ঢাকা বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০২৫

পূর্বাচল যেন অপরাধীদের অভয়ারণ্য, রাত হলেই ভয়ংকর

মো. রাকিবুল ইসলাম, পূর্বাচল প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ২২, ২০২৫, ০৭:২৯ পিএম
উপর থেকে পূর্বাচল। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

রাজধানীর উপকণ্ঠে রাজউক পরিকল্পিত নতুন শহর পূর্বাচল দিনে যেমন নয়নাভিরাম, রাতে ঠিক ততটাই হয়ে ওঠে ভয়ংকর। আধুনিক নগরায়ণের ছোঁয়া লাগা এই জনপদে সন্ধ্যা নামলেই শুরু হয় ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক কারবার ও অপহরণের মতো ভয়াবহ অপরাধ।

নিরাপত্তার ঘাটতি, জনবসতির অভাব ও পর্যাপ্ত আলোকসজ্জা না থাকায় অপরাধীরা গড়ে তুলেছে সংঘবদ্ধ নেটওয়ার্ক। ঘটছে হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনাও।

ঢাকার যানজট কমাতে ও নগরবাসীর বসবাস উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করতে পূর্বাচলে তৈরি হচ্ছে সুপরিকল্পিত আধুনিক নগরী। স্বচ্ছ নদী, লেক, সবুজ অরণ্য আর প্রশস্ত সড়ক মিলিয়ে নয়নাভিরাম এই এলাকাটি দিনে হাজারো মানুষের ভ্রমণস্থান হলেও রাত নামলেই যেন অন্ধকারে হারিয়ে যায় তার নিরাপত্তা।

গত এক মাসেই পূর্বাচলে অপহরণ, খুন, ছিনতাইসহ অন্তত ১৭টি বড় অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।

গত ২৭ জুন দিনদুপুরে পূর্বাচলের ১৩ নম্বর সেক্টরে নিজ অফিস থেকে অপহৃত হন ব্যবসায়ী রাশেদুল। অপহরণকারীরা মুক্তিপণ হিসেবে দাবি করে ৭০ লাখ টাকা। এ ছাড়াও চলতি মাসের ৫ তারিখ, একটি বেসরকারি টেলিভিশনের গ্রাফিক্স এডিটর আরিফ হোসেনকে অপহরণ করে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায় করে এক ডাকাতচক্র।

পূর্বাচলে অবস্থিত নদী। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

অটোরিকশাচালক থেকে শুরু করে সাধারণ দর্শনার্থীরা রাতের পূর্বাচল নিয়ে আতঙ্কে থাকেন। ছিনতাইয়ের ভয়ে অনেকে সন্ধ্যার পর রাস্তায় বের হতে সাহস পান না। দর্শনার্থীদের অনেকে জানিয়েছেন, পরিবার নিয়ে পূর্বাচলে ঘুরতে গেলেও ভেতরে ঢোকার সাহস পান না, দ্রুত ফিরে আসেন গন্তব্যে।

মাদকের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবেও অপরাধীরা ব্যবহার করছে পূর্বাচলের নির্জন এলাকা। সীমান্ত অঞ্চল থেকে এনে ইয়াবা, ফেনসিডিল, বিদেশি মদ রাখা হচ্ছে নির্জন ভবন ও ঝোপঝাড়ে। সেখান থেকেই তা ছড়িয়ে পড়ছে রাজধানীর নানা প্রান্তে। পূর্বাচলের বুক চিরে বয়ে চলা বালু ও শীতলক্ষ্যা নদী যেন হয়ে উঠেছে অপরাধীদের নিরাপদ চলাচলের পথ।

এই বিষয়ে রূপগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তরিকুল আলম বলেন, ‘পূর্বাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়মিতভাবে মোবাইল কোর্ট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।’

রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জয় জানান, পূর্বাচল অনেক বিস্তৃত এলাকা, লোকবলও তুলনামূলক কম। তবুও প্রশাসনের সব বাহিনী সম্মিলিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনতে।

পূর্বাচলে সংঘটিত অপরাধ থেকে উদ্ধারকৃত অস্ত্র। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের জুন মাসে পূর্বাচলের একটি লেক থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, বিস্ফোরক ও রকেট লঞ্চার উদ্ধার করেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এটি ছিল চট্টগ্রামের পর দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ অস্ত্রের চালান জব্দের ঘটনা। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় অপহরণ করে হত্যা করে লাশ ফেলার ঘটনাও ঘটেছে এই এলাকায়।

পূর্বাচলের চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যের আড়ালে লুকিয়ে থাকা অন্ধকার অপরাধচক্রকে এখনই রুখে না দিলে, এ জনপদ রূপ নিতে পারে অপরাধীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থলে।