ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানা এলাকায় কৃষি খামার সমবায় সমিতির নাম ব্যবহার করে ৩৬৫ ভূমিহীন পরিবারের জমি দখলের পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী দুই ব্যক্তি বজলুর রহমান ও ফারুক আখনের বিরুদ্ধে।
এতে ভূমিহীন পরিবারগুলো তাদের দখলকৃত জমি হারানোর আশঙ্কা এবং মানসিক উদ্বেগে রয়েছে। নদীভাঙনে ভিটেমাটি হারানো এসব পরিবার চলতি মৌসুমে আমন আবাদ করতে গেলে একাধিকবার বাধা, মামলার হুমকি ও হামলার শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন।
ভূমিহীন পরিবারগুলোর অভিযোগ, জমি না থাকায় ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ চর আইচা মৌজায় ৩৬৫ জনের নামে পর্যায়ক্রমে সরকারের কাছে জমি বন্দোবস্তের আবেদন করা হয়। এর ভিত্তিতে প্রতিটি পরিবারের নামে দেড় একর করে জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। কিন্তু বজলুর রহমান ও ফারুক আখন নানা প্রভাব ও কৌশল প্রয়োগ করে ভূমিহীনদের নামে খতিয়ান ও কাবালত (কবিলিয়ত) থাকা সত্ত্বেও জমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
ভূমিহীনদের দাবি, তারা দীর্ঘদিন ধরে সরকারি খতিয়ান ও বিডিএস জরিপ অনুযায়ী জমি ভোগদখলে আছেন এবং নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করছেন। কিন্তু সম্প্রতি ওই চক্র ভুয়া খতিয়ান তৈরি করে ওই জমি কৃষক সমবায় সমিতির সদস্যদের বলে দাবি করছেন।
তারা আরও অভিযোগ করেন, বজলুর রহমান ও ফারুক আখনের পেছনে একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক গোষ্ঠীর আশীর্বাদ রয়েছে, যার ফলে তারা বারবার দখলচেষ্টা করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন।
ভূমিহীন কৃষক মো. আবু তাহের বলেন, ‘আমি অন্যের বাড়িতে আশ্রিত ছিলাম। পরে সরকার থেকে বন্দোবস্ত পাওয়া জমিতে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করছি। ১৯৯৯ সালে আমার ও স্ত্রীর নামে দেড় একর জমি বন্দোবস্ত পাই। সেই থেকে প্রায় ২৬ বছর ধরে ভোগদখলে আছি। ২০১৫ সালে লালমোহনের বজলুর রহমান নামের এক ভূমিদস্যু কৃষক সমিতির নাম ব্যবহার করে আমাদের জমি দখলের চেষ্টা চালান। তখন বাধা দিলে তিনি ব্যর্থ হন। তবে বর্তমানে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছেন তারা। গত শনিবার জমিতে আমনের চারা রোপণ করতে গেলে বাধা দেয় ওই চক্র।’
ভূমিহীন কৃষক আবু বকর জানান, ‘বজলুর রহমান ও ফারুক আখনের নেতৃত্বে একটি চক্র আমাদের জমি দখলের পাঁয়তারা করছে। তারা ভুয়া খতিয়ান দেখিয়ে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। চলতি আমন মৌসুমে জমিতে চাষ করতে গেলে তারা আবার বাধা দেয়।’
অভিযুক্ত বজলুর রহমান দাবি করেন, ‘১৯৮১ সালে কৃষি খামার সমিতির ২৭০৫ জন কৃষকের নামে ওই জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। কিন্তু তারা ভোগদখলে যেতে পারেননি।’
দক্ষিণ আইচা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এরশাদুল হক ভূঁইয়া জানান, ‘জমিগুলো নিয়ে দুই পক্ষই দাবি করছে। বিষয়টি সমাধানের জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে আদালতে মামলা থাকায় এখনো চূড়ান্তভাবে সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়নি।’
আপনার মতামত লিখুন :