ঢাকা মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই, ২০২৫

পাওনা টাকার বিরোধে কলেজছাত্র হত্যা, গ্রেপ্তার ২

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২৫, ০৬:৫৪ পিএম
গ্রেপ্তার কাজল মিয়া ও সিরাজুল ইসলাম। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের কাকিয়াছড়া চা বাগানে পাওনা টাকার বিরোধে হৃদয় আহমেদ ইয়াছিন (১৯) নামে এক কলেজছাত্রকে শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনায় জড়িত দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত গামছা, স্কুল ব্যাগ, মোবাইল ফোন ও একটি মোটরসাইকেলও উদ্ধার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তাররা হলেন কিশোরগঞ্জের দাড়িয়াকান্দি এলাকার কাজল মিয়া (২০) এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার সিরাজুল ইসলাম (২১)। তারা উভয়েই মাদকাসক্ত বলে জানিয়েছে পুলিশ।

নিহত হৃদয় আহমেদ ইয়াছিন কমলগঞ্জ সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। পাশাপাশি শ্রীমঙ্গল কালীঘাট রোড এলাকায় একটি ওয়াইফাই কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন।

পুলিশ জানায়, অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে হৃদয় বন্ধুর কাছ থেকে ধার নেওয়া টাকার দায়ে জড়িয়ে পড়েন। এই পাওনা টাকা ফেরত না দেওয়াকে কেন্দ্র করে হত্যা সংঘটিত হয়।

গত ৭ জুলাই সকালে শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালিঘাট ইউনিয়নের কাকিয়াছড়া চা বাগানের ১ নম্বর সেকশনে একটি গাছের সঙ্গে বেল্ট দিয়ে বাঁধা অবস্থায় হৃদয়ের মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে এবং শ্রীমঙ্গল থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার এম. কে. এইচ. জাহাঙ্গীর হোসেন, পিপিএম-সেবার নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) নোবেল চাকমা এবং সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল সার্কেল) আনিসুর রহমানের তত্ত্বাবধানে তদন্ত শুরু করে শ্রীমঙ্গল থানার একটি বিশেষ দল। সিসিটিভি ফুটেজ, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোপন তথ্যের ভিত্তিতে আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করা হয়।

এরপর এসআই অলক বিহারী গুণ ও এসআই মো. মহিবুর রহমানের নেতৃত্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাজাপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে উদ্ধার করা হয় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত গামছা, স্কুল ব্যাগ, নিহতের মোবাইল ফোন ও মোটরসাইকেল।

জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, নিহত হৃদয়ের কাছে প্রায় ২২ হাজার টাকা পাওনা ছিল কাজলের। চাকরির আশ্বাসে ঢাকায় নেওয়ার পর চাকরি না হওয়া এবং পাওনা টাকা ফেরত না পাওয়ায় তাদের মধ্যে বিরোধ চরমে ওঠে। ক্ষোভ থেকেই তারা হৃদয়কে হত্যার পরিকল্পনা করে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৬ জুলাই রাত ১১টার দিকে তারা হৃদয়কে কাকিয়াছড়া চা বাগানে নিয়ে যায়। রাত আনুমানিক ১১টা ২০ মিনিটে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে তারা গামছা দিয়ে হৃদয়ের গলায় প্যাঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে তার প্যান্টের বেল্ট গলায় প্যাঁচিয়ে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে, যাতে এটি আত্মহত্যা বলে প্রতীয়মান হয়।

পরে তারা হৃদয়ের মোবাইল ফোন মাত্র ২৫০ টাকায় বিক্রি করে মোটরসাইকেল নিয়ে সরাইল থানার রাজাপুর গ্রামে পালিয়ে যায়। সোমবার (১৪ জুলাই) দুপুরে জেলা পুলিশ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নোবেল চাকমা ও শ্রীমঙ্গল থানার ওসি মো. আমিনুল ইসলাম।

গ্রেপ্তার দুজনকে একই দিন আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।