দরপত্রে অংশগ্রহণ ছাড়াই কাজ ভাগিয়ে নিতে গিয়ে ফেনী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাকির উদ্দিনের হাত কেটে নেওয়ার হুমকি দিয়ে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে জেলা বিএনপির সদস্য ও টিকাদার কামরুল হাসান মাসুদের বিরুদ্ধে। সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাতে ফেনী পৌরসভা কার্যালয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর নিজ কক্ষে প্রকাশ্যে এমন হুমকি দেন বলে জানা গেছে। এ নিয়ে জেলাজুড়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশও। এ বিষয়ে পৌরসভার পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে বলে জানা গেছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিএনপি নেতা ও ঠিকাদার কামরুল হাসান মাসুদ।
জানা গেছে, বিগত কয়েকদিন যাবৎ পৌরসভার নানা উন্নয়ন কাজ নিয়ে জেলা বিএনপির সদস্য ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ঠিকাদার কামরুল হাসান মাসুদের সাথে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাকির উদ্দিনের দূরত্ব চলছিলো। সম্প্রতি ফেনী পৌরসভায় বিশ্বব্যাংকের ২৯ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন কাজ পায় রাজধানীর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পিডিএল। সোমবার সন্ধ্যায় ওই প্রতিষ্ঠানের সাথে ফেনী পৌরসভার চুক্তিসই হওয়ার সময়ে হঠাৎ বিএনপি নেতা মাসুদ নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে ঢুকে তর্কাতর্কি শুরু করেন।
এসময় তিনি পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলীকে বলেন, ‘ফেনী পৌরসভার কোন কাজের বিষয়ে পিডিএলের সাথে চুক্তি করা যাবে না।’ এ চুক্তিতে সই করলে নির্বাহী প্রকৌশলীর হাত কেটে নেয়ার হুমকি দিয়ে টেবিলে থাকা ল্যাপটপসহ ফাইল সামগ্রী ছুড়ে মেরে তাকে লাঞ্ছিত করে মাসুদ ও তার সঙ্গে থাকা ব্যক্তিরা। তাৎক্ষণিক পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
ভুক্তভোগী ফেনী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির উদ্দিন বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক থেকে ফেনী পৌরসভায় বড় বড় কয়েকটি কাজ আসার বিষয়ে আমরা চেষ্টা তদবির করে যাচ্ছি। এরই অংশ হিসেবে প্রথমধাপে ফেনী পৌরসভায় ২৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকার কাজের দরপত্র আহবানের পর রাজধানীর পিডিএল নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পায়। এতে করে ফেনী পৌরসভার ঠিকাদার মাসুদ আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়। পিডিএলের সাথে চুক্তি সইয়ের সময়ে সে আমার অফিসে ঢুকে আমাকে লাঞ্ছিত করে ল্যাপটপসহ সামগ্রী ছুড়ে মারে। পিডিএলের সাথে চুক্তিতে সাক্ষর করলে আমার হাত কেটে নেয়ার হুমকি দিয়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের কাজগুলো আমরা ভালোভাবে করতে পারলে আগামীতে ফেনী পৌরসভায় আরও বড় প্রকল্প আসতে পারে। তাই আমরা অত্যাধিক সতর্ক হয়ে বিশ্বব্যাংকের কাজটি করার চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম।’
তবে বিএনপি নেতা ও ঠিকাদার কামরুল হাসান মাসুদ বলেন, ‘বর্তমানে ফেনী পৌরসভায় আমার অন্তত ২ কোটি টাকা মূল্যের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। উন্নয়ন কাজের বিল উত্তোলন করতে গেছে নির্বাহী প্রকৌশলী আমাকে পিডির (প্রকল্প পরিচালক)’র কথা বলে দেড় ভাগ টাকা ঘুষ দাবী করে। আমি ওই টাকা ঘুষ দিতে অস্বীকার করায় আমাকে বিল দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে আমার বাকবিতন্ডা হয়েছে। সেখানে ল্যাপটপ ও ফাইল ছুড়ে মারা অথবা হাত কেটে নেয়ার হুমকির কোন ঘটনা ঘটেনি।’
এ বিষয়ে ফেনী পৌরসভার প্রশাসক ও ফেনীর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক গোলাম মো. বাতেন বলেন, ‘পিডিএলের চুক্তির প্রাককালে নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে গিয়ে তাকে লাঞ্ছিত করা ও হুমকি দেওয়ার বিষয়ে আমরা করণীয় ঠিক করতে আলোচনা করছি। আগামীকাল এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, ‘জেলা বিএনপির সদস্য কামরুল হাসান মাসুদ কর্তৃক ফেনী পৌরসভার ঘটনাটি আমরা কেন্দ্রীয় দপ্তরকে অবহিত করে পরবর্তী নির্দেশনা চেয়েছি। এ বিষয়ে ফেনী পৌরসভাকে আইনের আশ্রয় নিতে মতামত দিয়েছি। বিএনপির করে অথবা বিএনপির নাম করে ফেনীতে আমরা কাউকে অন্যায় করতে দেবো না। এ বিষয়ে বিএনপির অবস্থান পরিস্কার।’
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ সামছুজ্জামান বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করেছে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী অথবা পৌরসভা থেকে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’


সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন