ঢাকা সোমবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৫

উদাসীনতার মহাসড়ক এখন মৃত্যুর ফাঁদ!

উজ্জ্বল চক্রবর্ত্তী শিশির, দুপচাঁচিয়া (বগুড়া)
প্রকাশিত: নভেম্বর ৯, ২০২৫, ০৯:৪৭ পিএম
দুপচাঁচিয়া থানাধীন মহাসড়ক। ছবি- সংগৃহীত

বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়কের মাঝামাঝি দুপচাঁচিয়া থানাধীন তিশিগাড়ি এলাকা থেকে থানা বাসস্ট্যান্ড ব্রিজ পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে অতিরিক্ত ৩ ফুট সম্প্রসারিত রাস্তা এখন যেন মৃত্যুর ফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষে ঘটছে প্রাণহানি।

সরেজমিনে দেখা যায়, মহাসড়কের দুই পাশে সম্প্রসারিত অংশ মূল সড়ক থেকে প্রায় ৬ ইঞ্চি নিচু। এতে করে ছোট যানবাহন যেমন, অটোভ্যান, রিকশা, মোটরসাইকেল ইত্যাদি মূল সড়কে উঠতে গিয়ে প্রায়ই বাস, ট্রাক ও অন্যান্য ভারী যানবাহনের সঙ্গে সংঘর্ষে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়ক বিভাগের উদাসীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণেই এই দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে।

গেল ৭ নভেম্বর তিশিগাড়ি এলাকায় বাস-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে আহত হন জুলাই যোদ্ধা মিল্টন আহমেদ লাদেন (২২), পরে তিনি মারা যান। এর আগে এ বছরের ১২ মার্চ ট্রাক ও অটোভ্যানের সংঘর্ষে মা ও মেয়ে নিহত হন। এ ছাড়া ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ট্রাকের সংঘর্ষে দুপচাঁচিয়া পেপার মিল সংলগ্ন এলাকায় নিহত হন তিনজন।

তার ১৯ দিন আগে ২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় মোটরসাইকেল ও ট্রাকের সংঘর্ষে প্রাণ হারান তিন বন্ধু। তারা হলেন, আল হাসান (১৯), নেওয়াজ (২০) ও মিঠুন (১৯)। গেল বছরের ২০২৪ সালের ২৬ জুন জে.কে. কলেজ গেট সংলগ্ন ট্রাক-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত হন দুই কলেজ শিক্ষার্থী।

এর আগে একই বছরের ২৫ জানুয়ারি দুপচাঁচিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বাস ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত হন জাহিদ হাসান (২২), আহত হন আরও একজন। তারও আগে, ২০১৯ সালের ১৩ জানুয়ারি তিশিগাড়ি মোড়ে একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছে ধাক্কা দিলে নিহত হন বাসের হেল্পার সুমন মিয়া (২৭)।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দুপচাঁচিয়া উপজেলার তিনটি বাসস্ট্যান্ড এলাকাজুড়ে সড়কের দুই পাশে স্পিড ব্রেকার স্থাপনের দাবি বহুবার জানানো হলেও কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে দুর্ঘটনার সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

তারা জানান, দুপচাঁচিয়া থানা বাসস্ট্যান্ড থেকে সিও অফিস ও তিশিগাড়ি পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ভাঁজ হয়ে গেছে। এসব স্থানে ভারী যানবাহনের পাশাপাশি ছোট যান চলাচল করায় প্রায়ই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

দুপচাঁচিয়া এলাকার সাধারণ মানুষ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেন, সড়ক বিভাগ ও প্রশাসন যদি দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, তবে দুপচাঁচিয়া মহাসড়কটি আরও ভয়াবহ দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়বে।

তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ ও স্থায়ী সমাধান আশা করছেন, যেন আর কোনো প্রাণ ঝরে না এই মহাসড়কে।