ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলায় নিজ প্রতিষ্ঠানে লাঞ্ছিত হয়েছেন ভূটিয়ারকোণা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মোহাম্মদ। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সৃষ্টি হয় নানা সমালোচনা।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরের এ ঘটনায় উপজেলাজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ ঘটনার পর রাতেই অধ্যক্ষ গোলাম মোহাম্মদ বাদী হয়ে গৌরীপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ধেরুয়া কড়েহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন অধ্যক্ষ গোলাম মোহাম্মদকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করছেন। এ সময় আরও বেশ কয়েকজন ছিলেন।
ভুক্তভোগী অধ্যক্ষ গোলাম মোহাম্মদ বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পূর্ব থেকে বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধ চলে আসছিল তার কলেজের গণিতের শিক্ষক সাইফুল ইসলাম তালুকদার, ধর্মের শিক্ষক সাজেদুল ইসলাম, ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য শফিকুল ইসলাম রতন, আনোয়ার হোসেনের সাথে। ৫ আগস্টের পর বিরোধ আরও বেড়ে যায়। তারা আমার কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। অন্যথায় কলেজ থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেয়। বহিরাগত নিয়ে কয়েকবার চেষ্টাও করে। পরবর্তী প্রেক্ষাপটে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় মাওহা ইউনিয়ন জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ালি উল্লাহ, স্থানীয় রুমি মিয়া, সাইকুল ইসলামসহ আরও অনেকে।
তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে কলেজে কয়েকজন গিয়ে ধাক্কাতে ধাক্কাতে আমাকে কলেজ থেকে বের করেন। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি।
সূত্র জানায়, কলেজের নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে অধ্যক্ষ গোলাম মোহাম্মদের অপসারণ দাবিতে গেল বছরের জুলাই থেকে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের একাংশ। পরে ৫ আগস্টের পর অধ্যক্ষ গোলাম মোহাম্মদকে পদ থেকে সরিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে ধর্মের শিক্ষক সাজেদুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে দুটি পক্ষ তৈরি হয়।
সাজেদুল ইসলাম গত ১৭ অক্টোবর স্থানীয় নেতৃবৃন্দের পরামর্শে গোলাম মোহাম্মদকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। এরপর থেকে স্থানীয় একটি পক্ষ গোলাম মোহাম্মদকে কলেজে যেতে নিষেধ করেন। দেওয়া হয় তার কক্ষে তালা।
অধ্যক্ষ গোলাম মোহাম্মদকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করা আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে বারবার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
মাওহা ইউনিয়ন জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ালি উল্লাহ বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পরামর্শক্রমে বিষয়টি সমাধান করে স্যারকে কলেজে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। তিনি নিয়োগ বাণিজ্যসহ ১৩টি অভিযোগে অভিযুক্ত। তাই মানুষ তাকে সহজে মেনে নেবে না এটাই স্বাভাবিক। যখন স্যারকে ধাক্কা দিয়ে আনোয়ার হোসেন বের করছিলেন, তখন আমি বাধা দিয়েছিলাম। এর জন্য দায়ী স্যার নিজেই।
শিক্ষক সাজেদুল ইসলাম বলেন, একসঙ্গে স্যারের সাথে ৩০ বছর শিক্ষকতা করছি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। আমি দায়িত্ব নিতে চাইনি। কিন্তু এখানে দুটি পক্ষ হয়ে যাওয়ায় সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। স্যার তাদের ম্যানেজ করতে ব্যর্থ। স্যারের সঙ্গে একটি ঘৃণিত কাজ হয়েছে। যারা করেছে তাদের বিচার হওয়া উচিত।
গৌরীপুর থানার ওসি দিদারুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে মারধরের বিষয়ে গোলাম মোহাম্মদ একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।