তথ্যমতে, গোড়ল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নুরল আমিন বাদশার নামে ১৪টি, তার স্ত্রী স্বপ্নার নামে দুইটি এবং একমাত্র ছেলে শাহীনের নামে দুইটি মাদক মামলা রয়েছে। বাদশার ভাই এমদাদুল হকের নামে দুইটি এবং আতিকুল ইসলামের নামে পাঁচটি মামলা রয়েছে। তারা কয়েকবার গ্রেপ্তারও হয়েছে। মামলার চার্জশিটও দাখিল হয়েছে। বাদশার ভাই এরশাদ ব্যবসা করলেও হাতেনাতে আটক না করতে পারায় মামলা দেওয়া যায়নি। ২০২২ সালে ‘ইউপি সদস্য বাদশার বাড়িতে ফেন্সিডিলের বার’ শিরোনামে ভিডিওসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

গোড়ল ইউনিয়নের আলোচিত মাদক কারবারিদের মধ্যে মোফা মিয়ার নামে দুইটি, দুলাল ওরফে ঘুগরি দুলালের সাতটি, রহিম বাদশা চারটি, নান্নু মিয়ার নামে চারটি মামলা বিচারাধীন। সাবেক ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম, মতিন, হযরত বেলাল হোসেন বুড়া, মিন্টু হুজুর, লিমন, রুবেল, মালগড়ার মজিবরের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক, মৃত জব্বারের ছেলে সাইদুল, দুলালের ছেলে শরিফুল মাদক বড় ডিলার হলেও অনেকের বিরুদ্ধে মামলা নেই।

শুধুমাত্র গোড়ল ইউনিয়নে শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী এবং খুচরা বিক্রেতা রয়েছে। মাদক পাচার ও বিক্রি করে শূন্য থেকে কোটিপতি হয়েছেন এসব এলাকার ব্যবসায়ীরা, করেছেন আলিশান বাড়ি, দামি গাড়ি ও জমি।

মাদক কারবারের কারণে এসব গ্রাম মাদকের গ্রামে পরিণত হয়েছে। এসব গ্রামে কেউ আত্মীয়তা করতে চায় না। গ্রামের নাম শুনে অনেক ছেলে-মেয়ের বিয়ে ভেঙেছে। স্থানীয়রা যুবসমাজ রক্ষা এবং মাদক নির্মূলে প্রশাসনের অভিযান জোরদার করার আহ্বান জানাচ্ছেন। এ ভয়াবহ চিত্র শুধুমাত্র কালীগঞ্জ উপজেলায় নয়, গোটা জেলার সীমান্ত গ্রামগুলোতেও একই।

কৃষক তমিজ উদ্দিন বলেন, ‘মাদক ব্যবসায়ীরা সীমান্ত এলাকার ফসল নষ্ট করে রাতের আঁধারে পাচার করে নিয়ে যায়। শীতকালে মাদকসহ শত শত গরুও পাচার হবে। এতে শুধু যুবসমাজ নয়, ফসলও নষ্ট হচ্ছে।’

স্থানীয় অরন্য স্কুল এন্ড কলেজের নির্বাহী পরিচালক আনজুরুল হক সরকার মিন্টু বলেন, ‘গুটি কয়েক মাদক ব্যবসায়ীর কারণে এলাকার শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। শিক্ষার্থীরাও মাদকের দিকে ঝুঁকছে। গ্রামগুলোর নামের সঙ্গে মাদকের ট্যাগ পড়ায় অনেকের বিয়ে ভেঙেছে।’

গোড়ল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নুরল আমিন বাদশা বলেন, ‘এখানে সবাই মাদকের ব্যবসা করে।’

গোড়ল তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই মোস্তাকিন বলেন, ‘যোগদানের এক বছরে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ ৭০ জনকে ৬৮টি মামলায় গ্রেপ্তার করেছি। অধিকাংশের অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল হয়েছে। মাদকের সঙ্গে আপস না করায় বিভিন্নভাবে আমাকে হেনস্থা করার চেষ্টা চালাচ্ছে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা।’

কালীগঞ্জ থানা ওসি জাকির হোসেন বলেন, ‘মাদক নিয়ন্ত্রণে অভিযান চলবে। সীমান্তের গ্রামে মাদকের ট্যাগ রোধে অভিযান জোরদার করা হচ্ছে। অভিযান স্তব্ধ করতে মাদক ব্যবসায়ীদের কোনো চক্রান্তই সফল হবে না। আমরা সিনিয়র অফিসারের নির্দেশে অভিযান অব্যাহত রেখেছি।’

Link copied!