সিঙ্গারা আর পেঁয়াজু—এই দুই জনপ্রিয় ভাজাভুজি খাবার পছন্দ করেন না, এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যায়।
এমনই মুখরোচক সিঙ্গারা-পেঁয়াজু বিক্রি করেই মাসে অর্ধ লাখ টাকা আয় করছেন এক গ্রামীণ যুবক। আর এ আয় হচ্ছে কোনো শহরে নয়, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত এক গ্রামের বাজারে।
স্থানীয় সূর্যের বাজারে বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে হাবিবুর রহমান বজলুর সিঙ্গারা-পেঁয়াজু বিক্রি। প্রতিদিন তার বিক্রি হয় প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার খাবার। সব খরচ বাদ দিয়ে মাস শেষে তার আয় হয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা।
হাবিবুর রহমান (বজলু) ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের পস্তাইল গ্রামের আব্দুল মালেক বড় ছেলে। পরিবারের অভাব-অনটনের কারণে তিনি মাত্র ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পেরেছিলেন।
২০০৮ সালে জীবিকার সন্ধানে ঢাকায় গিয়ে ১৪ বছর গার্মেন্টসে চাকরি করেন। এরপর ২ বছর রিকশা চালান। সবশেষে নিজ গ্রামে ফিরে শুরু করেন সিঙ্গারা-পেঁয়াজু বিক্রির ব্যবসা, যা তার জীবনে অভাবনীয় পরিবর্তন এনে দিয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত তার দোকানে ক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকে। কেউ রিকশায় বসে খাচ্ছেন, কেউ দাঁড়িয়ে, আবার কেউ প্যাকেটে করে নিয়ে যাচ্ছেন পরিবারের জন্য।
স্থানীয়রা জানান, বজলুর খাবারে কোনো ভেজাল নেই। প্রতিদিনের খাবার প্রতিদিনই তৈরি হয় এবং বিক্রি শেষ হয়ে যায়। তার সিঙ্গারা-পেঁয়াজু শুধু সুস্বাদুই নয়, স্বাস্থ্যসম্মতও।
গৌরীপুর থেকে আসা এক ক্রেতা মামুন বলেন, ‘আমি কাজ শেষে মাঝে মাঝে এখানে সিঙ্গারা খেতে আসি। বজলুর মতো এতো সুন্দর করে সিঙ্গারা আর কেউ বানাতে পারে না।’
ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আবুল খায়ের বলেন, ‘বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এখানে মাত্র ৫ টাকায় সুস্বাদু সিঙ্গারা-পেঁয়াজু পাওয়া যায়—এটা সত্যিই দারুণ।’
বজলু জানান, ‘আগে রিকশা চালিয়ে যা পেতাম, তা দিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর ছিল। এখন সিঙ্গারা-পেঁয়াজু বিক্রি করে ভালোই লাভ হচ্ছে। এই আয় দিয়ে ভাই-বোনদের পড়াশোনা করিয়েছি। আল্লাহর রহমতে এই ব্যবসা আমাকে সফলতা এনে দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার সফলতা দেখে অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন কিছু করার জন্য। এটা আমার জন্য অনেক আনন্দের।’
আপনার মতামত লিখুন :