জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘ইনসাফভিত্তিক একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যেখানে কোনো একক ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকবে না।’
তিনি বলেন, ‘চাঁদাবাজ ও দখলদারমুক্ত রাষ্ট্র গঠনের জন্য পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে একটি উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) রাত ৯টার দিকে মানিকগঞ্জ জেলা শহরের খালপাড়ে ভাষা শহীদ রফিক চত্বরে আয়োজিত এক পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা জীবনের কোনো মায়া করি না। শহীদ ভাইদের পরিবারের মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হয়, তাদের অধিকার আদায়ের জন্যই আমাদের বেঁচে থাকা। আমরা ভোট চাইতে আসিনি; আমরা এসেছি একটি নতুন, ন্যায়ের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অনেক আগেই গোপালগঞ্জে কর্মসূচির কথা জানিয়েছিলাম। কিন্তু সরকার সুরক্ষা না দেওয়ায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। গোপালগঞ্জে কেন গিয়েছি—এই প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। আ. লীগ যদি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায়, তাহলে বিপ্লবী ছাত্র-জনতা আবারও তাদের পরাস্ত করবে।’
অভিযোগ করে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, বিগত সময়ে সাধারণ মানুষ, ছাত্র ও আলেমদের ওপর দমন–পীড়ন চালানো হয়েছে। শুধু ইসলাম পালন করার কারণেই অনেকে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘হিন্দু ভাইদের বলছি—আপনারা কোনো বিশেষ দলের সম্পত্তি নন, আপনারাও বাংলাদেশের নাগরিক এবং সমান অধিকার ভোগের অধিকার রাখেন। আওয়ামী লীগই আপনাদের জমি দখল করেছে।’
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘যখনই আমরা সংস্কারের কথা বলি, তখন একটি পক্ষ সংখ্যার জোরে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টা করে। বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও বিচার ও শাসন ব্যবস্থা এখনও জনগণের উপযোগী হয়ে ওঠেনি। আওয়ামী লীগ এত প্রাণহানির পরও অনুশোচনা প্রকাশ করেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের কথা বলেন, তারা গোপালগঞ্জে সন্ত্রাসীদের তাণ্ডব দেখুন। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি—বাংলাদেশে আর আওয়ামী লীগের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। মুজিববাদের কবর ইতিমধ্যে রচিত হয়েছে।’
সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, ‘আমরা ‘জুলাই সনদ’ চাই। সেখানে উল্লেখ থাকবে—কোন কোন রাজনৈতিক দল এই সনদ মানতে বাধ্য থাকবে। শহীদ ও আহতদের জন্য জুলাই ফাউন্ডেশন থেকেও কোনো সহায়তা দেওয়া হচ্ছে না। বাংলাদেশ থেকে আওয়ামী লীগের নাম নিশানা মুছে যাবে।’
পথসভায় সভাপতিত্ব করেন এনসিপির মানিকগঞ্জ জেলা শাখার প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট জাহিদুর রহমান তালুকদার।
উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, কেন্দ্রীয় মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনীম জারা প্রমুখ। এছাড়াও কেন্দ্রীয়, বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দও সভায় অংশ নেন।
এনসিপি নেতারা মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছালে তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয় প্রশাসন, এবং সেখান থেকে সমাবেশস্থলে পৌঁছে দেওয়া হয়।