মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসান আরিফ

প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০২৫, ০২:৩০ এএম

অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাবের আশংকা

হাসান আরিফ

প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০২৫, ০২:৩০ এএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে মধ্যপ্রাচ্য অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছে সরকার। অভ্যন্তরীণ বাজার স্বাভাবিক রাখা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং ডলারের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে চায় সরকার। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে করণীয় নির্ধারণে গতকাল অর্থমন্ত্রণালয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।

অর্থবিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র রূপালী বাংলাদেশকে বলেছেন, সরকার কোনোভাবেই অভ্যন্তরীণ বাজার অস্থিতিশীল করতে চায় না। এমনকি প্রস্তাবিত বাজেটে বেঁধে দেওয়া সীমার মধ্যেই মূল্যস্ফীতি নামিয়ে আনতে চায়। এজন্য প্রয়োজনে ভর্তুকি বাড়াতেও প্রস্তুত সরকার। যদিও বর্তমানে জ্বালানি তেলে লাভজনক অবস্থানে রয়েছে সরকার।

তারপরও প্রয়োজনে এই খাতেও ভর্তুকি দিতে দ্বিধা করা হবে না। তা ছাড়া যেসব পণ্য আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আনা হচ্ছে তার মধ্যে সার ও কৃষি উপকরণ সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে রয়েছে। এই খাতে কোনো প্রকার প্রভাব পরতে দেওয়া হবে না। এ ছাড়া গ্যাস, চাল, ডাল, ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য খাতও সরকারের বিবেচনায় রাখা হবে যাতে বাজারে নেতিবাচক প্রভান না পরে।

সূত্রটি আরও জানিয়েছে, সরকার এনমিতেই অপ্রয়োজনীয় উন্নয়ন প্রকল্প কাটছাঁট করেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই কাটছাঁট আরও বাড়ানো হতে পারে। যা ব্যয় সংকোচন নীতিকে আরও কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে উৎপাদনশীল পণ্যের জন্য কাঁচামাল এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে সম্প্রসারণ নীতি বজায় রাখা হবে। 

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, যুদ্ধের কারণে তেলের বাজারে যে প্রভাব পরেছে তা সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। যদিও ট্রাম্প ট্যারিফের পর তেলের দাম ৬০ ডলারে নেমে এসেছিল। এখন পর্যন্ত যে বৃদ্ধি হয়েছে তার প্রভাব আমাদের বা আন্তর্জাতিক বাজারে পড়েনি। তবে যুদ্ধ ছড়িয়ে পরলে বা হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে তা নেতিবাচক হবে। যদিও ইরান তাদের স্বার্থেই এই প্রণালি বন্ধ নাও করতে পারে।

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দাম, জ্বালানি তেলের দাম ও আন্তর্জাতিক সুদ যদি স্থিতিশীল থাকে তাহলে আমাদের কোনো সমস্যা হবে না।

জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম জানুয়ারিতে ৮৫ ডলার ছিল। যা বর্তমানে ৭৫ ডলারে নেমে এসেছে। যদিও যুদ্ধ শুরুর পর তা ১৪ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল। তবে এক দিন পর তা কমে ৭ শতাংশে এসেছে। যদিও এবার যুদ্ধের ব্যাপকতা অনেক বেশি তারপরও বাজার নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।

আরও জানা গেছে, যেকোনো যুদ্ধ শুরুর পর ডলারের দাম বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা গেছে। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম হয়েছে। যুদ্ধু শুরুর পর ডলারের দাম কমেছে। যদিও ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পরই এই প্রবণতা শুরু হয়েছে। ডলার ইনডেক্স ১০০ পয়েন্টে থাকলে তা স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়। বর্তমানে তা রয়েছে ৯৭ পয়েন্টে। কিছু দিন আগেও ছিল ১০৪ থেকে ১০৫ শতাংশে। যা ১১৪ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল। জানুয়ারিতে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর ডলারের দাম পরতে থাকে। তখন ৯৮ থেকে ১০২ পয়েন্টের মধ্যে উঠানামা করেছে।

উল্লেখ্য, ডলার ১০০ পয়েন্টকে স্বাভাবিক ধরা হয়। ১০০ পয়েন্ট থেকে বেশি হলে ডলারের দাম বাড়ে আর ১০০ পয়েন্ট থেকে কমলে ডলারের দাম কমে।

দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকা নানা নেতিবাচক প্রভাবে স্থিমিত হয়ে পড়া বিশ্ব অর্থনীতি ২০২৪ সালের জুন মাসের পর থেকে কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। বড় অর্থনীতির দেশগুলোতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হ্রাস ছাড়াই মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করেছে, ফলস্বরূপ, অনেক দেশ এখন ধীরে ধীরে শিথিল মুদ্রানীতির দিকে ঝুঁকছে। 

তবে, নীতিগত অনিশ্চয়তা, বাণিজ্য বিভক্তির প্রসার, প্রত্যাশার তুলনায় ধীরগতিতে মূল্যস্ফীতির হ্রাস, মার্কিন-চীন বাণিজ্য উত্তেজনার বৃদ্ধি এবং প্রধান অর্থনৈতিক বাজারগুলোতে মন্থরগতির ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নতুন ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এর পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক অতিরিক্ত শুল্ক আরওপের সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তা আরও বাড়িয়েছে এবং পুনরায় বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা তৈরি করেছে।

কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ দ্রুত ঘুরে দাঁড়ালেও, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ব্যালেন্স অব পেমেন্ট ঘাটতি এবং আর্থিক খাতের দুর্বলতা এখনো বড় উদ্বেগের বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে। ২০২৪ সালে দক্ষিণ এশিয়ার বেশির ভাগ দেশে মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্য হারে কমে এলেও, বাংলাদেশে তা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি রয়ে গেছে। ২০২৩ ও ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে কঠোর মুদ্রানীতি গ্রহণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সময়ক্ষেপণের কারণে মূল্যস্ফীতি দীর্ঘসময় ধরে ১০ শতাংশের কাছাকাছি বা তার উপরে অবস্থান করেছে। 

তবে, ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে নীতি সুদহার ১০ শতাংশে উন্নীত করে তা স্থির রাখার পর থেকে মূল্যস্ফীতি অবশেষে হ্রাস পেতে শুরু করেছে। তবুও, বৈশ্বিক পর্যায়ে বিভিন্ন অঞ্চলে চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে বাংলাদেশকে আগামী অর্থবছরেও সতর্কতা অবলম্বন করে অগ্রসর হতে হবে বলে অর্থ বিভাগ সতর্ক করেছে। এই অবস্থায় ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ সে শঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

মধ্যমেয়াদে সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি

বাংলাদেশ সরকার বৈশ্বিক পরিবর্তন ও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় নিয়ে স্বল্পমেয়াদে মাঝারি প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং মধ্যমেয়াদে টেকসই প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এ জন্য সরকার একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও বাস্তবমুখী সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি অনুসরণ করছে, যা স্থিতিশীলতা বজায় রেখে সন্তোষজনক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে।

বর্তমানে দেশের প্রধান চ্যালেঞ্জ উচ্চ মূল্যস্ফীতি। এ পরিস্থিতিতে সংকোচনমূলক মুদ্রা ও রাজস্বনীতি গ্রহণ করা হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর কর অব্যাহতি ও আমদানি শুল্ক হ্রাসের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। একইসঙ্গে বাজারে প্রতিযোগিতা ও তদারকি জোরদার করা হয়েছে। কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ ও আমদানির পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীকে রক্ষায় ভর্তুকি এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সম্প্রসারণ করা হয়েছে। বাজেটে অপ্রয়োজনীয় উন্নয়ন প্রকল্প স্থগিত ও ব্যয় যৌক্তিকীকরণের পাশাপাশি রাজস্ব আহরণ বাড়াতে করনীতি সংস্কার ও একটি দীর্ঘমেয়াদি কৌশল প্রণয়ন করা হয়েছে।

বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরির জন্য নীতি সংস্কার, অবকাঠামো উন্নয়ন ও ঋণপ্রবাহ গতিশীল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বহিঃখাত স্থিতিশীল রাখতে রপ্তানি বাজার ও পণ্যের বৈচিত্রকরণ, আমদানিতে সতর্কতা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমন্বয়ে বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও পণ্যমূল্য পরিস্থিতি

২০২৪ সালে মূল্যস্ফীতি কমে প্রকৃত আয় বাড়ায় বৈশ্বিক বাণিজ্যে গতি আসে, যা ২০২৫-২৬ সালেও বজায় থাকার আশা ছিল। তবে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কের কারণে সেই প্রত্যাশা কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এতে চীনের রপ্তানি কিছু অঞ্চলে বাড়লেও মার্কিন বাজারে হ্রাস পেতে পারে। এর ফলে বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়ার মতো শ্রমনির্ভর দেশের জন্য নতুন রপ্তানি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

২০২৪ সালে পণ্যমূল্য হ্রাস পেতে শুরু করে, যা ২০২৫-২৬ সালেও অব্যাহত থাকতে পারে। ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম মে ২০২৫-এ ৬৫ ডলারে নেমে আসে। তবে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি শ্লথ হলে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় কমে টাকার মান দুর্বল হতে পারে, যা মূল্যস্ফীতির ইতিবাচক প্রভাবকে খণ্ডিত করতে পারে।

সুদহার ও বিনিময় হার

২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধে অনেক দেশ নীতি সুদহার কমানো শুরু করেছে। ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার ৪ শতাংশে নামিয়ে আনার পূর্বাভাস দিয়েছে। একইভাবে ভারত, যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশও সুদহার কমিয়েছে। তবে শুল্ক যুদ্ধ শুরু হলে অর্থনীতি শ্লথ হয়ে আবার সুদহার কমানোর সুযোগ তৈরি হতে পারে।

২০২৫ সালের এপ্রিল নাগাদ মার্কিন ডলার দুর্বল হয়ে পড়েছে, যা আমদানির খরচ ও ঋণ পরিশোধের চাপ কমাতে পারে। তবে মার্কিন শুল্ক ও মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ পরিস্থিতি বিনিময় হারে নতুন চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

এদিকে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান ‘যুদ্ধ’ পরিস্থিতি বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে বলে উদ্বেগ জানিয়েছে দেশের তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।

এ প্রসঙ্গে সংগঠনটির নবনির্বাচিত সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেছেন, ইরান-ইসরায়েল ‘যুদ্ধ’ বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, এ সংঘাতের ফলে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যেতে পারে। যা উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দেবে এবং এর সরাসরি প্রভাব পড়বে তৈরি পোশাক খাতে।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!