ঢাকা সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫

শাহপরীর দ্বীপের করিডোর বন্ধ, স্থলবন্দরও বন্ধের পথে

কক্সবাজার ব্যুরো
প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২৫, ০৪:৫১ পিএম
টেকনাফ স্থলবন্দর। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ করিডোর দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকার পাশাপাশি টেকনাফ স্থলবন্দরও বন্ধের পথে। ফলে সীমান্ত বাণিজ্য নির্ভর কয়েক শ ব্যবসায়ী ও প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক জীবিকা হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন। সরকারি কোনো কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় স্থানীয় অর্থনীতি ধসের মুখে।

টেকনাফ পর্যটন, কৃষি ও বাণিজ্যের অপার সম্ভাবনা। কিন্তু শাহপরীর দ্বীপের করিডোর ও স্থলবন্দর বন্ধ থাকায় সীমান্তের এই সম্ভাবনাময় জনপদ এখন অনিশ্চয়তার আঁধারে নিমজ্জিত।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে স্থলবন্দর থেকে আয় হয়েছিল প্রায় ৬৪০ কোটি টাকা, আমদানি হয়েছিল ১,৮৮,০০০ টন পণ্য। ২০২৩-২৪ সালে আমদানি পড়ে ৬৮,০০০ টন, রাজস্ব ৪০৭ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে পণ্য আমদানি হয়েছিল মাত্র ১১,০০০ টন, রাজস্ব লন্ডভন্ড হয় ৮৭ কোটি টাকা, আগের বছরের একই সময় (৪৭,০০০ টন, ২৫৭ কোটি টাকা) তুলনায় গভীর পতন।

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, চতুর্থ ত্রৈমাসিকে সম্পূর্ণ শূন্য রাজস্ব আদায়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কোনো দিনই রাজস্বই গ্রাহিত হয়নি, বন্দর বন্ধের ফলে দিনে ৩ কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত।

সুত্র মতে, প্রায় ১,৫০০ জন শ্রমিক দিনের মজুরি থেকে বঞ্চিত, বন্দরগুলোর কাজ প্রায় শূন্য হয়ে গেছে।

বন্দরে কয়েক হাজার ব্যাগ সিমেন্ট, ২৭০০ ব্যাগ আলু ১,০৯০ ব্যাগ সফটড্রিংক একত্রে মজুদ ছিল, যা কয়েক মাসে নষ্ট হয়েছে।হিসাব অনুযায়ী ৫০ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।

আমদানি-রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এক্সপ্রেস এজেন্সির প্রতিনিধি মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ‘পণ্যগুলো রপ্তানি করা যাচ্ছে না, কারণ আরাকান আর্মির অনুমোদন নেই। কোনো পণ্যই মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে আসছে না। এ পরিস্থিতি দ্রুত সমাধান জরুরি।’

স্থলবন্দরের দৈনিক মজুর ও পরিবহণ শ্রমিক মিলিয়ে প্রায় ১,৫০০ জন কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। শ্রমিক কামাল হোসেন বলেন, ‘আগে প্রতিদিন কাজ থাকত। এখন দিনের পর দিন খালি হাতে বাড়ি ফিরি। সংসারের খরচ চালানোই কষ্ট হয়ে গেছে।’

টেকনাফ সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, সীমান্ত বাণিজ্যের এ অচলাবস্থা চলতে থাকলে বহু ব্যবসায়ী দেউলিয়া হয়ে যাবে। সরকার দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে এই অঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে।

বাহাদুর বলেন, ব্যবসায়ীরা নাজুক অবস্থায় রয়েছেন। শিপ লাইন পুনরায় চালু করতে সরকারকে তড়িৎ হস্তক্ষেপ করতে হবে।

ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার জাসিম উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘যদিও আমদানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, তবুও ২২,৮৫০ ব্যাগ সিমেন্ট, ২,৭০০ ব্যাগ আলু, ১,০৯০ ব্যাগ সফটড্রিংক মজুদ থাকা অবস্থায়, দীর্ঘ সময় বিদেশে রপ্তানি বন্ধ থাকায় সবই নষ্ট হয়ে গেছে। কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পোর্টের কর্তৃপক্ষ।’

টেকনাফ উপকেন্দ্রিক এই স্থলবন্দর ও শাহপরী করিডোর বন্ধের কারণে মিলিয়ন কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। ১৫০০ শ্রমিক পরিবার এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কবলে। মজুদ পণ্যের নষ্টের কারণে হাজার কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা। সরকারি হস্তক্ষেপ না হলে স্থানীয় অর্থনীতি আরও বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা করছে ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা।