বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৫, ০২:৫০ এএম

পিআরআইয়ের সেমিনারে বক্তারা

বাংলাদেশ ব্যাংককে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৫, ০২:৫০ এএম

বাংলাদেশ ব্যাংককে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়

বিগত সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যাদের দৃশ্যমান ব্যবসা নেই, তাদের ঋণ দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি পরিবারের কাছে ব্যাংকগুলো তুলে দেওয়া হয়েছে। ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা অপরিহার্যতা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় আলোচকেরা এসব মন্তব্য করেন। তারা আরও বলেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে সুদহার ও ডলারের দাম ঠিক করা হয়েছে। ডলারের ওপর চাপ কমাতে দাম ধরে রাখা হয়েছে, অন্যদিকে ১৮ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে গেছে। এতে খেলাপি ঋণ ৪ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এসব স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে বাংলাদেশের ব্যাংকের শুধু স্বাধীনতা দিলেই হবে না, রাজনৈতিক সদিচ্ছাও থাকতে হবে। এটা না হলে সেই স্বাধীনতা কার্যকর হবে না। শেয়ারবাজার, কর ব্যবস্থাপনা উন্নত করার তাগিদ দেন বক্তারা। তারা মনে করেন, তা না হলে পুরো চাপ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর গিয়ে পড়বে।

রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে গতকাল মঙ্গলবার সকালে এই আলোচনা করে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)। পিআরআইয়ের ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এবং চেয়ারম্যান জাইদি সাত্তার সমাপনী বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘২০০৩ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় অর্থনৈতিক সংস্কার করেছিল, তার সুফল দেশ এখনো পাচ্ছে। তবে ওই সব উদ্যোগকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়নি। ফলে পূর্ণ সুফল মেলেনি। দেশের সমস্যা সমাধানে প্রধান উদ্যোগের একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা। আমাদের সময়ে (বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে) ব্যাংকিং বিভাগ বিলুপ্ত করা হয়েছিল। আমরা ক্ষমতায় গেলে আবার তা বিলুপ্ত করা হবে।’ আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা কখনো বাংলাদেশ ব্যাংক ও শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থায় রাজনৈতিক নিয়োগ দিইনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন নয়, সংস্থাটিকে স্বাধীনতা দিতে হবে।’ আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, অর্থনীতির সবকিছু অটোমেশন করে ফেলতে হবে। তাহলে দুর্নীতি কমে আসবে। ক্যাশলেস লেনদেনই হলো এখন ভবিষ্যৎ।

টাকা ছাপানো থেকে বের হয়ে আসতে হবে জানিয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিমান কেনার জন্য সরকার টাকা দেবে, এটা হতে পারে না। বিমান বন্ড ছেড়ে টাকা তুলতে পারে। সরকারের টাকা খরচ হওয়া উচিত সমাজের উন্নয়নে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সরকার খরচ করতে পারে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে পিআরআইয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ হলো দ্রব্যমূল্যে স্থিতিশীলতা ধরে রাখা, প্রবৃদ্ধিকে সহায়তার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং আর্থিক খাতে সুশাসন ও উন্নয়নে ভূমিকা রাখা। বাজারব্যবস্থা যদি মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশ্বাসযোগ্য বা স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে মূল্যস্ফীতি কমে আসে। বাংলাদেশ ব্যাংক কখনো প্রকৃত স্বাধীনতা পায়নি। আমলাদের গভর্নর করা হয়েছে। ব্যাংকগুলোকে কয়েকটি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে সুদহার ও ডলারের দাম ঠিক হয়েছে। ওই সময় দেশ থেকে ১৮ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়েছে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা দিতে হবে। সেটা দিতে হবে মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও নিয়ন্ত্রণ করার স্বাধীনতা।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যাংক খাতের সব সূচক খারাপ হয়ে পড়েছে। আগে থেকেই আমরা তা জানতাম। অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর বিষয়টি আনুষ্ঠানিক হয়েছে। প্রকৃত চেহারা বের হচ্ছে। এত দিন রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংককে ব্যবহার করা হয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা দিতে হবে। তার মতে, অর্থ মন্ত্রণালয়ে ব্যাংকিং বিভাগ বিলুপ্ত করে দিতে হবে। ব্যাংক খাতে দ্বৈত শাসন চলবে না। পাশাপাশি এ বিষয়ে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে। পরবর্তী সরকারকে তার স্বীকৃতি দিতে হবে। না হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা কার্যকর হবে না।

ফাহমিদা খাতুন আরও বলেন, আর্থিক খাত হলো পুরো অর্থনীতির প্রাণ। আর্থিক খাত যেখানে পৌঁছে গেছে, তা থেকে উদ্ধার না করলে অর্থনীতির গতি ফেরানো যাবে না। ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতিতে দেওয়া যাবে না।

অনুষ্ঠানে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসিম মঞ্জুর বলেন, ২০১৯ সাল থেকে আমরা ডলারের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে আসছিলাম। সেটা না করে ২০২২ সালে ৪১ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে, যার চাপ সবাইকে নিতে হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতির ধারাবাহিকতা থাকা জরুরি। ব্যাংকিং বিভাগকে অবশ্যই বন্ধ করে দিতে হবে। বিএনপির রাজনৈতিক এজেন্ডার মধ্যে এটা থাকা দরকার। নাসিম মঞ্জুর আরও বলেন, এখন যারা কর দেয় এবং ঋণ পরিশোধ করে, তাদের চাপ নিতে হচ্ছে। আইনের মাধ্যমে যত স্বাধীনতা দেওয়া হোক, কাকে গভর্নর করা হচ্ছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদের সময় আমরা ভালো পরিবেশ দেখেছি। আইনে যাই হোক, ব্যাংক খাতের উন্নয়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা বেশি জরুরি।

বস্ত্রকলের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ বলেন, ‘স্বাধীনতা দিলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জবাবদিহি থাকতে হবে। আগে গ্রাহক খেলাপি হতো, এখন ব্যাংক খেলাপি হয়ে পড়েছে। এসব ব্যাংকের লাইসেন্স বাংলাদেশ ব্যাংক দিয়েছিল, দেখভালের দায়িত্বও তাদের ছিল। তাদের জবাবদিহি হচ্ছে না। যারা দেশ থেকে পালিয়ে যায়নি, আমাদের মতো এমন গ্রাহকদের ওপর এর দায় আসছে।’ বহুজাতিক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের প্রধান ঝুঁকি কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক বলা হলে প্রকৃতপক্ষে তা-ই হওয়া উচিত। দেশের ব্যাংকগুলো এখন এমডি সংকটে পড়েছে। বহুজাতিক ব্যাংকের কেউ আসছেন না। কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক ঠিক করে বেতন কত হবে। এসব বিষয়ে নজর দেওয়া প্রয়োজন। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা কার্যকর হবে না জানিয়ে পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, আগে স্বজনতোষী পুঁজিবাদ নিয়ে কথা হতো। গত কয়েক বছরে যা অলিগার্কে রূপ নিল। তারা ব্যাংক খাতকে কুক্ষিগত করে ক্ষতিতে ফেলল। ২০০৭-০৮ সালে সবচেয়ে বড় সংস্কার হলো। জাতীয় পরিচয়পত্র দিলে বলা হলো কেউ কারও ভোট দিতে পারবে না। অথচ এরপর সবচেয়ে কলঙ্কিত ভোট হলো। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ আখতার হোসেন প্রমুখ।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!