ইরানের ভেতরে দীর্ঘদিন ধরে গুপ্তচর নেটওয়ার্ক গড়ে তুলে গত শুক্রবার তেহরানে নজিরবিহীন হামলা চালায় ইসরায়েল। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে—এই হামলার নেপথ্যে ছিল ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও মাঠপর্যায়ের উপস্থিতি।
সিএনএন জানিয়েছে, ইসরায়েলের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সহায়তায় মোসাদ ইরানে বিপুলসংখ্যক অস্ত্র পাচার করে এবং সেগুলো ব্যবহার করে দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেতর থেকেই অকার্যকর করে তোলে।
মোসাদ এজেন্টরা ইরানের ভেতরে ড্রোন ওড়ানোর ঘাঁটি গড়ে তোলেন। সেখান থেকে পরে তেহরানের আশপাশের ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ও প্রতিরক্ষা স্থাপনায় হামলা চালানো হয়। এ ছাড়া ইরানে পাচার করা হয় নির্ভুল নিশানায় আঘাত হানতে সক্ষম অস্ত্র, যা পরে ব্যবহার করা হয় বিমান হামলার সময় একযোগে সক্রিয় করতে।
এর ফলে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী প্রায় ২০০টি যুদ্ধবিমান নিয়ে ইরানের ওপর ১০০টির বেশি হামলা চালাতে সক্ষম হয় এবং সফলভাবে ফিরে যায়।
এই হামলায় নিহত হন ইরানের শীর্ষ পারমাণবিক বিজ্ঞানী ফেরেইদুন আব্বাসি, যিনি অতীতে মোসাদের এক হামলা থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। মোসাদের ভেতরের তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই ইসরায়েলি বাহিনী বিজ্ঞানী ও সামরিক কমান্ডারদের ওপর নির্ভুল হামলা চালায়।
সিএনএনের খবরে আরও বলা হয়, এই অভিযানে তেহরানসহ ইরানের অভ্যন্তরে মোতায়েন করা হয় মোসাদের বিশেষ কমান্ডো ইউনিট, যারা ইরানি গোয়েন্দা সংস্থার নজর এড়িয়ে একাধিক প্রতিরক্ষা স্থাপনায় সরাসরি হামলা চালায়।
ইসরায়েলের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তার ভাষ্য, মোসাদের এই অভিযান কয়েক বছরের প্রস্তুতির ফসল, যার মধ্যে ছিল অস্ত্র পাচার, তথ্য সংগ্রহ এবং শত্রুপক্ষের গভীরে ঢুকে নিজেদের ঘাঁটি স্থাপন।
গাজা যুদ্ধ শুরুর পর হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়াকে ইসরায়েল তেহরানের মধ্যেই হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে। সিএনএনের বরাতে বলা হয়, হানিয়া যে গেস্ট হাউজে থাকতেন, সেখানে আগেভাগেই বিস্ফোরক স্থাপন করা হয় এবং ঠিক সময়ে রিমোট কন্ট্রোলে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
সিএনএনের প্রতিবেদনে উঠে আসে, গত এক দশকে ইরানে একের পর এক রহস্যজনক হামলা ও হত্যার পেছনে রয়েছে মোসাদ। ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে তেহরানে পাঁচজন পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করা হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়েছে দূরনিয়ন্ত্রিত মেশিনগান বা বোমা।
২০১৮ সালে মোসাদ ইরানের পারমাণবিক আর্কাইভ চুরি করে নিয়ে আসে ইসরায়েলে এবং এক টেলিভিশন ভাষণে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু তা প্রকাশ্যে তুলে ধরেন।
২০২০ সালে আরও একটি বড় হামলায় ইরানের শীর্ষ পারমাণবিক বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহকে হত্যা করা হয়।
ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক হলি ড্যাগ্রেস বলেন, ‘মোসাদ বহু বছর ধরে ইরানকে তাদের খেলার মাঠ বানিয়ে রেখেছে। এই ছায়াযুদ্ধে শুরু থেকেই তারা এগিয়ে আছে।’
সাবেক মোসাদ কর্মকর্তা রাম বেন বারাক বলেন, ‘ইরানের শাসনব্যবস্থার ওপর জনগণের ক্ষোভ ও অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা তাদের কাজকে সহজ করে দেয়।’
আপনার মতামত লিখুন :