ঢাকা সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

খাগড়াছড়িতে স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে কাজ করছে বিজিবি

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৫, ০৬:১৩ পিএম
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন খাগড়াছড়ি ৩২ বিজিবি সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো. আব্দুল মোত্তাকিম। ছবি- ভিডিও থেকে নেওয়া

খাগড়াছড়িতে চলমান পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে বিজিবি কাজ করছে বলে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি ৩২ বিজিবি সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো. আব্দুল মোত্তাকিম।

সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টায় জেলার স্বনির্ভর বাজার এলাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘খাগড়াছড়িতে বিজিবি সর্বদা শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। চলমান পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য জেলায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অস্থায়ী চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে।’

কর্নেল মো. আব্দুল মোত্তাকিম আরও বলেন, ‘পাহাড়ি এবং বাঙালি কোনো আলাদা জাতি নয়। আমাদের প্রথম পরিচয় আমরা সকলেই বাংলাদেশের নাগরিক। আমরা চাই, সবাই শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে একসঙ্গে বসবাস করতে পারি। আমি সকলকে আহ্বান জানাই—শান্তি ও সম্প্রতির বন্ধন দৃঢ় রাখতে।’

এদিকে, খাগড়াছড়ি সদর ও পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি থাকায় জনজীবন এখনো স্থবির। জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মোতায়েন রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে গুইমারা উপজেলাতেও। উপজেলায় গতকাল সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

তবে নিরাপত্তার কারণে যানবাহন ও মানুষের চলাচল সীমিত রয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে, বেশিরভাগ দোকানপাটও বন্ধ। শহরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার রয়েছে।

আজ সোমবার দুপুর ১২টা পর থেকে খাগড়াছড়ি-ঢাকা ও খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়কে চলমান অবরোধ আংশিক শিথিল করেছে জুম্ম ছাত্র-জনতা। ওই সময় থেকেই দুই রুটে দূরপাল্লার পরিবহনগুলো ছাড়তে শুরু করে। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।

দূরপাল্লার যাত্রী রোকেয়া বেগম বলেন, ‘ঢাকা থেকে এসেছিলাম সাজেক ঘুরতে। অবরোধের কারণে খাগড়াছড়িতে দুই দিন ধরে আটকা ছিলাম। আজ দুপুর থেকে অবরোধ শিথিল করায় মনের আনন্দে ঢাকায় ফিরে যাচ্ছি।’ আরেক যাত্রী জানান, ‘চট্টগ্রাম থেকে আসছি। অবরোধের কারণে অনেক ভোগান্তি হয়েছে। টিকেট পাওয়া যায়নি ঠিকমতো, শেষে কষ্ট করে পেলেও ভালো সিট পাইনি। তারপরও ফিরছি।’

খাগড়াছড়ি সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মো. রোকন উদ্দিন বলেন, ‘দুপুর থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামগামী গাড়ি ছাড়ছে শহরের কাউন্টার থেকে—কোনো অসুবিধা নেই।’

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল জানান, ধর্ষণ মামলায় পুলিশ একজনকে আটক করেছে এবং আসামিকে ৬ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। জেলা সদরে হামলা, সংঘর্ষ ও ভাংচুরের প্রতিটি ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।

এর আগে, গতকাল রোববার দুষ্কৃতকারীদের হামলায় তিন পাহাড়ি নিহত হওয়ার পর থেকে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে জেলাজুড়ে। অবরোধে থমকে যায় পুরো খাগড়াছড়ি জেলা, বন্ধ হয়ে যায় দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ রুটের যানবাহন চলাচল।

প্রসঙ্গত, গত ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় জেলা সদরের সিঙ্গিনালা এলাকায় অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। এ ঘটনায় শয়ন শীল (১৯) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারে শনিবার থেকে সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধের ডাক দেওয়া হয়।