প্রখ্যাত কৌতুক অভিনেতা গোবর্ধন আসরানি মারা গেছেন। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ৮৪ বছর বয়সে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। সান্তাক্রুজ শ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।
১৯৪১ সালের ১ জানুয়ারি রাজস্থানের জয়পুরে জন্ম গোবর্ধন আসরানির। ছোটবেলা থেকেই নাটক ও অভিনয়ের প্রতি ছিল প্রবল টান। পড়াশোনা শেষ করে অল ইন্ডিয়া রেডিওতে ভয়েস আর্টিস্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন।
এরপর সাহিত্যের শিক্ষক কলাভাই ঠাক্কারের কাছে অভিনয়ের প্রশিক্ষণ নেন এবং ১৯৬২ সালে স্বপ্ন নিয়ে বড় পর্দায় নিজের জায়গা তৈরি করতে মুম্বাইয়ে পাড়ি জমান। সে সময়ই ভাগ্য চাকার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন পরিচালক হৃষিকেশ মুখার্জি। এই কিংবদন্তি পরিচালকের পরামর্শেই আসরানি ভর্তি হন পুণের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া (এফটিআইআই)-এ। ১৯৬৬ সালে সেখান থেকে উত্তীর্ণ হন তিনি।
তবে প্রথম দিকে সুযোগ খুব একটা আসছিল না। হাম কহাঁ জো রহে হ্যায়, হরে কাঁচ কি চুড়িয়াঁ, উমং ও সত্যকাম-এর মতো সিনেমাতে ছোট চরিত্রে অভিনয় করলেও আলোচনায় আসেননি। জীবিকা নির্বাহের জন্য তিনি এফটিআইআই-এ শিক্ষকতা শুরু করেন, যা পরে হয়ে ওঠে তার জীবনের বড় টার্নিং পয়েন্ট।
গুলজারের সুপারিশে হৃষিকেশ মুখার্জি তাকে ডাকেন তার নতুন সিনেমা গুড্ডি (১৯৭১)-এর জন্য। জয়া ভাদুড়ীকে নায়িকার চরিত্রে নেওয়ার জন্যই আসরানির সাহায্য করেছিলেন। আসরানিই জয়াকে তার সঙ্গে পরিচয় করান পরিচালকের সঙ্গে। এরপর দুজনেই একই সিনেমাতে সুযোগ পেয়েছিলেন। প্রথম সিনেমা গুড্ডিতে আসরানির অভিনয় দিয়ে দর্শকদের মন জয় করে নেয়। সিনেমাটি সাফল্যের মুখ দেখে, আর সেই সঙ্গে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ওঠে।
বলিউডে এক নতুন মুখের জন্ম যার নাম গোবর্ধন আসরানি। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বাবার্চি, নমক হারাম, চুপকে চুপকে, অভিমান, চলা মুরারি হিরো বননে, পতি পতœী ঔর ওহ, খুন পসিনা, আমদাবাদ নো রিকশাওয়ালো, একের পর এক সিনেমাতে তার অভিনয় মানুষকে হাসিয়েছে, ছুঁয়েছে, মুগ্ধ করেছে। তবে তার জীবনের সবচেয়ে বিখ্যাত চরিত্র নিঃসন্দেহে শোলের সেই হাস্যকর স্মরণীয় জেলারের ভূমিকাটি। সংলাপ, মুখভঙ্গি আর টাইমিং, সব মিলিয়ে তিনি গড়ে তুলেছিলেন এক অবিস্মরণীয় চরিত্র, যা আজও ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে অমর হয়ে আছে।
অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি পরিচালনা করেছেন ছয়টি চলচ্চিত্র। শেষবার তাকে পর্দায় দেখা গিয়েছিল ২০০৩ সালের কমেডি সিনেমা ‘নন স্টপ ধামাল’-এ। এক যুগের হাসির নায়ক, বলিউডের প্রিয় মুখ আসরানির প্রয়াণে চলচ্চিত্র জগৎ হারাল এক অনন্য প্রতিভাকে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন