ঢাকা সোমবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৫

মেয়ে হত্যার বিচারের দাবিতে কাফনের কাপড় জড়িয়ে বাবার অনশন

পিরোজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০২৫, ১০:২৩ এএম
কাফনের কাপড় গায়ে জড়িয়ে অনশনে মোশারফ হোসেন। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় নিজ কন্যা লামিয়া আক্তার মুন্নির (১৫) হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে আমরণ অনশনে বসছেন পিতা মোশারফ হোসেন হাওলাদার।

রোববার (৯ নভেম্বর) বেলা ১১টায় মঠবাড়িয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে কাফনের কাপড় গায়ে জড়িয়ে অনশনে বসেন তিনি। দুপুর ২টার দিকে মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিনিধি হিসেবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ রাইসুল ইসলাম আইনগত সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে জুস পান করিয়ে মোশারফ হোসেনের অনশন ভাঙান।

এর আগে মোশারফ হোসেন একই দাবিতে গত ৪ নভেম্বর বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেন।

মোশারফ হোসেন মঠবাড়িয়া পৌর শহরের সবুজ নগর এলাকার চানমিয়া হাওলাদারের ছেলে।

মোশারফ হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, ২০২৩ সালের ২০ মার্চ ১০ম শ্রেণিপড়ুয়া তার মেয়ে লামিয়া আক্তার মুন্নি নৃশংসভাবে খুন হয়।

তিনি জানান, তার স্ত্রী সাহিদা আক্তার সোনি সুন্দরী হাওয়ায় তৎকালীন মঠবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও টিকিটিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রিপন জমাদ্দার লোলুপ দৃষ্টি দেয়। একপর্যায়ে তার স্ত্রীকে দিয়ে তাকে ডিভোর্স দিয়ে তার ঘরে এক ধরনের রক্ষিতা হিসেবে রেখে দেয়। পরবর্তীতে তার স্ত্রী দাউদখালি ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলামের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। এই পরকীয়া বৈধ করতে তার মেয়ে মুন্নিকে শহিদুল মেম্বারের ছেলে হাসানের সাথে কথিত বিয়ে দেয়। মোশারফ হোসেনের দাবি, তার মেয়ের কোনো বিয়ে হয়নি। এক সময় সাহিদা আক্তার ও শহিদুল মেম্বার এলাকা থেকে পালিয়েও যায়।

তিনি ধারণা করছেন, সাহিদা আক্তার ও শহিদুল মেম্বারের অবৈধ কর্মকাণ্ড তার মেয়ে মুন্নি দেখে ফেলায় নৃশংসভাবে তাকে খুন করা হয়।

তৎকালীন সময়ে শহিদুল মেম্বারের বাড়ির লোকজন তার মেয়ের লাশ বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফেলে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে তিনি মেয়ে খুনের বিষয়টি ১৮ ঘণ্টা পর জানতে পেরে মেয়ের লাশ ফ্রিজ থেকে শনাক্ত করে ফ্রিজ বিল ১১শ টাকা পরিশোধ করেন। তার নিজ খরচে লাশের ময়নাতদন্ত করেন। সেখানেও সে সময় আওয়ামী লীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান রিপন জমাদ্দার প্রভাব খাটিয়ে তৎকালীন প্রশাসনের মাধ্যমে রিপোর্ট পরিবর্তন করেন।

তিনি ক্ষোভের সাথে আরও বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান রিপন, শহিদুল মেম্বার, শহিদুল মেম্বারের ছেলে হাসান ও নিহত মুন্নির মা সাহিদা আক্তার সোনি এ হত্যাকাণ্ডের সাথে সরাসরি জড়িত। কিন্তু চেয়ারম্যান রিপন জমাদ্দার নিজেদের রক্ষা করার জন্য সেই সাহিদাকে বাদী বানিয়ে শহিদুল মেম্বারসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে দায়সারা একটি মামলা করেন। যা পরবর্তীতে অর্থের বিনিময় মীমাংসা হয়ে যায়। আমি বিজ্ঞ আদালতে আমার মেয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সবাইকে জড়িয়ে একটি মামলা করি। কিন্তু চেয়ারম্যান রিপনের প্রভাবে আমি এলাকায় আসতে পারিনি এবং মামলা পরিচালনাও করতে পারিনি। যে কারণে মামলাটি নষ্ট হয়ে যায়।

মোশারফ বলেন, আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই। আমার মামলাটি পুনরায় চালু করে তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের শাস্তি চাই। অনশন চলাকালে মোশারফ হোসেনের বক্তব্য শুনে অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

মঠবাড়িয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ রাইসুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি সত্যিই হৃদয়বিদারক। আমরা মোশারফ হোসেনের মেয়ের বিচার পেতে সর্বাত্মক আইনি সহযোগিতা করব।