ঢাকা সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০২৫

ফিলিস্তিনিদের তাড়াতে গাজায় ‘বন্দিশালা’ বানাচ্ছে নেতানিয়াহু

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২৫, ০৭:৪৮ পিএম
২০২১ সালের ২১ আগস্ট গাজা শহরের পূর্বে ইসরায়েল-গাজা সীমান্তে বিক্ষোভ করছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি- সংগৃহীত

দক্ষিণ গাজার একটি ক্ষুদ্র এলাকায় ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক আটকে রাখার পরিকল্পনাকে একটি ‘কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প’ বা বন্দি শিবির বলে অভিহিত করেছেন ‘ইসরায়েলে’র সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট।

৭৯ বছর বয়সী এহুদ রোববার দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘এটি একটি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প। আমি দুঃখিত।’ তিনি এই মন্তব্য করেন ‘ইসরায়েলি’ প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজের প্রস্তাবিত ‘মানবিক এলাকা’ পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে।

এই পরিকল্পনায় প্রাথমিকভাবে রাফা শহরের ধ্বংসাবশেষে নির্মিত একটি ঘেরাওকৃত এলাকায় প্রায় ৬ লাখ ফিলিস্তিনিকে আটকে রাখার কথা বলা হয়েছে। এলাকাটি হবে সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রিত ও সীমাবদ্ধ। ফিলিস্তিনিদের বাইরে যাওয়ার সুযোগ থাকবে না এবং প্রতিদিন তাদের কঠোর নিরাপত্তা তল্লাশির মধ্য দিয়ে যেতে হবে।

কাটজ আরও বলেন, পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপে ফিলিস্তিনিদের ‘স্বেচ্ছায়’ অন্য দেশে চলে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হবে, যা তিনি ‘অভিবাসন পরিকল্পনা’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

এই প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়ায় ওলমার্ট মন্তব্য করেন, “যদি ফিলিস্তিনিদের একটি নতুন ‘মানবিক শহরে’ নির্বাসিত করা হয়, তাহলে আপনি বলতে পারেন এটি জাতিগত নির্মূলের একটি অংশ। এর অনিবার্য ব্যাখ্যাই সেটি।”

তিনি আরও বলেন, “যখন তারা গাজার অর্ধেক জনগণকে এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত করে, এটা ‘উদ্ধার’ নয়। বরং এটি ধাক্কা দেওয়া, বহিষ্কার এবং উচ্ছেদ করার কৌশল। অন্তত আমার কাছে অন্য কোনো ব্যাখ্যা নেই।”

‘ইসরায়েলে’র শীর্ষ দৈনিক হারেৎজ জানায়, প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাটজের এই পরিকল্পনায় প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সমর্থন রয়েছে।

গত ১৪ জুলাই পর্যন্ত এই পরিকল্পিত শহরের নির্মাণ কবে শুরু হবে বা আন্তর্জাতিক সমর্থন ছাড়া এটি আদৌ বাস্তবায়নযোগ্য কিনা—তা স্পষ্ট নয়। কাটজ ধারণা করছেন, দুই মাসের সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির সময় এই শহর নির্মিত হতে পারে। তবে ‘ইসরায়েল’ ও হামাসের মধ্যকার মধ্যস্থতাকারীরা এখনো যুদ্ধবিরতি চুক্তি থেকে অনেক দূরে রয়েছেন।

আন্তর্জাতিক আইন ও গণহত্যা বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, এই পরিকল্পনাগুলো আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ১৯৪৯ সালের চতুর্থ জেনেভা কনভেনশন অনুসারে, দখলকৃত অঞ্চলের অধিবাসীদের সঙ্গে মানবিক আচরণ নিশ্চিত করা আবশ্যক। শুধুমাত্র ‘নিরাপত্তার অপরিহার্য কারণ’ ছাড়া তাদের স্থানচ্যুত বা বন্দি করা যাবে না।

ডায়াকোনিয়া ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যানিটারিয়ান ল’ সেন্টারের সিনিয়র বিশেষজ্ঞ এইটান ডায়মন্ড বলেন, ‘কয়েক লক্ষ মানুষকে একটি কনসেন্ট্রেশন জোনে আটকে রাখার সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই বৈধ ব্যতিক্রমের মধ্যে পড়ে না। এটি স্পষ্টতই অবৈধভাবে স্বাধীনতার অধিকার হরণ করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইন উভয়েরই লঙ্ঘন।’

বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ও গণহত্যা-বিষয়ক গবেষক মার্টিন শ বলেন, তথাকথিত ‘স্বেচ্ছাসেবী অভিবাসন পরিকল্পনা’ বাস্তবে একটি জোরপূর্বক উচ্ছেদ পরিকল্পনা। 

তার ভাষায়, ‘গাজার মানুষকে বোমা মেরে বাড়ি থেকে তাড়ানো হয়েছে, তাদের আত্মীয়স্বজন নিহত হয়েছে, তারা ক্ষুধার্ত অবস্থায় মারা যাচ্ছে, এবং খাদ্যের জন্য দাঁড়ালে গুলি করা হচ্ছে। এই অবস্থায় অভিবাসন আর যাই হোক, স্বেচ্ছায় নয়।’

তিনি আরও বলেন, “‘ইসরায়েল’ এই নির্মমতা ব্যবহার করে গাজাবাসীদের দেশত্যাগে বাধ্য করছে এবং তাদের পূর্বপুরুষদের মতোই ফিরে আসার অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে।”