ঢাকা শুক্রবার, ০১ আগস্ট, ২০২৫

গ্রাহকদের কোটি টাকা নিয়ে ‘আত্মগোপনে’ ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের কর্মকর্তা

বরিশাল ব্যুরো
প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২৫, ০৭:৩৭ পিএম
ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের শাখা ও আত্মগোপনে যাওয়া কর্মকর্তা নাইম হোসেন। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

বরিশালের সদর উপজেলার কাগাশুরা বাজার এলাকায় ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

নাইম হোসেন নামের ওই কর্মকর্তা দুই শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ব্যাংকে জমা না দিয়ে ‘আত্মগোপনে’ চলে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, নাইম হোসেন দীর্ঘদিন ধরে কাগাশুরা বাজার এজেন্ট ব্যাংকিং শাখায় দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি গ্রাহকদের কাছ থেকে নিয়মিত আমানত ও বিদ্যুৎ বিলের টাকা সংগ্রহ করতেন।

কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তিনি গ্রাহকদের নামে কোনো ব্যাংক হিসাব খোলেননি এবং টাকাগুলো ব্যক্তিগতভাবে রেখে দিয়েছেন। প্রতারণার মাধ্যমে তিনি প্রায় এক কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

গত এক সপ্তাহ ধরে নাইম হোসেনের মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে এবং তার অবস্থান সম্পর্কে কেউ কিছু জানে না। ফলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন ভুক্তভোগীরা। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা কাগাশুরা বাজারের ব্যাংক অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেন এবং বিক্ষোভ করেন।

মো. আমিনুল ইসলাম নামে এক ভুক্তভোগী রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘নাইম হোসেনের মাধ্যমে একটি অ্যাকাউন্ট খুলি এবং সেখানে ৫০ হাজার টাকা জমা দিই। পরে জানতে পারি আমার নামে কোনো অ্যাকাউন্ট খোলা হয়নি।’

পঞ্চাশোর্ধ্ব গ্রাহক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘মেয়ের বিয়ের জন্য এক লাখ টাকা জমা দিয়েছিলাম। এখন শুনছি কোনো অ্যাকাউন্টই খোলা হয়নি।’

এ ঘটনায় অন্যান্য গ্রাহকদের মধ্যেও ব্যাপক আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। অতীতে বরিশালে একাধিক এনজিওর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ থাকলেও একটি স্বীকৃত বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তা এ ধরনের প্রতারণায় জড়ানো প্রথম বড় ঘটনা।

স্থানীয়রা জানান, নাইম হোসেন বরিশালের চরবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা। তার খোঁজে গ্রাহকেরা গত কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন স্থানে গিয়েছেন, এমনকি প্রধান শাখায় যোগাযোগ করেও কোনো আশ্বাস পাননি।

এ বিষয়ে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের বরিশাল সদর উপজেলার ইনচার্জ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আত্মগোপনে থাকা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তবে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়া প্রসঙ্গে কোনো আশ্বস্তিকরণ বক্তব্য তিনি দিতে পারেননি।

অন্যদিকে, এই ঘটনায় ব্যাংকের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে এজেন্ট শাখায় এমন প্রতারণা কীভাবে চলল, তা নিয়েই রয়েছে সংশয়।

বিকেল পর্যন্ত বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউনিয়া থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দেননি। থানার ওসি নাজমুল নিশাত জানান, এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকেরা দ্রুত তদন্ত ও অভিযুক্ত কর্মকর্তার গ্রেপ্তারের পাশাপাশি সরকারের প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।