ঢাকা সোমবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৫

শিবির না করায় ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা জামায়াত প্রার্থী বাবার

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০২৫, ০৯:০১ এএম
বরিশাল-১ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী কামরুল ইসলাম খান ও তার ছেলে আরাফাত বিল্লাহ খান । ছবি- সংগৃহীত

শিবির না করা এবং জনসভায় জামায়াতের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ায় নিজের ছেলে আরাফাত বিল্লাহ খানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দিয়েছেন বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী কামরুল ইসলাম খান। বুধবার রাতে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ধারাবাহিক দুই স্ট্যাটাসে তিনি এ ঘোষণা দেন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

ঘটনাটি ঘটেছে বরিশালের গৌরনদী উপজেলায়। জানা যায়, গত ৭ নভেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ‘বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে গৌরনদী পাইলট স্কুল মাঠে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য দেন আরাফাত বিল্লাহ খান। সেখানে বরিশাল-১ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জহির উদ্দিন স্বপনসহ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বক্তব্যে আরাফাত বিল্লাহ বলেন, আমার বাবা জামায়াত থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। আপনাদের কেউ যদি বলে, আপনি যে বিমানে উঠেছেন সেই বিমানের পাইলট ইউটিউব দেখে বিমান চালানো শিখেছেন, তাহলে আপনারা কি সেই বিমানে ভ্রমণ করবেন? জনসভা থেকে এ সময় সমস্বরে ‘না’ বলতে শোনা যায়।

সঙ্গে সঙ্গে আরাফাত বিল্লাহ খান আবার বলেন, ‘কেন করবেন না? কারণ তার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, কোনো এক্সপেরিয়েন্স নেই।’

এই বক্তব্যের পর আরাফাত বিল্লাহের বাবা কামরুল ইসলাম খান ফেসবুকে দুটি স্ট্যাটাস দেন। প্রথমটিতে লেখেন, ‘আমাকে পিতা পরিচয় দিয়ে গতকাল ৭ নভেম্বর ২০২৫ তারিখ গৌরনদী পাইলট স্কুল মাঠে বিএনপির পক্ষ নিয়ে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে তাতে কেউ হতাশ হবেন না। আমি আজ চিকিৎসা শেষে ঢাকা থেকে বাসায় ফিরে দুই উপজেলার আমির, আসন পরিচালক ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দদেরকে নিয়ে জরুরি বৈঠক করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব ইনশাআল্লাহ।’

দ্বিতীয় স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘আমার বড় ছেলে আরাফাতকে শিবির করার জন্য অনেক বুঝিয়েছি, অনেক চাপ সৃষ্টি করেছি। আমি ব্যর্থ হয়েছি। তাকে দিয়ে শিবির করাতে পারিনি। আমি একজন ব্যর্থ পিতা। আমার বড় ছেলের সঙ্গে আমি সম্পর্ক ছিন্ন করলাম জামায়াতে ইসলামীর নমিনির বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ার জন্য।’

কামরুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলের দেওয়া বক্তব্যে আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষের পথে। ছেলেটার বক্তৃতায় সব এলোমেলো হয়ে গেছে। বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি। আমার পরিচয় দেওয়ার পরেই সে কথাটা বলেছে। এই কথাটা সে না বললেও পারতো।

কামরুল ইসলাম স্বীকার করেন, আমার ছেলে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সে কেন্দ্রীয় কমিটির পদেও ছিল। আমি জামায়াতের রাজনীতি করি। এজন্য আমার ছেলেও চাপে রয়েছে। কারণ এই খবর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও জানেন। আমার ইচ্ছা ছিল ছেলে শিবির করবে। আমার মতো জামায়াতের নেতা হবেন। কিন্তু তা না করে বিরোধী পক্ষের রাজনীতি করে আমাকে রাজনৈতিক ও মানসিক চাপে ফেলেছে।

বাবা ও ছেলের দুই দলের রাজনীতির বিষয়ে পারিবারিকভাবেও বিপাকে আছেন বলে জানান আরাফাত বিল্লাহ খান।

তিনি বলেন, আমি আমার পার্টির প্রতি দায়িত্ববান। বাবা জামায়াত করেন এটা তার পছন্দের বিষয়, আমি বিএনপি করি এটা আমার পছন্দের বিষয়। বাংলাদেশ একটা গণতান্ত্রিক দেশ, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে আমাদের এই সুযোগটুকু দেওয়া উচিত।

আরাফাত বলেন, আমি ছাত্রদল-যুবদল করে অবশেষে বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত। খুব সচেতনভাবেই এই সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ব্যক্তিগতভাবে আমি খুব উদারচিত্তের মানুষ। অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি বিদ্বেষ আমি করি না। বাবা নমিনেশন পাওয়ার পর থেকেই জামায়াত-শিবিরের যারা আছেন, তারা নানাভাবে আমাকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করছেন। স্বাভাবিকভাবে নেওয়ার মত নয়।