ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫

বিমানবন্দরে প্রবাসী যুবককে আটকের পর আ.লীগ কর্মী বানাল পুলিশ!

বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৪, ২০২৫, ০৯:৫৪ পিএম
আওয়ামী লীগ কর্মী সাজানো আব্দুল সামাদ। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

হযরত শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমানবন্দর থেকে প্রবাসী যুবককে গ্রেপ্তার করে আওয়ামী লীগ কর্মী সাজিয়ে কারাগারে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে বড়লেখা থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। গ্রেপ্তারকৃত যুবকের নাম আব্দুল সামাদ (৩৪)।

মঙ্গলবার (০২ ডিসেম্বর) হযরত শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমানবন্দর থেকে পুলিশ আব্দুল সামাদকে আটক করে। সামাদ মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার গ্রামতলা গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে।

এদিকে, এ ঘটনায় বড়লেখা উপজেলাজুড়ে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। প্রবাসী যুবক আব্দুল সামাদকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (০৪ ডিসেম্বর) দুপুর ২টার দিকে বড়লেখা পৌর শহরে সর্বস্তরের সচেতন মহলের ব্যানারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মানববন্ধনে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক রবিউল ইসলাম সুহেলের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন: বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক ফয়ছল আহমদ, হলদিরপাড় জামেয়া ইসলামিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুল বাছিত, ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ, সোনাতুলা প্রবাসী কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হাফেজ জয়নাল আবেদিন, হাজিগঞ্জ বাজার বনিক সমিতির সদস্য সচিব আব্দুর রহমান মানিক, জেলা চেম্বার অব কর্মাসের সদস্য আব্দুস সামাদ, সাংবাদিক নাজমুল ইসলাম (তুহিন), তাহমীদ ইশাদ রিপন, প্রবাসী ঐক্য পরিষদের সহসভাপতি নিজাম উদ্দিন, ইতালি প্রবাসী সাদিকুর রহমান প্রমুখ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আব্দুল সামাদ দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে ছিলেন। সম্প্রতি তিনি দেশে আসার পর বড়লেখা থানার এসআই দেবল চন্দ্র সরকার তাকে (সামাদকে) অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করেন। এরপর সামাদকে আওয়ামী লীগ কর্মী সাজিয়ে জামায়াত নেতার একটি মামলায় আদালতে সোপর্দ করেন এসআই দেবল। যে মামলায় সামাদকে অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, ওই ঘটনার সময় ও তারিখে সামাদ স্পেনে অবস্থান করছিলেন।

আব্দুল সামাদকে আটকের প্রতিবাদে বড়লেখায় সচেতন মহলের ব্যানারে মানববন্ধন। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

বক্তারা বলেন, ‘শুধুমাত্র জামায়াতে ইসলামীকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বড়লেখা থানার ওসি মাহবুবুর রহমান মোল্লার নির্দেশে এসআই দেবল চন্দ্র সরকার সামাদকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছেন। আমরা মানববন্ধন থেকে বড়লেখা থানার ওসিকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিলাম। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সামাদের মুক্তির ব্যবস্থা বড়লেখা থানা পুলিশকেই করতে হবে। অন্যথায় আমরা থানা ঘেরাওয়ের মতো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।’

বক্তারা আরও বলেন, বড়লেখা থানার ওসি একদিকে প্রকৃত অপরাধীদের প্রকাশ্যে ঘোরার সুযোগ করে দিচ্ছেন। অন্যদিকে অন্যায়ভাবে নিরীহ মানুষকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠাচ্ছেন, যা অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ।

জানা গেছে, আব্দুল সামাদ দীর্ঘদিন ধরে স্পেনে ছিলেন। গত মঙ্গলবার হযরত শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমানবন্দর, ঢাকাস্থ ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটক করে। এরপর বড়লেখা থানার এসআই দেবল চন্দ্র সরকার আব্দুল সামাদকে গ্রেপ্তার করে গত বুধবার (০৩ ডিসেম্বর) বড়লেখা থানায় নিয়ে আসেন। ওই দিন আওয়ামী লীগ কর্মী সাজিয়ে আব্দুল সামাদকে বড়লেখা থানায় করা মামলায় আদালতে প্রেরণ করেন এসআই দেবল চন্দ্র সরকার।

মামলার বাদী দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিনের বাসিন্দা অহিদ আলী। তার মামলায় আব্দুল সামাদকে গ্রেপ্তার দেখানোয় তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘যে ঘটনার তারিখ ও সময়ের মামলা আমি করেছি, ওই সময় আব্দুল সামাদ প্রবাসে ছিলেন। তিনি আমার ঘটনার সাথে কোনোভাবেই জড়িত নন। তাকে আমার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো চরম অন্যায় হয়েছে। পুলিশ আমার মামলাকে নষ্ট করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই কাজটি করেছে।’

এ ব্যাপারে বড়লেখা থানার ওসি মাহবুবুর রহমান মোল্লা বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পেয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে তদন্ত চলছে। তিনি যদি ঘটনার সাথে জড়িত না থাকেন তাহলে চার্জশিট থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হবে।’