সাভারের আশুলিয়ার বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর মহাসড়ক বছরের প্রায় অধিকাংশ সময়ই নাজুক অবস্থায় থাকে। ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা না থাকায় অল্প বৃষ্টিতেই সড়কটির কয়েক কিলোমিটারজুড়ে পানিতে তলিয়ে থাকতে দেখা যায়। এতে ঘটে দুর্ঘটনা, প্রাণ হারান অনেকে।
এ ছাড়াও শুকনো মৌসুমে কারখানার বর্জ্যমিশ্রিত পানি সড়কের বিভিন্ন স্থানে জমে থাকে। তখন এই পথে যাতায়াতকারীদের যানজটসহ নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়। অন্যদিকে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলমান থাকায় ভোগান্তি যেন এই পথের চলাচলকারীদের নিত্যদিনের সঙ্গী। আসন্ন ঈদুল আজহার ঈদযাত্রায় সড়কটিতে ভোগান্তি চরমে পৌঁছার আশঙ্কা রয়েছে।
ট্রাফিক পুলিশ এটাকে ‘ডেড সড়ক’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। তারা ধারণা করছেন, কোরবানি ঈদে এই সড়কের যানজট প্রচুর ভোগাবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর ও মিরপুর বেড়িবাঁধের সঙ্গে সংযুক্ত টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়ক। এই পথ দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার যানবাহনে লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সড়কের অবস্থা এখন নাজেহাল।
জিরাবো থেকে বাইপাইল পর্যন্ত কাদা ও খানাখন্দে ভরা। খন্দকার মসজিদ থেকে শিমুলতলা, এরপর জামগড়া চৌরাস্তা থেকে ছয়তলা এলাকা পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার সড়কে পানি জমে আছে। বৃষ্টিপাত বেশি হলে গভীর গর্তগুলোতে কোমর সমান পানি জমে। অনেক সময় এসব গর্তে গাড়ি আটকে কিংবা উল্টে গিয়ে প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটে।
বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর মহাসড়ক ব্যবহারকারীরা জানান, প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে বিপদে পড়তে হয়। সড়কের বেশির ভাগ জায়গায় পানি জমে থাকে। খানাখন্দের কারণে মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়তে হয়।
তারা বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলার কারণে শুকনো মৌসুমে সড়কে ধুলাবালির জন্য চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়ে। আশপাশের কল-কারখানা ও বাসাবাড়ির পয়ঃনিষ্কাশনের পানি এসে এই সড়কে জমে থাকে। বৃষ্টি হলে কোথাও কোথাও কোমর সমান পানি জমে।’
গত ১৬ এপ্রিল রাত সাড়ে ৭টার দিকে জামগড়া এলাকায় যাত্রীবাহী একটি লেগুনা ড্রেনে পড়ে দুই পোশাক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও তিন জন।
এই সড়কের দুইপাশের ব্যবসায়ীরা জানান, গুরুত্বপূর্ণ টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের দুর্ভোগ কবে শেষ হবে তা কারো জানা নেই। রাস্তার কারণে আশপাশের এলাকায় বসবাস ও ব্যবসা পরিচালনা করা খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। অল্প বৃষ্টিতে সড়ক তলিয়ে পানি উপচে আশপাশের দোকানে উঠে পড়ে। এতে দোকানের মালামাল নষ্ট হয়ে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বছরের পর বছর ধরে সড়কটিতে পানি জমে থাকলেও এগুলো দেখার কেউ নেই। বর্ষার সময় এই সড়ক একেবারে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তখন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়।
বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর মহাসড়কে আশুলিয়া স্মার্ট পরিবহনসহ একাধিক বাস-ট্রাক চালক বলেন, ‘টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়ক দিয়ে আমাদের রীতিমতো বিপদে পড়ে গাড়ি চালাতে হয়। কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে পানি জমে থাকায় এই সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়।’
তারা আরও বলেন, ‘আধাঘণ্টার সড়ক অনেক সময় দুই ঘণ্টায়ও পৌঁছানো যায় না। এবারের ঈদ মৌসুমে বৃষ্টিপাত থাকলে এই সড়কের যাত্রীদের দীর্ঘ যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হবে।’
বাইপাইল ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) মো. সাজেদুল বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কে বর্তমানে যানজট হচ্ছে। এ ছাড়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের চলমান পাইলিংয়ের কাজের কারণে সড়ক সরু হয়ে গেছে। এটাও যানজটের কারণ। তবে ঈদে সড়কে ভোগান্তি হতে পারে কি না, সে বিষয়ে আমাদের সিনিয়র কর্মকর্তারা বলবেন। আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।’
এ বিষয়ে ঢাকা জেলা উত্তরের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (অ্যাডমিন) গোলাম সারোয়ার বলেন, ‘আমি নিজেই সড়কটি পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। সড়কটির অবস্থা পুরোপুরি বেহাল। আমরা এটাকে ‘ডেড সড়ক’ হিসেবে ঘোষণা করেছি। আসন্ন কোরবানি ঈদে এই সড়ক যানজটের কারণে প্রচুর ভোগাবে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ট্রাফিক পুলিশও ভুগবে।’
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) শফিকুল ইসলামের সঙ্গে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের পরিস্থিতির বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
আপনার মতামত লিখুন :