যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার সীমান্তবর্তী পুটখালী ইউনিয়ন যুবদলের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক হত্যার ঘটনায় ১৩ বছর পর পুনরায় যশোরের একটি আদালতে মামলা হয়েছে। এর আগে ঘটনার পরপরই পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করতে ব্যর্থ হয়ে বুধবার মামলাটি করেছেন তার ছেলে আহসান হাবীব লিটন।
মামলায় তৎকালীন ওসিসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবা শারমিন অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশের দায়ের করা মামলাটির নথি ও সিডি তলব করে আগামী ২০ নভেম্বর আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট দেবাশীষ দাস।
আসামিরা হলেন- বেনাপোল পোর্ট থানা এলাকার সহিদুলের ছেলে রেজাউল ইসলাম রেজা ও তার ভাই আজিজুল ইসলাম, আকবর সর্দারের ছেলে শাহাদৎ হোসেন, মোতালেব সর্দারের ছেলে কামাল হোসেন, আব্দুল মজিদের ছেলে তারিকুল ইসলাম, আবদুল ওয়াজেদ মান্দারের ছেলে আব্দুর রব, নারায়নপুর গ্রামের মৃত জব্বার আলী মুন্সির ছেলে ইয়াকুব আলী, পুটখালীর শহিদুল ইসলামের ছেলে জিয়াউর রহমান, মোতালেব সর্দারের ছেলে রিয়াজুল ইসলাম, বেনাপোল পোর্ট থানার সাবেক এসআই আবুল কালাম আজাদ, সাবেক তদন্ত ওসি সৈয়দ লুৎফর রহমান, সাবেক এসআই শিকদার মতিয়ার রহমান, ডিবির তৎকালীন এসআই আবুল খায়ের মোল্লা।
বাদীর দাবি, স্থানীয় আসামিরা সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। আসামিদের ধার্যকৃত চাঁদা না দেওয়ায় তারা তার বাবা আব্দুল খালেককে হত্যা করা হয়েছিল।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, ২০১২ সালের ৩ জানুয়ারি দুপুরে ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক তার ছেলে মুন্নাকে বেনাপোল হাইস্কুলে ভর্তি করাতে যান। ছেলে ভর্তি শেষে কাছের একটি দোকানে বসিয়ে তিনি যশোর-বেনাপোল রোডের দিঘীরপাড় এলাকায় শাহজালাল ফিলিং স্টেশনে মোটরসাইকেলে তেল নিতে গেলে দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে আসামিরা প্রথমে বোমা হামলা পরে গুলি করে তাকে হত্যা করে পালিয়ে যায়। রেজাউল, আজিজুল, ইয়াকুব ও জিয়াউর রহমান আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি চালান। রেজাউলের গুলি খালেকের ডান কান ভেদ করে বাম কান দিয়ে বেরিয়ে যায়। অন্য আসামিরা চারদিক ঘিরে সহযোগিতা করে। পরে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, তৎকালীন বেনাপোল পোর্ট থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ প্রকৃত আসামিদের রক্ষায় ২০১২ সালের ৭ জানুয়ারি নিজে বাদী হয়ে মনগড়া অভিযোগ এনে মামলা করেন। তার সাথে তদন্ত ওসিও জড়িত ছিলেন। এমনকি খালেকের পরিবারকে মামলা করতে দেওয়া হয়নি। পরে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শিকদার মতিয়ার রহমান ও জেলা গোয়েন্দা শাখার এসআই আবুল খায়ের মোল্লা আসামিদের বাঁচাতে ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতে করে প্রকৃত আসামিরা সবাই ছাড় পেয়ে যান। এরপর থেকেই বাদী পরিবার পালিয়ে ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তারা এলাকায় ফিরে আসেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় বাদী বাবার হত্যার বিচার চেয়ে আদালতে মামলা করেন।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, এ হত্যার সাথে পুটখালীর মোতালেব সর্দারের ছেলে সিরাজুলও জড়িত ছিলেন। কিন্তু তিনি মারা যাওয়ায় তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।