দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিনই ট্রাকে ট্রাকে দেশে আসছে ভারতীয় চাল। গত ২১ আগস্ট থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫১টি ভারতীয় ট্রাকে মোট ১,৭৮৫ টন চাল এ বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে। সরকারের ইতিবাচক সিদ্ধান্তে চাল আমদানি অব্যাহত থাকায় সুফল পাচ্ছেন নিম্ন আয়ের ক্রেতারা। ফলে তারা কেজিতে অন্তত ৫-৬ টাকা কমে চাল কিনতে পারছেন।
বন্দরের আমদানিকারকরা জানান, সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তারা চাল আমদানি অব্যাহত রেখেছেন। ফলে বেনাপোলসহ বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে বিপুল পরিমাণ চাল দেশে প্রবেশ করছে। তবে এ মুহূর্তে তারা লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, এক মাস আগে ইরি-বোরো মৌসুম শেষ হলেও বাজারে হঠাৎ চালের দাম বাড়তে শুরু করে। দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই সরকার সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। এ অবস্থায় গত ১২ আগস্ট আমদানিকারকদের নামে বরাদ্দ ইস্যু করে চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। এরপর ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু হয়।
চাল আমদানিকারক গনি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আব্দুস সামাদ বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানের নামে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি হচ্ছে। ভারত থেকে চাল আসা শুরু হওয়ায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে দাম কমেছে। আমদানি অব্যাহত থাকলে দাম আরও কমতে পারে। আমি সরকারের কাছে এ নীতি চালু রাখার অনুরোধ জানাই।’
আরেক আমদানিকারক শামীম আহমেদ জানান, ‘আমদানিকৃত চালের মধ্যে রয়েছে স্বর্ণা, সম্পা কাটারি, রত্না ও মিনিকেট জাতের চাল। বর্তমানে সম্পা কাটারি কেজিতে ৫ টাকা কমে ৬৭ টাকা, স্বর্ণা ৩ টাকা কমে ৫২ টাকা এবং আঠাশ ৪ টাকা কমে ৫৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে আমদানি করে লাভ হচ্ছে না। কারণ হিসেবে তিনি জানান, চাল আমদানি শুরু হওয়ার আগেই ভারতের ব্যবসায়ীরা কেজিতে ৩-৪ টাকা দাম বাড়িয়েছে। দাম না বাড়ালে দেশে চালের দাম আরও কমতে পারত।’
বেনাপোল বাজারের খুচরা বিক্রেতা হাজি স্টোরের হাফিজুর রহমান জানান, ‘বর্তমানে চালের দাম কিছুটা হলেও কমেছে। ১০-১২ দিন আগে সম্পা কাটারি ৭২ টাকা ছিল, এখন কেজিতে ৬৭-৬৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য চালও কেজিতে ৩-৪ টাকা কমেছে।’
ক্রেতা হাবিবুল্লাহ ও রাসেল হোসেন জানান, ‘আগের চেয়ে কেজিতে ৪-৫ টাকা কমেছে। আমরা দিনমজুর করি, তাই যত কমবে আমাদের জন্য তত ভালো। ভারত থেকে চাল আসায় দাম কমেছে। তবে হিসাব অনুযায়ী আরও কমার কথা ছিল। এক মাস আগে ইরি-বোরো মৌসুম শেষ হয়েছে, সেই চাল বাজারে থাকার কথা। কিন্তু ব্যবসায়ীদের মজুত করার কারণে সরকারকে আমদানির সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।’
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, ‘চার মাস বন্ধ থাকার পর চাল আমদানি শুরু হওয়ায় বন্দরটিতে আবার কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।’
বেনাপোল বন্দরের পরিচালক শামীম হোসেন বলেন, ‘গত ৭ দিনে ৫১টি ট্রাকে ১,৭৮৫ টন চাল আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে ২১ আগস্ট ৯ ট্রাকে ৩১৫ টন, ২৪ আগস্ট ৬ ট্রাকে ২১০ টন, ২৭ আগস্ট ১২ ট্রাকে ৪২০ টন, ২৮ আগস্ট ৩ ট্রাকে ১০৫ টন, ৩০ আগস্ট ৬ ট্রাকে ২১০ টন, ৩১ আগস্ট ৬ ট্রাকে ২১০ টন এবং ১ সেপ্টেম্বর ৯ ট্রাকে ৩১৫ টন চাল এসেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমদানিকৃত চাল দ্রুত ছাড়করণের জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল সর্বশেষ চাল আমদানি হয়েছিল।’
এদিকে কাস্টম হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা (আরও) রেজাউল ইসলাম জানান, ‘আমদানিকারকরা ২ শতাংশ এআইটি ডিউটি দিয়ে চাল আমদানি করছেন। আগে শুল্কহার ছিল ৬৩ দশমিক ৫০ শতাংশ। সরকার অনুমতি দেওয়ায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড শুল্ক কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। ফলে কম খরচে বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি সম্ভব হচ্ছে। আমদানিকৃত চাল দ্রুত খালাসে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।’