গুরুতর অসুস্থ স্ট্রোক করা মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কারণে এইচএসসি পরীক্ষার হলে ঢুকতে দেরি হওয়ায় প্রথম দিনের পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি আনিসা আহমেদ নামের এক শিক্ষার্থী। তবে তিনি পরীক্ষায় বসার সুযোগ পাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট (ব্যারিস্টার-অ্যাট-ল) মো. রুহুল কুদ্দুস (কাজল) বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাত পৌনে ১২টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। এইচএসসি পরীক্ষার্থী আনিসার সঙ্গে আমার মাত্র কথা হয়েছে। তার নাম আনিসা আহমেদ।’
তিনি জানান, আনিসার অসুস্থ মা এবং তার কলেজ, ঢাকা শিক্ষাবোর্ড ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. আসাদুজ্জামান স্যারের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। বাঙলা কলেজের জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কর্মী শিব্বির আহমেদ উসমানি তাকে এই যোগাযোগে সহায়তা করেছেন।
পোস্টে উল্লেখ করা হয়, আনিসার বাবা দুই বছর আগে মারা গেছেন এবং অসুস্থ মাকে দেখাশোনার জন্য আনিসাই একমাত্র অবলম্বন। শিক্ষকরা এই ছাত্রীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছেন।
তারা শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু বৃহস্পতিবার তা সম্ভব হয়নি। বিশেষ বিবেচনায় আনিসার আজকের পরীক্ষাটি পরবর্তীতে গ্রহণের চেষ্টা করা হবে বলে জানা গেছে।
আইনি সহায়তার আশ্বাস
ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস আনিসা, তার মা ও অধ্যক্ষকে শেষ পদক্ষেপ হিসেবে আইনগত সহযোগিতা করার বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি ২০০০ সালে মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ১৩২ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা দেওয়া সংক্রান্ত পূর্বের মামলার নজিরও তাদের জানিয়ে আশ্বস্ত করেছেন।
তিনি তার পোস্টে বলেছেন, মেয়েটি যেন বাকি পরীক্ষাগুলো নিশ্চিন্তে দিতে পারে, সেটি ব্যবস্থা করার জন্য তার মা ও অধ্যক্ষ স্যারকে বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছি।
ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস বিশ্বাস করেন, তার ফেসবুক পোস্টের পর যেভাবে সবাই মেয়েটির প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন, তাতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড এবং শিক্ষা উপদেষ্টা মানবিক বিবেচনায় আনিসার পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে তার শিক্ষাজীবন অব্যাহত রাখতে সহযোগিতা করবেন।
তিনি প্রত্যাশা করেন, আনিসাকে যেন আদালতের দ্বারস্থ হতে না হয়।
ঘটনার সূত্রপাত
বৃহস্পতিবার দেশজুড়ে এইচএসসি ও সমমানের প্রথম দিনের পরীক্ষা শেষ হয়। এই দিনেই সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজধানীর সরকারি মিরপুর বাঙলা কলেজ কেন্দ্রের এক শিক্ষার্থীর পরীক্ষা না দিতে পারার ভিডিও ভাইরাল হয়।
পরীক্ষা দিতে না পারায় ওই কেন্দ্রের সামনে তাকে কাঁদতে দেখা যায়, যা দেখে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই এইচএসসি পরীক্ষার্থীর বাবা নেই। মা বৃহস্পতিবার সকালে মেজর স্ট্রোক করেন। যেহেতু পরিবারে দায়িত্বশীল কেউ নেই, তাই মেয়েটিকেই সব সামলে মাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়।
সেখান থেকে তিনি পরীক্ষার কেন্দ্র মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজে ছুটে আসেন। কিন্তু কেন্দ্রে উপস্থিত হতে দেরি হওয়ায় তাকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
ফলে তিনি প্রথম দিনের পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। এই মানবিক পরিস্থিতি সারাদেশে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :