চুয়াডাঙ্গায় টানা বৃষ্টিপাতের ফলে জেলার নিচু এলাকার গ্রামগুলোতে কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি জমে যাওয়ায় আউশ ও আমন ধান, বিভিন্ন ধরনের সবজি, পাট, কলা, পেঁপে, পেয়ারা, মাল্টা, ড্রাগনসহ নানা ফসল ক্ষতির মুখে পড়েছে। এতে জেলার হাজারো কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, মোট ৮৭২ হেক্টর জমির ফসল আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চাষিদের দাবি, এই ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকারও বেশি।
সদর উপজেলার হিজলগাড়ি গ্রামের কৃষক কবির হোসেন জানান, ‘টানা বৃষ্টির কারণে ধান কাটা যাচ্ছে না। লাউ, শসা, ধনেপাতার ক্ষেত পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গাছে ফুল আসলেও তা ঝরে যাচ্ছে, ফলে ফলন অনেক কমে যাবে।’
একই গ্রামের কৃষক খলিল হোসেন বলেন, ‘তিন বিঘা জমিতে পেঁপে বাগান করেছিলেন। কিন্তু অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে শেকড় আলগা হয়ে যাওয়ায় অনেক গাছ মাটিতে পড়ে গেছে। আরও দুই বিঘা জমির কাঁচামরিচ ক্ষেতও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গাছে ফুল থাকলেও তা পড়ে যাচ্ছে। জুলাইয়ের বৃষ্টির সঙ্গে মাঝেমধ্যে হওয়া ঝড়েও অনেক পেঁপে ও কলাগাছ গোড়া থেকে উপড়ে গেছে।’
জীবননগর উপজেলার উথলী গ্রামের অভিজ্ঞ কৃষক ধীরু চাষা বলেন, ‘৩০ বিঘা জমিতে ৪০ বছর ধরে চাষাবাদ করে আসছেন তিনি। এবার শীতকালীন ফুলকপি ও পাতাকপির বীজতলা তৈরি করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছেন। যারা আগেভাগে চারা তৈরি করেছিলেন, তারা বেশির ভাগই তা হারিয়েছেন। নতুন করে চারা তৈরি করলে চাষ বিলম্বিত হবে, খরচ বাড়বে, উৎপাদন কম হবে- সব মিলিয়ে কৃষকদের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে রয়েছে- ৪২ হেক্টর জমির আমন ধানের বীজতলা, ৯৮ হেক্টর জমির আমন ধান, ১৩২ হেক্টর জমির আউশ ধান, ১১০ হেক্টর জমির মরিচ, ৩১২ হেক্টর জমির বিভিন্ন সবজি, ৫৭ হেক্টর জমির কলা, ৩৭ হেক্টর জমির পেঁপে, ১৩ হেক্টর জমির চীনাবাদাম, ২০ হেক্টর জমির পেয়ারা, ২১ হেক্টর জমির মাল্টা, ৩০ হেক্টর জমির ড্রাগন।
তবে, এই তালিকায় পাট ও পান ফসলের কোনো ক্ষতির উল্লেখ নেই। অথচ কৃষকদের দাবি, এ দুটি ফসলেও যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে।
সদর উপজেলার তালতলা গ্রামের পানচাষি হাসেম আলী বলেন, ‘১ বিঘা জমিতে পান চাষ করেছেন। অতিবৃষ্টির কারণে পানির নিচে গাছের গোড়া পচে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৭০-৮০ হাজার টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন।’
শুধু তিনি নন, গ্রামের অধিকাংশ পানচাষিই একই অবস্থায় রয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান জানান, ‘গত বছর জুলাই মাসে জেলার মোট বৃষ্টিপাত ছিল ৮৫ মিলিমিটার, কিন্তু এবার জুলাইয়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১৭ মিলিমিটারে। এ ছাড়া চলতি আগস্ট মাসের প্রথম ৮ দিনেই বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৭০ মিলিমিটার।’
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, ‘আমনের জমিতে জমে থাকা পানি সরে গেলে সেখানে চারা রোপণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যদি দেরি হয়, তবে নাবি জাতের ধানের চারা রোপণ করা যেতে পারে। এ ছাড়া প্রয়োজনে ওই জমিতে আগাম রবিশস্যের চাষও সম্ভব।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন