বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের ইস্যু করা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বিদেশে সবচেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও থাইল্যান্ডে। আগে একসময় সবচেয়ে বেশি খরচ হতো ভারতে, কিন্তু ভিসা জটিলতায় তা ৫ নম্বরে নেমে এসেছে। আর ব্যাংকগুলোর ইস্যু করা ডেবিট কার্ড বিদেশে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে যুক্তরাজ্যে, প্রি-পেইড কার্ড বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। এই হিসাব গত আগস্ট মাসের; এটি শুধু দেশের বাইরে খরচের হিসাব। গত রোববার ক্রেডিট কার্ডে দেশে-বিদেশে লেনদেনসংক্রান্ত চলতি বছরের আগস্ট মাসের হালনাগাদ প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৫৬ ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের ক্রেডিট কার্ড সেবা দিয়ে থাকে, যাদের তথ্য নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিভাগ দেশের ক্রেডিট কার্ডের এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
প্রতিবেদনে দেশের অভ্যন্তরে ও বিদেশে বাংলাদেশের নাগরিকদের এবং দেশের ভেতরে বিদেশি নাগরিকদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশিরা বিদেশে ভ্রমণ ও কেনাকাটায় ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার আবার বাড়িয়েছেন। বিদেশে ভ্রমণ ও লেনদেনে বাংলাদেশি নাগরিকদের খরচের ধরন পরিবর্তন হচ্ছে। দেশ-বিদেশে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। তবে তুলনামূলকভাবে যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড ও সৌদি আরবে এই খাতে ব্যয় বাড়লেও ব্যাপক হারে কমেছে প্রতিবেশী দেশ ভারতে। একসময় বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডে খরচের শীর্ষে ছিল ভারত।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের আগস্ট মাসে বিদেশের মাটিতে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশিরা ৪৪৩ কোটি টাকা খরচ করেছেন। এই পরিমাণ আগের জুলাই মাসের তুলনায় ৭ দশমিক ৫ শতাংশ কম। জুলাই মাসে খরচ হয়েছে ৪৭৯ কোটি টাকা। প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের আগস্ট মাসে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিদেশে সবচেয়ে বেশি খরচ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে বাংলাদেশিরা খরচ করেছেন ৭৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশিরা থাইল্যান্ডে ৪৭ কোটি, যুক্তরাজ্যে ৪৬ কোটি, সিঙ্গাপুরে ৩৯ কোটি, ভারতে ৩১ কোটি, মালয়েশিয়ায় ২৯ কোটি, কানাডায় ২২ কোটি, নেদারল্যান্ডসে ২০ কোটি, সৌদি আরবে ১৫ কোটি, অস্ট্রেলিয়ায় ১৪ কোটি, আয়ারল্যান্ডে ১৪ কোটি, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে ১৩ কোটি এবং অন্যান্য দেশে ৬৯ কোটি টাকা খরচ করেছেন।
ক্রেডিট কার্ডের মধ্যে আগস্ট মাসে বিদেশে সবচেয়ে বেশি খরচ হয়েছে ভিসা কার্ড ব্যবহার করে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৭৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে ভিসা কার্ড ব্যবহার করে, ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ মাস্টারকার্ড এবং ১০ দশমিক ২৬ শতাংশ এমেক্স কার্ড ব্যবহার করা হয়েছে। এদিকে ক্রেডিট কার্ডে গত আগস্ট মাসে বিদেশে বাংলাদেশিরা সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করেছেন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে, টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৫৯ কোটি টাকা। এরপর ক্রেডিট কার্ডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবহার হয়েছে নগদ অর্থ উত্তোলন বাবদ ৫২ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এরপর ক্রেডিট কার্ডের তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যবহার হয়েছে পরিবহন খাতে, টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ২৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া পোশাক কেনা বাবদ ১২ কোটি, খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানে খরচ বাবাদ ১১ কোটি, ব্যবসা সেবায় ৬ কোটি, বিভিন্ন সেবা পরিশোধ বাবাদ ৫ কোটি এবং ওষুধ কেনা বাবদ ৪ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
এদিকে ডেবিট কার্ড দিয়ে গত আগস্ট মাসে দেশের বাইরে খরচ হয়েছে ৩৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যুক্তরাজ্যে খরচ হয়েছে ৮৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে ৩৮ কোটি, ভারতে ৩০ কোটি, আয়ারল্যান্ডে ৩০ কোটি, চীনে ২১ কোটি, সৌদি আরবে ১৯ কোটি, নেদারল্যান্ডসে ১৮ কোটি, মালয়েশিয়ায় ১৭ কোটি, থাইল্যান্ডে ১৪ কোটি, সিঙ্গাপুরে ১২ কোটি, অস্ট্রেলিয়ায় ১০ কোটি, কানাডায় ১০ এবং অন্যান্য দেশে ৪৭ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। প্রিপেইড কার্ড দিয়ে দেশের বাইরে খরচ হয়েছে ৫৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে খরচ হয়েছে ৭ কোটি, নেদারল্যান্ডসে ৬ কোটি, যুক্তরাজ্যে ৬ কোটি, আয়ারল্যান্ডে ৪ কোটি, ভারতে ৪ কোটি, সিঙ্গাপুরে ২ কোটি, মালয়েশিয়ায় ২ কোটি টাকা।
একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কার্ড বিভাগের প্রধান বলেন, ২০২৪ সালের আগস্টে ক্ষমতার পালাবদলের কারণে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়। এ জন্য সে সময় বিদেশে ভ্রমণ কম করেন বাংলাদেশিরা। এ ছাড়া বাংলাদেশিরা ভারতে ভ্রমণ কমালে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সেখানে লেনদেনও কমে আসে। এ জন্য বার্ষিক প্রবৃদ্ধির পরিমাণ বেশি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ডলারের সংকট নেই। ব্যাংকগুলোতে ডলার সরবরাহ আগের চেয়ে অনেক বেশি। বর্তমান সময়ের মতো ২০২৪ সালে ব্যাংকগুলোতে এত ডলার সরবরাহ ছিল না। তাই সে সময় নগদ কিংবা কার্ডেও ডলার সহজে পাওয়া যেত না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশি নাগরিকেরা ক্রেডিট কার্ড বা নগদ অর্থ বহনের মাধ্যমে প্রতি বছর বিদেশে ১২ হাজার ডলার পর্যন্ত ব্যয় করার অনুমতি পান।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে প্রচলিত ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা গত চার বছরে প্রায় ৬৪ শতাংশ বেড়েছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা ছিল ১৮ লাখের বেশি। চলতি বছরের আগস্টে তা বেড়ে ৩০ লাখের বেশি হয়েছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন