কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার জিনারী ইউনিয়নের চর জিনারীতে গড়ে তোলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের গুচ্ছগ্রামটি এখন পুরোপুরি জনমানবশূন্য। প্রায় ৫০ শতক খাস জমিতে নির্মিত ২৫টি আধাপাকা ঘরে এক সময় দরিদ্র পরিবারগুলো বসবাস করলেও বর্তমানে সেখানে কোনো পরিবারই নেই। সন্ধ্যার পরপরই এলাকাটি মাদকসেবী ও মাদককারবারিদের আড্ডায় পরিণত হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় এই ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়। শুরুতে ১৪টি পরিবার সেখানে বসবাস শুরু করলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা, নিরাপত্তাহীনতা এবং ন্যূনতম নাগরিক সুযোগ-সুবিধার অভাবে তারা একে একে এলাকা ছেড়ে চলে যায়। বর্তমানে ঘরগুলো তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। চারপাশে জমেছে ঝোপঝাড়, শুকনো পাতার স্তুপ, আর প্রকল্প এলাকা পরিণত হয়েছে এক প্রকার ভৌতিক পরিবেশে।
প্রকল্পটির সভাপতি শ্যামলাল গুর জানান, ‘প্রথমে অনেক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। ভোটার আইডি সংগ্রহ করা হয়েছিল নানা সুবিধার কথা বলে। বাস্তবে আমরা শুধু বছরে দুবার ঈদে ৮ কেজি করে চাল পেয়েছি। রাস্তা করে দেওয়ার কথা থাকলেও চার বছরেও তা হয়নি। ফলে নিরাপত্তাহীনতা ও যাতায়াত সমস্যার কারণে কেউ আর থাকতে চায়নি।’
তিনি আরও জানান, ‘বরাদ্দপ্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন ছালাম, শহর আলী, রশিদ মিয়া, বশির উদ্দিন, সন্ধ্যারাণী, রোকেয়া, মাসুদ মিয়া, ফরজুল মিয়া, দিলু মিয়া, নয়ন মিয়া, হানিফা, রাহেলা, খুশি, জোৎসনা, জালাল মিয়া, হামিদ মিয়া, ছাহেলা, রাশিদ, মাহমুদা, হোসনা নাহার, গেসু মিয়া, কপিল মিয়া, শাহজাহান মিয়া ও আছিয়া আক্তার।’
২০২৩ সালের ২ জুন প্রকল্পে বসবাসকারী বশির উদ্দিনের ভাগিনা সুজন মিয়ার (২৮) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার পর এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং বাকিরাও একে একে সরে যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বরাদ্দের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব বেশি থাকায় প্রকৃত ভূমিহীন অনেক পরিবার উপেক্ষিত হয়েছে। যেসব পরিবার ঘর পেয়েছিল, তারাও ন্যূনতম নাগরিক সুবিধার অভাবে টিকতে পারেনি।
জিনারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আজহারুল ইসলাম রুহিদ বলেন, ‘এই এলাকায় কোনো রাস্তা নেই। বিকাল হলেই জায়গাটি মাদকসেবীদের আড্ডায় পরিণত হয়। এখানে আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করাটাই ছিল একটি ভুল সিদ্ধান্ত।’
হোসেনপুর থানার ওসি মারুফ হোসেন বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ অভিযান চালালেও যাতায়াতের ব্যবস্থা না থাকায় অপরাধীরা আগেই পালিয়ে যায়।’
হোসেনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী নাহিদ ইভা বলেন, ‘বরাদ্দপ্রাপ্তদের নামে সরকার ঘর ও জমি লিখে দিয়েছে, তাই প্রশাসনের পক্ষে একতরফাভাবে বরাদ্দ বাতিল করা সম্ভব নয়। তবে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠাব। সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’