ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে বিএনপির সম্মেলনে ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভাই ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল আমিনের গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ সময় তার বহনকৃত প্রাইভেট কার ভাঙচুর করা হয়। হামলায় অন্তত চারজন আহত হন।
শনিবার (১২ জুলাই) সন্ধ্যায় বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সমির উদ্দীন স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। উপজেলা বিএনপির কাউন্সিলের ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং একপর্যায়ে সংঘর্ষে রূপ নেয়।
উপজেলা নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলের ভোট শেষে ফলাফল গণনায় গড়িমসি ও কারচুপির অভিযোগ ওঠে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। দীর্ঘ সময়েও আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা না করে কেন্দ্র ত্যাগের চেষ্টা করলে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে কেন্দ্রের বাইরে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। পরে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
নেতাকর্মীরা জানান, শনিবার দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলে। ভোট গণনার সময় নেতাকর্মীরা প্রার্থীদের পক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন। কিন্তু সন্ধ্যা ৭টার পরও ফলাফল ঘোষণা না করায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর লাঠিসোটা হাতে নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেন।
তাদের অভিযোগ, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা মৌখিকভাবে জানান সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট সৈয়দ আলম এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ড. টিএম মাহবুবুর রহমান নির্বাচিত হয়েছেন। তবু উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে বিলম্ব করা হয়। একপর্যায়ে নেতাকর্মীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকেন।

মোট ৪৯৩ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এতে সভাপতি পদে ছাতা প্রতীকে অ্যাডভোকেট সৈয়দ আলম ২৪৪ ভোট এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আবু হায়াত নুরুন্নবী (চেয়ার প্রতীক) ২৪০ ভোট পান। ৪ ভোটের ব্যবধানে ফলাফলের ঘোষণায় গড়িমসি শুরু হয়।
রাত ৮টার দিকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল আমিন ফলাফল ঘোষণা করতে কেন্দ্রে আসেন। ফলাফল ঘোষণা করে ফেরার সময় তার গাড়িবহরে ধাওয়া দেয় উত্তেজিত কর্মীরা। বহরে উঠতে গেলে তাকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয় এবং একটি প্রাইভেট কার ভাঙচুর করা হয়। অন্য নেতাকর্মীরা তাকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে পারলেও অন্তত চারজন আহত হন।
পরে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। নির্বাচনে সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট সৈয়দ আলম, সাধারণ সম্পাদক পদে ড. টিএম মাহবুবুর রহমান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আব্দুস সবুর নির্বাচিত হন।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পলাশ কুমার দেবনাথ বলেন, ‘উপজেলা বিএনপির কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে কিছুটা উত্তেজনা তৈরি হয়। এতে কয়েকজন আহত হয়েছেন এবং জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের গাড়িবহরে হামলা হয়েছে। তবে রাতের অন্ধকারে হামলাকারীদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।’
বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি শওকত আলী সরকার বলেন, ‘ফলাফল ঘোষণা করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় মির্জা ফয়সাল আমিনের ওপর হামলার চেষ্টা চালানো হয় এবং তার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :