ঢাকা মঙ্গলবার, ০৫ আগস্ট, ২০২৫

সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরসহ ২ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০২৫, ০৭:০২ এএম
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম। ছবি- সংগৃহীত

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম ও প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে গাজীপুরে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকে মামলা করা হয়েছে। মামলায় সাত হাজার ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।

সোমবার (৪ আগস্ট) দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আশিকুর রহমান বাদী হয়ে গাজীপুর দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে বিকেলে মামলাটি করেন।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৭ জুন থেকে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নগর ভবনসহ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন প্রকল্পে ভুয়া টেন্ডার, আরএফকিউ, বিল প্রস্তুত, মাস্টার রোলে কর্মী নিয়োগ, ভুয়া সভা, অনুদান, আপ্যায়ন, ইজারার খাতসহ বহু খাতে প্রকৃত কোনো কাজ না করেই বিপুল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।

এ অর্থ সরকারি উন্নয়ন তহবিল ও সিটি করপোরেশনের রাজস্ব খাত থেকে কৌশলে তুলে বিদেশে পাচার করা হয়েছে।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ও হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে মোট সাত হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করেন।

এর মধ্যে রাজস্ব তহবিল থেকে ১৩৬ কোটি টাকা, টেন্ডার/আরএফকিউ বাবদ ১২৮ কোটি টাকা, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে নয় কোটি টাকা, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দুই কোটি টাকা, উন্নয়ন তহবিল থেকে রাজস্ব তহবিলে স্থানান্তরের নামে ৯৯৯ কোটি টাকা, রাস্তা প্রশস্তকরণের নামে ৭২ কোটি টাকা, মাস্টাররোলে কর্মী ও করোনা খাতে ভুয়া বিলের মাধ্যমে প্রায় শত কোটি টাকা, এমনকি হাট-বাজার ইজারা ও ট্রাফিক নিয়োগ খাতেও অসংখ্য অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়।

এজাহারে আরও বলা হয়, প্রিমিয়ার ব্যাংকের কোনাবাড়ী শাখায় ভুয়া হিসাব খুলে ২ দশমিক ৬ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়, জাতীয় নির্বাচনের আগেও চেকের মাধ্যমে ১৩ কোটি টাকা তোলা হয়, মসজিদে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বেতন দেখিয়ে আরও কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এসব টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলেও অভিযোগে বলা হয়েছে।

মামলাটি দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় করা হয়েছে। এজাহার দাখিল করেছেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আশিকুর রহমান।

দুদক গাজীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক বায়েজিদুর রহমান খান জানান, দুদকের প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে তদন্ত করে অপরাধ সংশ্লিষ্ট সব প্রমাণ ও তথ্য যাচাই শেষে এজাহার প্রস্তুত করা হয়। প্রাথমিক তদন্তে ২৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার কাজ দেখিয়ে বিল উত্তোলনের তথ্য মিলেছে, যা আদতে সম্পূর্ণ ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়েছে।

মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং ভবিষ্যতে এই দুর্নীতিতে আর কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে দুদক।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম এর সাথে কোন ভাবেই যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে অভিযুক্ত গোলাম কিবরিয়ার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ সোহেল হাসান জানান ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশন একটি গণমুখী, জবাবদিহিমূলক ও সেবাপ্রধান প্রতিষ্ঠান।

অতীতের যেকোনো অভিযোগ বা অনিয়মের বিষয়ে রাষ্ট্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলো আইনি প্রক্রিয়ায় কাজ করছে, যা প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অংশ হিসেবেই আমরা বিবেচনা করি। বর্তমান প্রশাসন সব ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে অটল থেকে নাগরিকদের জন্য উন্নয়ন ও সেবা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।’

ন্যায্যতা ও নিয়ম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই গাজীপুর সিটির জনগণের আস্থা অর্জন করা সম্ভব বলে মনে করেন সিটি করপোরেশনের এই কর্মকর্তা।