ইসরায়েলের হাইফা ও তেল আবিব শহরে নতুন করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। এ হামলায় চারজন নিহত এবং ৮৭ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া বেশ কিছু ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম প্রেস টিভি এবং আধা-সরকারি মেহের নিউজ এজেন্সিও ইসরায়েলে হামলার খবর নিশ্চিত করেছে।
দ্য গার্ডিয়ান জানায়, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন তেল আবিব ও হাইফা শহরে আঘাত হেনেছে। এতে চলতি সপ্তাহের জি-৭ সম্মেলনে বিশ্বনেতাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে যে, এই সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যকে আরও বড় যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
ইসরায়েলের জরুরি সেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম (এমডিএ) জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের চারটি স্থানে ইরানি হামলায় চারজন নিহত এবং ৮৭ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে দুজন নারী ও দুজন পুরুষ রয়েছেন, যাদের সবার বয়স আনুমানিক ৭০ বছর।
পেতাহ টিকভা শহরের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, একটি আবাসিক ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলে কংক্রিটের দেয়াল পুড়ে যায়, জানালাগুলো উড়ে যায় এবং বেশ কয়েকটি অ্যাপার্টমেন্ট মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
উত্তরাঞ্চলীয় বন্দরনগরী হাইফায় হামলার পর সেখানে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান চলছে। স্থানীয় একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে এবং সেখানে প্রায় ৩০ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন অঞ্চলে সতর্কতামূলক সাইরেন বেজে ওঠে। জনগণকে বোমা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাইরে না যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন দাবি করেছে, তারা ইসরায়েলের উদ্দেশে অন্তত ১০০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। তারা বলছে, ইসরায়েলের শুক্রবারের আকস্মিক হামলার প্রতিশোধ নিতেই এ হামলা চালানো হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক আহ্বানে তারা কর্ণপাত করছে না।
এর আগে ইসরায়েল ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে সরাসরি হামলা চালায়। সংক্ষিপ্ত ঘোষণায় বলা হয়, ‘রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম বর্তমানে ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্যবস্তু।’
এই হামলার ফলে কিছু সময়ের জন্য টেলিভিশনের সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। পরে সম্প্রচার পুনরায় চালু করা হয়। ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান নিউজ নেটওয়ার্ক (আইআরআইএনএন) জানায়, হামলার সময় ভবনে সরাসরি সম্প্রচার চলছিল।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, আগুনে পুড়তে থাকা ভবনটির সামনে এক সাংবাদিক বলছেন, ‘আমরা নিশ্চিত নই—এই হামলায় কতজন সহকর্মী নিহত হয়েছেন।’
টেলিভিশনের সম্প্রচার বিভাগের প্রধান পেমান জেবেলি রক্তাক্ত একটি কাগজ দেখিয়ে বলেন, ‘আমরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করব।’
ইরানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামলায় কয়েকজন কর্মী নিহত হয়েছেন। তবে নির্দিষ্ট সংখ্যা ও পরিচয় জানানো হয়নি।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এই হামলার দায় স্বীকার করেছেন এবং জানান, ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবন সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছিল। হামলার আগেই তেহরানের বাসিন্দাদের ভবনটি থেকে সরে যেতে বলা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, ‘ইরানের স্বৈরশাসক যেখানেই থাকুক না কেন, তাকে আঘাত করা হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :