শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


কামরুজ্জামান সেলিম, চুয়াডাঙ্গা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪, ০৭:২৫ পিএম

চুয়াডাঙ্গার দুই পশু হাটের রাজস্ব ফাঁকির বিপুল টাকা নেতাদের পকেটে

কামরুজ্জামান সেলিম, চুয়াডাঙ্গা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪, ০৭:২৫ পিএম

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

টানা ১৪ বছর ধরে আওয়ামী লীগ নেতাদের দখলে ছিল চুয়াডাঙ্গার সব থেকে বড় দুটি পশুহাট ডুগডুগি ও শিয়ালমারী। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি বছরে টেন্ডার হওয়ার কথা থাকলেও তা একবারও হয়নি। কৌশলে উচ্চ আদলতের রিটের বলে বছরের পর বছর রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে প্রভাবশালী ওই মহলটি। এতে প্রায় শতকোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে সরকার। খাস বন্দোবস্তের পাশাপাশি হাট উদ্ধারে সমাধানের পথ খুঁজছে স্থানীয় প্রশাসন।

বর্তমানে মৌখিকভাবে হাট দুটি চালাচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ দিতো ২ লাখ, প্রতি হাটে খাস কালেকশন করে বিএনপি দিচ্ছে ৫ লাখ টকা।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গাসহ আশপাশ অঞ্চলের মধ্যে সবথেকে বড় পশুহাট দামুড়হুদা উপজেলার ডুগডুগি ও জীবননগর উপজেলার শিয়ালমারী হাট। সপ্তাহের প্রতি একদিনে এ হাটে লেনদেন হয় লাখ লাখ টাকা। কোরবানী ঈদের আগে লেনদেনের পরিমান ঠেকে কোটির ঘরে। অথচ এ দুটি হাটে ডাক হয়নি না টানা ১৪ বছর। 

অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের স্থানীয় সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য আলী আজগর টগর ও তার লোকজন হাটটি নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। হাট দখলে রাখা নেতাদের পকেট ভারি হলেও রাজস্ব হারিয়েছে সরকার।

হাটের অন্য ইজারাদারদের দাবি, ২০১০ সালেই এ দুটি হাটের দর উঠেছিল প্রায় তিন কোটি। কিন্তু তখন থেকেই আর দরপত্র আহ্বান হয় না। এতদিনে প্রায় শতকোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হয়েছে। আওয়ামী পন্থি ইজারাদাররা আদালতকে প্রভাবিত করে হাট কুক্ষিগত করে রেখেছে। ১৭ বছর আগে শিয়ালমারী ও ডুগডুগি হাটের ডাকে ইজারা পেয়েছিলেন এমপি টগরের ঘনিষ্ঠসহচর আওয়ামী লীগ নেতা সোহরাব হোসেন ও ফরহাদ হোসেন। নির্ধারিত সময়র শেষ হলে তারা হাইকোর্টে লোকসান হয়েছে জানিয়ে কিছুদিন সময় চেয়ে রিট করেন। রিটে ৬ মাস অতিরিক্ত সময় পান ইজারাদাররা। রিটের পরস্থগিতাদেশ এবং শুরু হয় খাস কালেকশন। খাস কালেকশনের নিয়মেই এতো বছর চলছে। বর্তমানে হাট দুটি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বিএনপি নেতারা। প্রতি হাটে শিয়ালমারীর জন্য ৪ লাখ ৮৬ হাজার টাকা ও ডুগডুগির জন্য ৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা সরকারকে রাজস্ব দেয়া হচ্ছে। বছরে ৫২টি করে দুটি হাটে মোট ১০৪টি হাট বসে।

জীবননগর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি ও উথলী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, সবাই মিলে হাট দুটি পরিচালনা করা হতো। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমাদের সবাইকে বাদ দিয়ে দিলো। ১৪ বছরে এই দুটি হাটে কত টাকা লস হয়েছে, তা ক্যালকুলেটরে ধরবে না। আগে তারা মাত্র ২ লাখ টাকা দিতো। এখন আমরা ৫ লাখ টাকা দিচ্ছি। বছরে ৫২টি হাট। ২০১০ সালে ডুগডুগি হাটের ডাক হয় ছিলো ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ও শিয়ালমারি হাটের ডাক হয় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। তখন যদি এতোটাকা থাকে, তাহলে এখন কত হতে পারে। টাকার মূল্যমানও যদি হিসেব করা হয়, তাহলে বোঝেন।

তিনি আরও বলেন, ৩০ বছর আমরা ইজারাদার হিসেবে হাট চালাতাম। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর আমাদেরকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো। আওয়ামী লীগ আসার পর ১৭ বছর ৮ মাস হয়ে গেলো এই হাটের কোনো ডাক হয়নি। আমি মনে করি, যদি চুয়াডাঙ্গার হাটগুলোর ইজারা ঠিক হয়, তাহলে চুয়াডাঙ্গার অন্য কিছু লাগে না। বিপুল পরিমাণে রাজস্ব এখান থেকেই আসবে। হাটটি পড়েই ছিলো, আমরা প্রশাসনকে বলেছিলাম। আপাতত সরকারের রাজস্ব দেয়ার শর্তে মৌখিকভাবে হাটটি আমরা চালাচ্ছি।‘

দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম তনু বলেন, স্বৈরাচারী হাসিনার পালানোর পর হাটদুটো পড়ে ছিলো। এমনিতে সরকার ১৭ বছর বিপুল রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছিলো। তাই হাটের সাথে পূর্বেও যারা ছিলো, তারাই পুনরায় হাটটি চালাচ্ছে। খাস কালেকশন করে প্রতি হাটে ৫ লাখ টাকা রাজস্ব জমা দেয়া হচ্ছে।

এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, চুয়াডাঙ্গার কেবল দুটি হাট নয়। আরও কয়েকটি হাট বাজার নিয়ে মামলা চলমান আছে। সরকারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং বিজ্ঞ আদালত থেকে যে জবাব চাওয়া হয়েছে, নির্ধারিত পদ্ধতিতে সেই জবাব আমরা পাঠিয়ে দিয়েছে। মামলা চলমান থাকার কারণে স্টে অর্ডার (স্থগিতাদেশ) দেয়া আছে। বিজ্ঞ আদালতে এই মামলাগুলো নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিয়মিত টেন্ডার বা ইজারা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। সরকারের যে বিধান, কোনো কারণে যদি ইজারা দেয়া সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে খাস কালেকশনের বিধান আছে। জেলা পর্যায়ের একটি কমিটি আছে। দীর্ঘদিন ধরে, এই খাস কালেকশন কার্যক্রম
চালানো একটু চ্যালেঞ্জিং বিষয়। স্থানীয় পক্ষ-বিপক্ষ নানা ধরনের গ্রুপিং তৈরি হয়। এটি যদি নিয়মিত ইজারার মধ্যে আনা যায়, তাহলে বিপুল পরিমাণে রাজস্ব রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়া সম্ভব। এখন আমরা যথাযর্থ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিজ্ঞ আদালতে জানাচ্ছি, সরকারের স্বার্থে এটির আশু নিষ্পত্তি প্রয়োজন। যখনি যে জবাব, যে কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে, আমরা তা পাঠিয়েছি। আমরা আশাবাদী যতদ্রুত এই মামলাগুলো আদালতে নিষ্পত্তি হবে, রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বিপুল রাজস্বের
পাশাপাশি স্থানীয় বিবাদ কমে যাবে।

আরবি/জেডআর

Shera Lather
Link copied!