ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫

যেভাবে হানাদারমুক্ত হয় লক্ষ্মীপুর

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৪, ২০২৫, ১১:০৮ পিএম
ছবি- সংগৃহীত

লক্ষ্মীপুরের ইতিহাসে ৪ ডিসেম্বর এক গৌরবময় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি বাহিনী কৌশলে পালিয়ে যায়। দীর্ঘদিন অবরুদ্ধ থাকার পর লক্ষ্মীপুর সদরের মানুষ সেদিন মুক্তির স্বাদ ও বিজয়ের আনন্দ পায়।

এই জেলায় পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে ওঠে এপ্রিল মাসে। শত্রুবাহিনী যেন লক্ষ্মীপুর সদরে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য স্বাধীনতাকামী জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধারা নোয়াখালীর চৌমুহনী থেকে লক্ষ্মীপুর সদর পর্যন্ত সড়কের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু ভেঙে প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। সেই সময়ের স্মৃতি হিসেবে মাদাম ব্রিজের পিলার আজও দাঁড়িয়ে আছে।

২৫ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী লক্ষ্মীপুর সদরে প্রবেশ করে বাজারডিতে প্রধান ক্যাম্প স্থাপন করে। ওই দিন মজপুর গ্রামে হামলা চালিয়ে ৩৫ জনকে হত্যা করা হয়, যা ‘মজপুর গণহত্যা’ নামে পরিচিত। পরবর্তীতে জেলার বিভিন্ন স্থানে তারা একাধিক সাব-ক্যাম্প স্থাপন করে।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে লক্ষ্মীপুর সদরে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তানি বাহিনীর মধ্যে একাধিক সম্মুখযুদ্ধ হয়। এর মধ্যে দালাল বাজার ও মান্দারী বাজার রাজাকার ক্যাম্প অপারেশনসহ মোট ১৭টি উল্লেখযোগ্য যুদ্ধের তথ্য রয়েছে।

নভেম্বর থেকে পাকিস্তানি বাহিনী ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়ে। ২ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের দুটি প্রধান ক্যাম্প ঘিরে ফেলেন। আত্মসমর্পণের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করলে শুরু হয় তীব্র যুদ্ধ। কয়েক ঘণ্টার সংঘর্ষের পর ৩ ডিসেম্বর গভীর রাতে পাকিস্তানি বাহিনী রাজাকারদের রেখে নোয়াখালীর চৌমুহনীর দিকে পালিয়ে যায়।

৪ ডিসেম্বর সকালে খবর ছড়িয়ে পড়তেই লক্ষ্মীপুরজুড়ে বিজয়ের উল্লাস শুরু হয়। রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। তবে বিজয়ের আনন্দের মাঝেই বেদনার অধ্যায় রচিত হয়–  রাজাকার কমান্ডার আবদুল হাইয়ের নেতৃত্বে অতর্কিত হামলায় শহীদ হন মুক্তিযোদ্ধা আবু সাঈদ এবং আহত হন আরও তিন জন।

এভাবেই ত্যাগ, লড়াই ও আত্মদানের মধ্য দিয়ে ৪ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর মুক্ত হয়।