নেত্রকোনায় চাঁদা না দেওয়ায় সাজিদা আক্তার (৩৩) নামে এক গৃহবধূকে মারধর করে আহত করেছে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। পরে তারা বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এ ঘটনায় সাজিদা দ্রুত বিচার আইনে আদালতে মামলা করেছেন।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নেত্রকোনা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ওয়াসিম কুমার দাস বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ভুক্তভোগী সাজিদা আক্তার জেলা সদরের মেদনি ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের শামীম মিয়ার স্ত্রী। শামীম মিয়া দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে কর্মরত।
অভিযুক্তরা হলেন- একই গ্রামের সেকান্দর আলী (৫০), তার ভাই রুক্কু মিয়া (৫৫), সেকান্দরের ছেলে উজ্জ্বল মিয়া (২৮), রুক্কু মিয়ার ছেলে তরিকুল ইসলাম (২৭) ও মোমেন মিয়া (৩৫), আলম মিয়া (৪০), পিয়াস (২৮) এবং হিমেল মিয়া (২২)।
এসআই ওয়াসিম কুমার দাস বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে মারধর ও বাড়িঘর ভাঙচুরের সত্যতা পাওয়া গেছে। আহত সাজিদা চিকিৎসা নিয়েছেন—সেই চিকিৎসার কাগজ সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। তদন্ত শেষ করে দ্রুতই প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।’
এর আগে, ৩০ অক্টোবর চাঁদা না পেয়ে সেকান্দর আলী ও তার লোকজন সাজিদাকে মারধর করে এবং তার বাড়িতে হামলা ও লুটপাট চালায়। পরে ২ নভেম্বর সাজিদা বাদী হয়ে আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন।
সম্প্রতি সাজিদাকে পেটানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। ভিডিওতে দেখা যায়—ঘরের সামনে সাজিদাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে মারধর করা হচ্ছে এবং পরে তাকে খালে ফেলে আবারও পেটানো হচ্ছে।
মামলার বিবরণে উল্লেখ আছে, ভুক্তভোগী পরিবার প্রায় ৩০ বছর ধরে নিশ্চিন্তপুর এলাকায় সরকারি বেড়িবাঁধের পাশে অস্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। অভিযুক্ত সেকান্দর আলী ও তার পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে সাজিদার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল। টাকা না দিলে ঘরবাড়ি সরিয়ে ফেলতে বলেন তারা। ৩০ অক্টোবর সকালে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তারা সাজিদার ঘর ও দোকানে হামলা চালায়। ক্যাশবাক্স, আলমারি, ট্রাংকসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও দোকানের মালামাল লুট করে—যার মূল্য প্রায় সাত লাখ টাকা বলে দাবি করেছেন সাজিদা।
অভিযোগে আরও বলা হয়, হামলার সময় সেকান্দর আলী লোহার রড দিয়ে আঘাত করলে সাজিদার ডান হাত ভেঙে যায়। পরে বঁটি দিয়ে গলা কাটার চেষ্টা করে তাকে পানিতে ফেলে দেন। তার ছেলে ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে। চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা অস্ত্র দেখিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে পালিয়ে যায় এবং মামলা করলে হত্যার হুমকি দেয়।
ভুক্তভোগী সাজিদা আক্তার বলেন, ‘আমাদের নিজের কোনো জমি নেই। বেড়িবাঁধের পাশে বহু বছর ধরে ঘর করে থাকছি। সেকান্দররা আমাদের এখান থেকে তুলে দিতে চায়। তারা দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করছিল। স্বামী বিদেশে বলে আমাকে অসহায় ভেবে পিটিয়েছে, সব লুট করে নিয়েছে। দোকান, টয়লেট, ঘর—সব ভেঙে দিয়েছে ইচ্ছেমতো।’


সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন