সাগর যেন ক্রমেই আরও নিঃশব্দ হয়ে উঠছে। আবারও ভেসে এলো একটি নিথর দেহ—নামহীন, পরিচয়হীন, স্তব্ধ।
সোমবার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যার পর কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া চ্যানেলের পানিতে এ মরদেহটি ভাসতে দেখা যায়। তাৎক্ষণিকভাবে মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। বর্তমানে এটি কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা আছে।
তবে এই খবরেই থমকে গেছে নিখোঁজ অরিত্র হাসানের পরিবার। ২২ দিন ধরে নিখোঁজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী অরিত্র। পরিবারের মনে অজানা আতঙ্ক—এই মরদেহটি কি তাদের অরিত্র?
৮ জুলাই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের হিমছড়ি পয়েন্টে বন্ধুদের সঙ্গে গোসল করতে নামে অরিত্র। সেদিনই ঢেউয়ে তলিয়ে প্রাণ হারায় তার দুই বন্ধু সাদমান রহমান সাবাব ও আসিফ আহমেদ। দুজনের মরদেহ ফেরত আসে সমুদ্র থেকে, কিন্তু অরিত্র আজও নিখোঁজ।
হাসপাতাল মর্গ সূত্রে জানা গেছে, ভেসে আসা মরদেহটি একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের; মাথায় চুল নেই, বয়সও বেশি, দেহটির অবস্থান থেকে ধারণা করা হচ্ছে এটি দুই-তিন দিন আগের।
অরিত্রের পরিবার মরদেহটি দেখে নিশ্চিত করেছে—এটি তাদের সন্তান নয়। বয়স, শারীরিক গঠন ও মুখাবয়ব কিছুই মিলছে না।
তবু প্রতিটি অজ্ঞাত মরদেহের খবরে কেঁপে ওঠে অরিত্রের মা-বাবা। ‘সমুদ্র নাকি কিছু গচ্ছিত রাখে না, সব ফিরিয়ে দেয়। তবে আমার অরিত্র কেন ফিরছে না?’—কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন অরিত্রের মা।
প্রতিদিন তিনি তাকিয়ে থাকেন সাগরের দিকে, কোনো অলৌকিক প্রত্যাবর্তনের আশায়। তার চোখে এখনো ভাসে হাস্যোজ্জ্বল সেই মুখ, যে সেদিন সমুদ্রের দিকে ছুটে গিয়েছিল। সেই দিন থেকেই থেমে আছে সময়, স্তব্ধ হয়ে আছে তাদের জীবনের প্রতিটি সকাল-সন্ধ্যা।
‘প্রতিবার ঢেউয়ের শব্দে মনে হয়, এই বুঝি ছেলেটার খোঁজ মিলল... এখনো দরজায় কান পেতে থাকি, যদি কোনোদিন শুনি, ‘মা, আমি এলাম’— বেদনার্ত কণ্ঠে বলেন তিনি।
সমুদ্র প্রতিদিন ঢেউ তোলে, আবার সরে যায়। সূর্য প্রতিদিন অস্ত যায়, কিন্তু আলো ফেরে না তাদের জীবনে। এই প্রতীক্ষার নামই বোধহয়—‘একজন মায়ের আশা’।
অরিত্রের মায়ের শেষ প্রশ্নটি আজও বাতাসে ভেসে থাকে—অরিত্র কবে ফিরবে? আদৌ কি কোনোদিন ফিরবে?